গুলিচালনা শুরু হবার পরও চার মিনিট স্কুলভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন স্কট পিটারসন৷ গুলি চলে ছয় মিনিট ধরে, প্রাণ হারায় ১৭ জন৷ সাসপেন্ড হবার পর পদত্যাগ করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে দেখা গেছে, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯ বছর বয়সি আততায়ী নিকোলাস ক্রুজ যখন মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করে, স্কুল রিসোর্স অফিসার স্কট পিটারসন তখন গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ ক্রুজ প্রায় ছয় মিনিট ধরে গুলি চালায়৷ পিটারসন কিন্তু তার প্রথম চার মিনিট যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন৷
স্বভাবতই দায়িত্বে অবহেলার পরিপ্রেক্ষিতে পিটারসনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ সাসপেন্ড হওয়ার পর পিটারসন পদত্যাগ করেছেন বটে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ৬ তথ্য
ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার পর ফের মার্কিন মুলুকে বন্দুক ব্যবহারের প্রচলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কীভাবে বন্দুক কেনা যায় সে দেশে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
বন্দুকের শিকার
অ্যামেরিকায় সাধারণ নাগরিকের বন্দুক ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে৷ রাজনীতিতেও এর ঢেউ লেগেছে বহু সময়৷ তথ্য বলছে, প্রতিবছর বন্দুকের লড়াইয়ে অ্যামেরিকায় মৃত্যু হয় ৩৩ হাজার মানুষের৷ এর সঙ্গে অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে লড়াই, আত্মহত্যা, হত্যার চেষ্টার ঘটনা ধরলে সংখ্যাটি হবে ৩ গুণেরও বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Sladky
১৮ বছর হলেই বন্দুক
মার্কিন আইন অনুযায়ী বয়স ১৮ বছর হলেই সে দেশের যে কোনো নাগরিক বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ শটগান বা রাইফেলও কিনতে পারেন৷ সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ কার্তুজ৷ তবে হ্যান্ড গান, লিভলভার কিনতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ২১ বছর বয়স পর্যন্ত৷
সকলকে অবশ্য বন্দুক কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না৷ অতীতে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দাগী অপরাধী কিংবা রাষ্ট্র যাদেরকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করে, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না৷ যদিও অভিযোগ, অস্ত্রের খোলা বাজার থাকায় অনেকেই বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Krzaczynski
চাইলেই কি বিক্রি করা যায় বন্দুক
অস্ত্রের দোকান বা বন্দুকের দোকান খোলার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হয়৷ ২১ বছর না হলে এ ধরনের দোকান খোলার অনুমতি মেলে না৷ সকলকে বন্দুকের দোকান তৈরির ছাড়পত্রও দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রেও দেখা হয় আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড৷
ছবি: DW/I. Pohl
আবেদনকারীর অতীত পরীক্ষা
যাঁরা দোকান খুলতে চান, কিংবা যাঁরা বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন, সকলেরই অতীত সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করে কারা সেই তদন্ত করবে৷ সাধারণত এফবিআই এই কাজটি করে থাকে৷ তবে অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনও একটি তদন্ত চালায় আলাদা ভাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Barrera
খোলা রাস্তায় বন্দুক
বন্দুক কেনা গেলেও খোলা রাস্তায় বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে৷ কোনো কোনো রাজ্যে বন্দুক খাপে ভরে ঘোরা যায়৷ অধিকাংশ জায়গায় হ্যান্ড গান সঙ্গে রাখলে তার লাইসেন্সও সঙ্গে রাখতে হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যেই শট গান সঙ্গে নিয়ে যত্রতত্র ঘোরা যায়৷ তার জন্য কোনো বিধিনিষেধ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
6 ছবি1 | 6
বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণে যে, ফ্লোরিডার হাই স্কুলে হত্যাকাণ্ডের পর দেশ জুড়ে বিতর্ক চলেছে, ভবিষ্যতে এ ধরণের হত্যকাণ্ড কিভাবে রোখা যায় এ নিয়ে চলছে আলোচনা৷ একদিকে আরো কড়া আগ্নেয়াস্ত্র আইনের দাবি উঠেছে – বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকদের তরফ থেকে৷ অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিছু রিপাবলিকান বিধায়ক ছাড়া ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ) প্রস্তাব দিয়েছে যে, শিক্ষক ও স্কুলকর্মীদের বন্দুক দেওয়া হোক৷
ব্রাওয়ার্ড কাউন্টি শেরিফ স্কট ইসরায়েল বলেছেন যে, স্কুল রিসোর্স অফিসার স্কট পিটারসন গুলিচালনা শুরু হওয়ার ৯০ সেকেন্ড পরে স্কুলগেটের কাছে অবস্থান নেন এবং স্কুলভবনের ভিতরে না ঢুকে চার মিনিটের বেশি সময় ধরে গেটের কাছেই থাকেন৷ অপরদিকে গুলিচালনা চলে ছয় মিনিট ধরে৷ পিটারসনের কী করা উচিত ছিল, এক রিপোর্টার এই প্রশ্ন করলে ইসরায়েল বলেন, ‘‘ভিতরে ঢুকে খুনির মোকাবিলা করা, খুনিকে খুন করা৷’’
