ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার চান অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের পন্ডুলিপি বাংলা একাডেমি আগে দেখে দিক। শুধু তাই নয়, যাচাইয়ের জন্য আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বই পড়েও দেখতে চান।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ে পুলিশের প্রস্তাব ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেছবি: DW
বিজ্ঞাপন
পুলিশের এই কথায় লেখক ও প্রকাশকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই প্রচেষ্টাকে লেখকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তৎপরতা বলে মনে করছেন। আর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারকী ওই প্রস্তাবকে "হাস্যকর” বলে অভিহিত করেছেন। বাংলা একাডেমি বলেছে, তাদের মধ্যে পাণ্ডুলিপি দেখার কোনো চিন্তাই নাই।
শুক্রবার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে বলে, "এর আগে বইমেলায় কনটেন্ট নিয়ে সমস্যা হয়েছে। বাংলা একাডেমি যেন স্ক্যানিং করে। তারপর ভেটিং স্টলে উপস্থাপন করেন। তারা আগে পাণ্ডুলিপিও পড়ে দেখতে পারেন। এটা বইমেলা ছাড়া সারা বছরের জন্যও হতে পারে। আশাকরি ২০২৬ সালের বইমেলায় এটা হবে।”
তার সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সাজেস্ট করছি আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশতি হবে তার পাণ্ডুলিপি আগেই যেন বাংলা একাডেমিতে জমা দেয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে পড়ে দখেবে যে এমন কোনো বষিয়বস্তু না হয়, যেটা আমাদরে সোশ্যাল লাইফকে ডিজরাপ্ট করে আমাদের কমিউনাল হারমোমোনিকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ করে-এ রকম কোনো ধরনের প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে।”
আমরা সবাই সংবিধান মেনে চললেই হবে: মাজহারুল ইসলাম
This browser does not support the audio element.
লেখক প্রকাশকদের প্রতিক্রিয়া
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক পুলিশের ওই কথার জবাবে বলেন, "আমি এটাকে কনটেক্সট না বুঝে কান্ডজ্ঞানহীন একটা উক্তি মনে করি। আমার মনে হয় উনি ছাড়া অতীতে এই কথা আর কেউ বলেনি। আগে একটা রুল ছিলো নাটক মঞ্চস্থ করার আগে পুলিশকে দেখিয়ে নিতে হবে। ওটা ছিলো ব্রিটিশ আমলের। নাট্যকর্মীরা আন্দোলন করে সেটা বাতিল করিয়েছেন।”
"এই ধরনের কথা লেখকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় এই লোকগুলোর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই। তারা মাইক্রোফোন দেখলেই কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন,” বলেন তিনি।
লেখক রাখাল রাহা মনে করেন, "না বুঝেই হুট করে পুলিশ কর্মকর্তা একটি কথা বলে দিয়েছেন। সঠিক জ্ঞান না থাকলে এটা হতে পারে। আর যদি তিনি লেখক বা প্রকাশনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে বলে থাকেন, তাহলে তাহলে এটা অনধিকার চর্চা। লেখকের স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
আরেকজন লেখক এবং গবেষক আজহার ফরহাদ বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ কর্মকর্তা এধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি বা নেননি। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা যা বলেছেন তা ন্যাক্কারজনক। এতবড় একটা পটপরিবর্তনের পর তারা এধরনের কথা বলেন কীভাবে!”
"এই ধরনের কথা লেখকের স্বাধীনতা, প্রকাশকের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি স্বরূপ,” বলেন তিনি।
প্রকাশনা সংস্থা অন্য প্রকাশ এর কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, "প্রথমত, এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী। দ্বিতীয়, পৃথিবীর কোথাও এভাবে বই প্রকাশ হয় কিনা আমার জানা নাই। আর তৃতীয়ত, এটা বাস্তবসম্মত নয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমার মনে হয় পুলিশ কর্মকতারা এটা যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী এবং বাস্তবসম্মত নয়, সেটা না বুঝেই বলে ফেলেছেন। তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না।”
এই লোকগুলোর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই: আনিসুল হক
This browser does not support the audio element.
