বলতে কি, জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ-এর বিশ্বকাপ মিশন শুরুই হচ্ছে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে বুধবারের ফ্রেন্ডলি দিয়ে৷ চ্যাম্পিয়নস লিগের খেতাবধারী বায়ার্ন এবং ফাইনালিস্ট ডর্টমুন্ড থেকেই জাতীয় একাদশের অধিকাংশ প্লেয়ার নিচ্ছেন ল্যোভ৷ সব মিলিয়ে তাঁর যে টিম, তাতে জার্মানি যে আগামী বছর ব্রাজিলের বিশ্বকাপে সোনা জেতার আশা করতে পারে, সেটা বিশেষজ্ঞরাও বলছেন৷
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpaডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpaকাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpaতখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpaম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpaঅদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানি পরের মাসেই তার কোয়ালিফিকেশন চূড়ান্ত করে নিতে পারে৷ কাইজার্সলাউটার্ন-এ বুধবারের খেলাটিকে ল্যোভ আগামী বিশ্বকাপের ছোটখাটো টেস্ট হিসেবেই গণ্য করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ ল্যোভ গত সোমবারেই জার্মান ‘কিকার' ম্যাগাজিনকে বলেছেন: ‘‘আমাদের অভিজ্ঞ প্লেয়ার, তরুণ প্লেয়ার আর প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন উঠতি প্রতিভাদের ভালো সংমিশ্রণ আছে৷ গত দুই বছরে টিমের ‘গভীরতা' বেড়েছে, এছাড়া (মারিও) গ্যোৎসে এবং (ইলকাই) গ্যুন্ডোগান-এর মতো প্লেয়াররা দলের কোয়ালিটি বাড়িয়েছে৷''
সব মিলিয়ে ল্যোভ যেটা বলার চেষ্টা করছেন, সেটা সম্ভবত এই যে, তাঁর স্কোয়াড মোটামুটি তৈরি৷ অন্যদিকে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, বাকি প্লেয়ারদের এখনও স্কোয়াডে ঢোকার সুযোগ আছে৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষক রোমান ভাইডেনফেলার তাদের একজন ও ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর মিডফিল্ডার মাক্স ক্রুজে আরেকজন৷ সপ্তাহান্তে জার্মান জাতীয় একাদশের ম্যানেজার অলিভার বিয়ারহফ লেভারকুজেনের স্ট্রাইকার স্টেফান কিসলিং-এর নাম তুলেছেন: কিসলিং গত মরসুমে বুন্ডেসলিগার টপ স্কোরার ছিলেন, যদিও ল্যোভ আপাতত তাকে বিশেষ সুনজরে দেখছেন না৷
দুনিয়া জুড়ে ফ্রেন্ডলি
অবশ্য বুধবার শুধু জার্মানির ফ্রেন্ডলি নয়৷ বলতে কি, এ দিন গোটা পঞ্চাশেক ফ্রেন্ডলি খেলা হচ্ছে, কেননা এটাই নাকি চলতি মরসুমের প্রথম আন্তর্জাতিক খেলার তারিখ৷ এ দিন ব্রাজিল যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডে; ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডের ফ্রেন্ডলি (!) ওয়েম্বলে'তে; সুইডেন আর নরওয়ের খেলা প্রায় পাড়ার দাঙ্গা, তবে সত্যিই ফ্রেন্ডলি; বেলজিয়াম আর ফ্রান্সের খেলা ব্রাসেলসে; সবার চোখ কিন্তু থাকবে ইটালি আর আর্জেন্টিনার খেলার দিকে৷ দুটোই ওয়ার্ল্ড ক্লাস টিম, তায় সুদীর্ঘ ১২ বছর পরে তারা আবার মুখোমুখি হচ্ছে৷
আর ফ্রেন্ডলি বলতেই যে পাড়ার ম্যাচ, এমন তো নয়৷ আর্জেন্টিনাকে সাগর পার হয়ে রোমে আসতে হচ্ছে৷ ওদিকে উরুগুয়ে-কে আধা দুনিয়া পার হয়ে জাপানে যেতে হবে৷ স্পেনও যাচ্ছে অতলান্তিক পার হয়ে ভ্যাপসা গরমের জায়গা গুয়াইয়াকিল-এ, ইকুয়োডোর-এর সঙ্গে খেলতে৷ তাতে জার্মানির কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা ছিল না, যদি না স্পেন বায়ার্নের দুটো প্লেয়ারকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতো: টিয়াগো আলকান্তারা ও হাভি মার্তিনেস৷ ওদিকে বায়ার্নের সিইও কার্ল-হাইনৎস রুমেনিগে তো ইতিপূর্বেই এই ফ্রেন্ডলিগুলোকে ‘‘ননসেন্স ম্যাচ'' আখ্যা দিয়ে বসে আছেন৷
এসি / এসবি (ডিপিএ, রয়টার্স)