পিটারসন কিভাবে স্কুলভবনের বাইরে অপেক্ষা করছেন, তার সিকিউরিটি ভিডিও রেকর্ডিং দেখে তিনি ‘মর্মাহত’ হয়েছেন বলেও জানান ইসরায়েল৷ তিনি বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, পরিবারবর্গ তাদের সন্তানকে হারিয়েছে৷ আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছি, সেখানে তারা বসে বসে কাঁপছে৷’’
ইসরায়েল বলেন যে, তিনি হত্যাকাণ্ডের সিকিউরিটি ভিডিও রেকর্ডিংগুলি এখনই প্রকাশ করবেন না, তবে নিকোলাস ক্রুজের বিচার কিভাবে হয়, তার উপর নির্ভর করে তিনি ভবিষ্যতে ভিডিও রেকর্ডিংগুলি প্রকাশ করতে পারেন৷ ক্রুজের বিরুদ্ধে ১৭টি পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
এসি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
গত জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানির স্কুলে যত গোলাগুলি
জার্মানির স্কুলগুলোতে বেশ ক’বার বন্দুকধারীরা আক্রমণ করেছে৷ সর্বপ্রথম আঘাতটি এসেছিল ১৮৭১ সালে৷ এগুলোর মধ্যে বড় কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kulturhaus Walle
সারব্রুকেন, ১৮৭১
১৮২০ থেকে ১৮৯১ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানির সারব্র্যুকেনের এই চার্চটিতে একটি স্কুল ছিল৷ একবার ইউলিয়স বেকার নামের মানসিক বিকারগ্রস্ত এক ছাত্র বাজে গ্রেড পায় এবং এর ফলে স্কুল থেকে তাঁর বাবার কাছে একটি নোট যায়৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৮৭১ সালের ২৫ মে সে দুই ছাত্রকে গুলি করে৷ ছেলে দু’টি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল৷ বেকারকে কোর্ট কোনো সাজা দেয়নি৷ তবে তাঁর জীবন শেষ হয় একটি সংশোধন কেন্দ্রে৷
ছবি: Imago/W. Otto
ব্রেমেন, ১৯১৩
৩০ বছর বয়সি এক চাকুরিহীন শিক্ষক একবার এক স্কুলে গিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে৷ তাতে সাত থেকে আট বছর বয়সি পাঁচটি মেয়ে শিশু মারা যায়৷ এই শেষকৃত্যটি সেই শিশুদের৷ ১৯১৩ সালের এই ঘটনায় আরো কয়েকজন শিশু ও কর্মচারী আহত হন৷ হাইনৎস শ্মিড্ট নামের সেই শিক্ষকের জীবনও শেষ হয় আশ্রমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kulturhaus Walle
কোলন, ১৯৬৪
১৯৬৪ সালের ১১ জুন৷ কোলনের ফল্কহোফেন ডিস্ট্রিক্টে ৪২ বছরের যুবক ওয়াল্টার এস একটি ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতবোমা নিক্ষেপ করে৷ এতে আটজন শিশু এবং দু’জন শিক্ষিকা মারাত্মকভাবে আহত হন৷ আরো বিশজন শিশু এবং দুই শিক্ষকের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়৷ এস পরে বিষপানে আত্মহত্যা করে৷ তবে মারা যাবার আগে তিনি দাবি করেন যে কেউ তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, তাই তিনি এ কাজ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/H. Sanden Jr.
এপস্টাইন, ১৯৮৩
এই আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করেছিলেন ৩৪ বছরের চেক শরণার্থী কারেল সি৷ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির এপস্টাইনে ফ্রাইহের-ফম-স্টাইন স্কুলে তিনি ১১-১২ বছরের তিনজন শিক্ষার্থী এবং একজন পুলিশ অফিসারকে মেরে ফেলেন৷ আরো ১৪ জন আহত হন৷ এরপর নিজেও আত্মহত্যা করেন৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, তিনি মদ্যপ ছিলেন৷ কিন্তু কী কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন তা জানা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schmitt
অ্যারফুর্ট, ২০০২
জার্মানির ট্যুরিঙ্গিয়া রাজ্যের অ্যারফুর্টের ম্যাসাকারটি ঘটেছিল ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল৷ গুটেনবার্গ গিমনাসিয়ুমে ১৯ বছর বয়সি রবার্ট এস নামের এক স্কুল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্র ১৩ কর্মচারী, দুই শিক্ষার্থী এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে মেরে ফেলেন৷ এক শিক্ষক তাকে কোনোরকমে শান্ত করতে সমর্থ হন এবং একটি ঘরে বন্ধ করে রাখেন৷ পরে ঐ ঘরে আত্মহত্যা করেন রবার্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
এমস্টেটেন, ২০০৬
এমস্টেটেনের গেশোয়েস্তার-শল স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্র সেবাস্টিয়ান বি৷ ১৮ বছর বয়সি এই তরুণ ২০০৬ সালের ২০ নভেম্বর হঠাৎ করেই বেশ কয়েকটি বন্দুক ও স্মোক বোমা নিয়ে স্কুলে আক্রমণ করেন৷ এতে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি চার শিক্ষার্থী ও এক পরিচারক মারাত্মক আহত হন৷ এছাড়া আরো স্মোক বোমায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হন এক শিক্ষক ও ১৬ জন পুলিশ সদস্য৷ পরে পুলিশ জানায় যে, তিনি প্রায়ই একটি হিংস্র ভিডিও গেম খেলতেন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
ভিনেন্দেন, ২০০৯
২০০৯ সালের ১১ মার্চ টিম কে নামের ভিনেন্দেন শহরের আলবার্টভিলে-রেয়ালশুলের এক সাবেক ছাত্র স্কুলে এসে মাতালের মতো গুলি ছুঁড়তে থাকেন৷ পিস্তলটি তিনি তার বাড়ি থেকে এনেছিলেন৷ তিনি ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি নয় শিক্ষার্থী, যাদের আটজনই মেয়ে, এবং তিনজন নারী শিক্ষককে হত্যা করেন৷ পরে স্কুলের বাইরে গিয়েও তিনি এমন আচরণ শুরু করেন এবং আরো তিনজনকে হত্যা করেন৷ তারপর আত্মহত্যা করেন৷ কিন্তু তার এহেন মাতলামোর কারণ জানা যায়নি৷