এদিকে বাংলা একাডেমির বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে, "রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে একাডেমি।”
এই নীতিমালা নিয়েও সমালোচনা আছে। লেখক আনিসুল হক বলেন, "আসলে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে- এগুলোর ধারণা স্পষ্ট নয়। ফলে এর অপব্যবহার হতে পারে। এই ধারণাগুলো একেকজনের কাছে একেক রকম। আর ধারণা পরিবর্তনও হয়। তবে আমি মনে করি প্রকাশকের দিক থেকে তাদের ভালো সম্পাদনা পর্ষদ থাকা দরকার। সেটা লেখকের লেখা পরিবর্তনের জন্য নয়। ভালো বই উপহার দেয়ার জন্য।”
তিনি বলেন, "এক সময় বিলেতে টেবিলের পায়া ঢেকে না রাখাও অশ্লীলতা বলে গণ্য হতে। জীবনান্দ দাসের ক্যাম্পে কবিতা, বুদ্ধদেব বসুর ডাকঘরে বৃষ্টি নিয়ে অশ্লীলতা বিতর্ক হয়েছে। বাংলা একাডেমি একটা প্রতিষ্ঠান তার নীতিমালা থাকতে পারে। কিন্তু লেখক হিসাবে আমার স্বাধীনতা অনি:শেষ।”
প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, "বাংলা একাডেমির ওই নীতিমালা আসলে প্রয়োগ করা হয় না। তবে এধরনের কোনো নীতিমালা থাকার দরকার আছে বলে মনে হয়না। আমরা সবাই সংবিধান মেনে চললেই হবে।”
রোষের মুখে শিল্পী-সাহিত্যিকদের স্বাধীনতা
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কি অসীম? সীমা থাকলে তা কতদূর? এ নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে রয়েছে নানা মত। শিল্পী ও লেখকদের নিয়মিতই সমাজ, গোষ্ঠী এমনকি রাষ্ট্রের রোষের শিকার হতে হয়েছে যুগ যুগ ধরেই। এমন কয়েকজনের কথা থাকছে এই ছবিঘরে।
ছবি: Privat
সালমান রুশদি
ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই মার্কিন-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক তার ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসের জন্য ব্যাপক হুমকির শিকার হন। ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি একটি ফতোয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আহ্বান জানান। বছরের পর বছর ধরে রুশদি পুলিশের সুরক্ষায় আত্মগোপনে ছিলেন। ২০২২ সালে, তার ওপর ছুরি হমলা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ডান চোখ নষ্ট হয় এবং লিভার ও হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ছবি: Penguin Random House
নাগিব মাহফুজ
১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী মিশরীয় এই লেখক তার ‘চিলড্রেন অব গাবেলাওই’ উপন্যাসের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। বইটিকে ‘ধর্মবিরোধী’ আখ্যা দেয় দেশটির কট্টরপন্থিরা। এরপর তার নিরাপত্তা জোরদার করে মিশর পুলিশ। কিন্তু তারপরও ১৯৯৪ সালে কায়রোতে বাসার সামনে ছুরিকাঘাতের শিকার হন নাগিব। প্রাণে বেঁচে গেলেও ২০০৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে ভুগতে হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/Bildarchiv
শার্লি এবদো
২০১২ সালে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের পর হুমকি দেয়া হয় ফরাসি ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোকে। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দুই বন্দুকধারী শার্লি এবদোর অফিসে হামলা চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে। ২০২০ সালে শার্লি এবদো জানায়, তারা আবার মুহাম্মদকে নিয়ে করা কার্টুন প্রকাশ করবে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়।
ছবি: Andreas Arnold/dpa/picture alliance
আই উয়েইউয়েই
এই চীনা শিল্পী, তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং অ্যাক্টিভিস্ট তার নানা কাজের কারণে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বিষয়ে চীনা সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করায় তার বাবা কবি আই চিং -এর মতো উয়েইউয়েইকেও নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে। বর্তমানে পর্তুগালে বসবাসরত এই চীনা শিল্পী আর্ট ইনস্টলেশন 'সানফ্লাওয়ার সিডস'-এর মতো নানা কাজের মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।
ছবি: Courtesy of Ai Weiwei/Human Rights Watch & JRP Editions
থেও ফান গখ
ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা থেও ফান গখ ২০০৪ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'সাবমিশন'-এ শরিয়া আইনে নারীদের প্রতি আচরণের সমালোচনা করার পর হত্যার হুমকি পান। চলচ্চিত্রটির স্ক্রিপ্ট লেখক সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত ডাচ লেখক আয়ান হিরসি আলিও হুমকি পান। চলচ্চিত্র মুক্তির কয়েক মাস পর মোহাম্মদ বুয়েরি নামে এক ব্যক্তি থেওকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। আয়ান হিরসি আলী এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: AP
