কিউবা লণ্ডভণ্ড করে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে হারিকেন ইরমা৷ হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন৷ ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়া থেকে ৬০ লাখের বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম বড় উদ্বাসন এটি৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য ফ্লোরিডার উপকূলে স্থানীয় সময় শনিবার আঘাত হানে ইরমা৷ সেদেশের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ইরমা ‘ক্যাটাগরি-৪' মাত্রার শক্তিসম্পন্ন এবং ঘণ্টায় এটির গতিবেগ ২১০ কিলোমিটার৷ ফ্লোরিডায় আঘাত হানার আগে অল্পসময়ের জন্য হারিকেন ইরমা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও, এখন আবার শক্তিসঞ্চয় করেছে৷
উপকূল থেকে মূলভূখণ্ডে আঘাত হানার সময় ইরমা যথেষ্ট শক্তিশালী থাকবে বলেই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর৷ এটি বর্তমানে যেভাবে আগাচ্ছে তাতে তা সরাসরি সেন্ট পিটার্সবুর্গে আঘাত হানতে বলে মনে করা হচ্ছে৷ যদিও এর আগে ধারণা করা হয়েছিল যে, ইরমার সরাসরি গন্তব্য হতে পারে মিয়ামি, যেখানে ৫৫ লাখের মতো মানুষ বসবাস করেন৷
আকাশে আগুন: বজ্র এবং বিদ্যুৎ চমকানো
গ্রীষ্ম, সূর্য - বজ্রপাত: মাত্রাতিরিক্ত গরমের পর প্রায়ই ঝড় ওঠে, যেমনটা জার্মানিতে দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ বা ভারতে অবশ্য এই প্রবণতা বহু আগে থেকে৷ চলুন বজ্রপাত আর বিদ্যুৎ চমকানোর কয়েকটি বিশেষ দিক জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আকাশে ‘শর্ট সার্কিট’
রাতের আকাশে এমন দৃশ্য বিরল নয়৷ বিদ্যুৎ চমকানোর ব্যাপারটি অনেকটা ‘শর্ট সার্কিটের’ মতো ব্যাপার৷ আর একেকটি বিদ্যুৎ চমক ৫০০ মিলিয়ন ভোল্ট পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে৷ জার্মানিতে প্রতি বছর গড়ে বিশ লাখের বেশি বার বিদ্যুৎ চমকায়৷ এতে অবশ্য ভয়ের কিছু নেই৷ কেননা অধিকাংশই মাটি স্পর্শ করে না৷ বরং মেঘ থেকে মেঘে স্থানান্তর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়
ছবিতে থাকা এই মানুষটি বজ্রপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না৷ কেননা তাঁর ধাতব স্যুট বিদ্যুৎ চমক প্রতিরোধে সক্ষম৷ এই স্যুটের নীতি হচ্ছে ‘ফ্যারাডে কেজ’৷ ধাতু বিদ্যুৎ চমক থেকে সৃষ্ট বিদ্যুতের প্রবাহ প্রতিরোধ করতে পারে৷ তাই বিমান কিংবা গাড়িও ‘লাইটনিং বোল্ট’ বা বিদ্যুৎ চমকের আঘাত থেকে নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাটিতে ফিরিয়ে নেয়া
সাধারণত উঁচু জায়গায় বজ্রপাত ঘটে৷ যেকারণে প্রায় সব বড় গির্জা বা বহুতল ভবনে ‘লাইটনিং রড’ রয়েছে, যা আর্থিং হিসেবেও পরিচিত৷ এই ব্যবস্থার ফলে বজ্রপাতের কারণে ভবনের ক্ষতি হয় না৷ বরং বিদ্যুৎ সরাসরি ভূমিতে চলে যায়৷ ১৭৫২ সালে বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন ‘লাইটনিং রড’ আবিষ্কার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক আচরণ
২০১৩ সালে বজ্রপাতের কারণে জার্মান বিমা সংস্থাগুলোর ২৮০ মিলিয়ন ইউরোর মতো গুনতে হয়েছে৷ তবে সরাসরি ঘরবাড়ির উপর বজ্রপাতের কারণে এটা হয়নি৷ আসলে অনেক সময় বাড়ির কাছাকাছি বজ্রপাত হলে বাড়তি বিদ্যুৎ সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে ঘরের মধ্যে চলে যায়৷ ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়৷ তাই পরামর্শ হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকালে টিভি, ফ্রিজের মতো পণ্যের প্লাগ খুলে রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বল লাইটনিং’ এর অস্তিত্ব আছে
এটা প্রকৃত ‘বল লাইটনিং’ নয়৷ তবে বাস্তবেও এটা সম্ভব! যদিও এমন বিদ্যুৎ চমকানোর ছবি প্রকৃতি থেকে এখনো তোলা যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আকর্ষণ এবং আতঙ্কের মাঝামাঝি
গ্রীষ্মের আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো দেখে অনেকে রোমাঞ্চ অনুভব করেন৷ তবে কেউ যদি বিদ্যুৎ চমকানোর কথা শুনেই ঘামতে শুরু করেন তাহলে তাকে বলে ‘এস্ট্রাফোবিয়া৷’ বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ চমকানো নিয়ে যাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে তারা এস্ট্রাফোবিয়ায় আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিল্পীদের প্রেরণা
‘লর্ডস অফ লাইটনিং’ এর মতো শিল্পীরা বজ্রপাতের সৌন্দর্যকে এভাবেই স্টেজে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ বিভিন্ন চিত্রকর্মেও বিদ্যুৎ চমকানোর দৃশ্য একেছেন শিল্পীরা৷ নিরাপদ দূরত্বে বসে প্রকৃতির এই খেয়াল উপভোগ্য নয় বৈকি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
হারিকেন ইরমা আঘাত হানার আগে ফ্লোরিডার ৫৬ লাখের মতো মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ জর্জিয়া থেকে সরিয়ে নেয়া মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি৷ তাঁদের জন্য অন্যত্র শিবির খুলেছে কর্তৃপক্ষ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরমাকে ‘‘সাংঘাতিক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন'' ঝড় আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি এই ঝড়ের গতিপথে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সবাইকে নির্দেশনা মানার অনুরোধ করছি৷ ইরমার পথ থেকে সরে যান৷ সম্পদ প্রতিস্থাপনযোগ্য, জীবন নয়৷ সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা৷''
প্রসঙ্গত, ইরমা হচ্ছে এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত সবচেয়ে বড় অ্যাটলান্টিক হারিকেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লোরিডার উপকূল বরাবর এটি বয়ে যাবে৷ এ সময় ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ থেকে ১২ ফুট অবধি উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে৷
এদিকে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপদেষ্টা সংস্থা কোরলজিক জানিয়েছে, ইরমার আঘাতে ফ্লোরিডার প্রায় ৮৫ লক্ষ ঘরবাড়ি বা বাণিজ্যিক স্থাপনা নানামাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ আবহাওয়াবিদ ডেনিস ফেল্টগ্যান এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই ঝড়ের পথ থেকে সরে না গেলে এটি আপনাকে হত্যা করবে৷ প্রত্যেকে এটি অনুভব করবে৷''
উল্লেখ্য, ক্যারেবীয় অঞ্চলে হ্যারিকেন ইরমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ সেখানে বাতাসের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বাতাসের গতিবেগ মাপার যন্ত্রও ভেঙে যায়।