তসলিমা নাসরিন
নারী অধিকার এবং ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করে নানা লেখালেখির কারণে বাংলাদেশি এই লেখিকাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে তিনি সুইডেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রের পর বর্তমানে ভারতে বাস করছেন। 'লজ্জা' উপন্যাসে তসলিমা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। এর ফলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং একাধিক ইসলামিক গোষ্ঠী তার ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভও করে।
ছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images
মকবুল ফিদা হোসেন
ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই শিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা বোম্বে প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্টস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। ২০০৬ সালে হিন্দু দেব-দেবী এবং 'ভারত মাতার' নগ্ন ছবি আঁকায় কট্টরপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীর আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। হত্যার হুমকির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় ধর্ম অবমাননার শত শত মামলা। ২০০৬ সালের পর থেকে তিনি কাতারে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যান এবং ২০১০ সালে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
ছবি: AP
জাফর পানাহি
ইরান সরকারের সমালোচনামূলক কাজের জন্য একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়েছে ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহিকে। ২০১০ সালে তার চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর ২০ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় ইরানের বিপ্লবী আদালত। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি গোপনে চলচ্চিত্র নির্মাণ চালিয়ে যান। ‘দিস ইজ নট আ ফিল্ম’ একটি কেকের ভেতরে লুকানো ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ইরান থেকে পাচার করা হয়েছিল।
ছবি: JP Production
লেডি গাগা
মার্কিন গায়িকা লেডি গাগা তার 'জুডাস' গানের জন্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থিদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে উস্কানিমূলকভাবে ফুটিয়ে তোলার অভিযোগে তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। গানটিতে গাগা নিজেকে মেরি ম্যাগডালিনের চরিত্রে চিত্রিত করেছেন এবং যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা জুডাসের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ দেখিয়েছেন।
ছবি: Vianney Le Caer/Invision/AP
অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছে। এরপর বিভিন্ন স্থানে শিল্পীদের বাধার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইলে একটি দোকান উদ্বোধনে চিত্রনায়িকা পরীমনির যাওয়ার কথা থাকলেও হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু স্থানীয় সংগঠনের বিরোধিতার মুখে তা স্থগিত করা হয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অভিনেত্রী মেহজাবিন এবং অপু বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও।
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বললেন 'ভুল বোঝাবুঝি'
একদিন পর শনিবার ঢাকায় জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের ওই কথার প্রতিক্রিয়ায় সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, "গণমাধ্যমে একটা সংবাদ ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে। পুলিশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি বা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নেই।''
তিনি আরো বলেন,"সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সেটা যদি আমাকে গালাগালি করেও হয়, এতে কিছু যায় আসে না। আর বই প্রকাশ সেন্সর করবো, এটা হাস্যকর। এই ভুল বোঝাবুঝি এখানেই দূর করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের বই সেন্সরের পরিকল্পনা নেই। ওই পুলিশ কর্মকর্তা যদি বলে থাকেন, সেটা তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনার কথা বলেছেন। এটার সঙ্গে আমরা একমত নই।''
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডিএমপি এই ইস্যুতে একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারি ব্রিফিংয়ে উপস্থিত এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা কোন উষ্কানিমূলক বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ করা হয়। ইতিপূর্বে বইমেলা আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভায় উপস্থিত বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনায় অনেকে বিষয়টি উপস্থাপন করেন। প্রকাশিতব্য বইসমূহ আগামীতে পুলিশ কর্তৃক ভেটিং বা অনুমোদন সংক্রান্ত কোন পরার্মশ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বা বলা হয়নি।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, "বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, লেখনীর মত সৃজনশীল কর্মকান্ডকে আমরা সবসময় উৎসাহিত করি। মুক্ত মনের চর্চা ও বিকাশের পরিবেশকে আমরা স্বাগত জানাই।”
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বইয়ের পাণ্ডুলিপি আগে দেখে দেয়া বা পুলিশ কর্মকর্তারা যা বলেছেন তা নিয়ে বাংলা একাডেমির কোনো পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত নেই। কোনো কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা কোনো নির্দেশও পাইনি।”
তিনি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতা বইমেলায় এই প্রথমবার থিম দেশ জার্মানি
কলকাতা বইমেলা শুরু হয়েছিল ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। গত ৪৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম জার্মানি থিম দেশ হলো
ছবি: Subrata Goswami/DW
বইমেলার উদ্বোধন
সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ বইমেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধন মঞ্চে মমতার পাশে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির প্রতিনিধিরাও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জার্মানির অভিনব প্যাভিলিয়ন
এবার জার্মানির প্যাভেলিয়নটিকে সাজানো হয়েছে একটি বইয়ের তাক হিসাবে। বিশালাকায় প্যাভেলিয়নটি দেখতে বইয়ের তাকের মতো। তাকে তাকে সাজানো আছে জার্মান লেখকদের বই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরিবেশবান্ধব ভাবনা
স্টলের নির্মাতা তথা শিক্ষক অনুপমা কুন্ডু জানান, প্যাভেলিয়ন তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে পরিবেশের উপরেও। সাধারণত প্লাইউড দিয়ে স্টল সাজিয়ে মেলা শেষে সেটা ভেঙে ফেলা হয় । কিন্তু এই তাক মেলা শেষে খুলে নেওয়া যাবে। যদি কেউ চান তাহলে তিনি এই তাক বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। এর ফলে ভারত ও জার্মানির মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানুষের আগ্রহ
প্রথম দিনেই জার্মানির প্যাভেলিয়নে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল। উৎসাহীরা জার্মানি থেকে আগত প্রতিনিধিদের ছবি ক্যামেরা বন্দি করছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও
বইমেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার জার্মান কনসুলেটের প্রতিনিধিরাও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
'আমরা সম্মানিত'
ভারতে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অকারমান জানান, এই ব্যবস্থাপনা তাদের খুব ভালো লেগেছে। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইলেমায় এই প্রথম জার্মানিকে থিম কান্ট্রি হিসেবে বিবেচনা করার জন্য তারা সম্মানিত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডয়চে ভেলের স্টল
প্যাভেলিয়নে রয়েছে জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের স্টল। ডয়চে ভেলের জার্মানি এবং ভারতের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকছেন তাদের স্টলে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গ্যোটে ইন্সটিটিউটের স্টল
গ্যোটে ইন্সটিটিউটেরও স্টল রয়েছে প্যাভেলিয়নে। জার্মান ভাষা শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারের দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের উপর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রথমদিনেই ভিড়
উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরেই বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথমদিন ভিড়ে উপচে না পড়লেও মেলাপ্রাঙ্গনে বইপ্রেমীদের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না ৷