1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকদের বই

ফাতেমা আবেদীন
৩১ জানুয়ারি ২০১৯

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিরে বই প্রকাশের ধুম পড়ে যায় বাংলাদেশে৷ এই সময় বই প্রকাশ রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়৷ এই উৎসবে আর সব শ্রেণি, পেশার লেখকদের পাশাপাশি পেশাদার সাংবাদিকদের বইও প্রকাশিত হয়৷

ছবি: DW/M. Mamun

মূলত অক্টোবর মাস থেকে লেখক, প্রকাশক ও ছাপাখান ব্যস্ত হয়ে যায়  বই প্রকাশ করতে৷ বছরজুড়ে লেখকরা যা লেখেন, বই মেলায় তাই পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখালেখিকে পুরোদস্তুর পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে অনেকে নিজ নিজ পেশায় থেকে লেখালেখিকে ‘শখ' বলেই ধরে নিয়েছেন৷

সাংবাদিকদের মধ্যেও এই চর্চাটিই অব্যাহত রয়েছে৷ তবে সার্বক্ষণিক সংবাদ লেখার মধ্যে থাকার ফলে এই পেশা থেকে লেখক পাওয়া যায় বেশি৷

এ বছরও লেখক সাংবাদিকদের নানা বিষয়ের বই বের হচ্ছে৷ আলাদা করে মৌলিক কবিতা, গল্প লিখলেও নিজের বছরজুড়ে লেখা প্রতিবেদনকে সংকলন করে বই প্রকাশ করেন অনেকে৷ এতে এক মলাটে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতিবেদন একসঙ্গে পাওয়া যায়৷

যিনি যে বিশেষ বিভাগ নিয়ে কাজ করেন, তাঁর জন্য সে বিভাগের  প্রতিবেদন নিয়ে বই প্রকাশের সুযোগ থাকে৷ যেমন ক্রীড়া প্রতিবেদকরা মূলত ক্রীড়া নিয়েই লেখেন, তাঁদেরর মধ্যে উৎপল শুভ্র, মোস্তফা মামুন, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, পবিত্র কুণ্ডু উল্লেখযোগ্য৷  মোস্তফা মামুন অবশ্য থ্রিলার, উপন্যাসও লিখেছেন৷

সাংবাদিকতা আমার লেখালেখিকে তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করে

This browser does not support the audio element.

প্রতিবেদনের পাশাপাশি অনেকেই কলাম সংকলন প্রকাশ করে থাকেন৷ বিভিন্ন ইস‌্যুতে লেখা কলাম বা মতামত সংকলিত করে বই মেলায় প্রকাশ করেন অনেক সাংবাদিক৷

তবে মৌলিক লেখার ক্ষেত্রেও একেবারেই পিছিয়ে নেই সাংবাদিকরা৷ উপন্যাস, গল্প, কবিতা প্রকাশের তালিকায় সাংবাদিকরা বেশ এগিয়েই আছেন৷ এই তালিকায় আনিসুল হক, মশিউল আলম, শাহনাজ মুন্নী, মুস্তাফিজ শফি,  জুয়েল মাজহার, শিবব্রত বর্মন, মাহবুব আজিজ, ফারুক ওয়াসিফ,  সুমন্ত আসলাম, নওশাদ জামিল, আলতাফ শাহনেওয়াজ, সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম, ইন্দ্রজিত সরকার, শেরিফ আল সায়ার, আশিক মুস্তাফা উল্লেখযোগ্য৷

তাঁদের সবাই যে শুধু মৌলিক গল্প, কবিতা বা প্রতিবেদন লিখছেন তা নয়৷ গবেষণাধর্মী বইও প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা৷ সাংবাদিক আশিক মুস্তফা, যিনি ‘শিশুতোষ লেখক' হিসেবে একাধিকবার স্বীকৃতি পেয়েছেন, নানা সম্মাননা অর্জন করেছেন, এবার তিনি লিখছেন একটি গবেষণাধর্মী বই৷ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এই গবেষণাটি তিনি পাঠ করেন৷ সেটিকেই  মেলায় বই হিসেবে প্রকাশ করেছে  কগনিশন পাবলিকেশন্স৷ ‘ইমানিজনেশন অ্যান্ড রিয়্যালিটি ইন বেঙ্গলি চিল্ড্রেন'স লিটারেচার' শীর্ষক বইটিতে  বাংলা শিশুসাহিত্যের ২০০২ বছরের যাত্রা এবং তাতে ছড়িয়ে থাকা স্বপ্ন ও তার বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে৷

ভবিষ্যতের জন্য এসব সংকলন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ

This browser does not support the audio element.

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদ্ক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই লেখালেখি করছেন৷ এর মধ্যে নাম বলতে পারার মতো যাঁরা লিখছেন, তাঁদের মধ্যে আনিসুল হক, মশিউল আলম, শাহনাজ মুন্নী,  জুয়েল মাজহার, শিবব্রত বর্মন (অনুবাদ নিয়ে ভীষণ ভালো কাজ করছেন), মাহবুব আজিজ, ফারুক ওয়াসিফ,  সুমন্ত আসলাম, নওশাদ জামিল, আলতাফ শাহনেওয়াজ,  জুনিয়রদের মধ্যে ইন্দ্রজিত সরকার, শেরিফ আল সায়ার উল্লেখযোগ্য৷ সম্পাদকদের মধ্যে ইমদাদুল হক মিলন আছেন৷ এঁরা প্রত্যেকেই  লেখালেখির জগতে ভালো করছেন৷ আমি নিজেও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছি৷ লেখালেখি ও সাংবাদিকতা সংঘাত তৈরি করে কিনা এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হই প্রায়শই৷ আমি সব সময় বলি যে, সাংবাদিকতা আমার লেখালেখিকে তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করে৷ লেখক হবার জন্য সাংবাদিকতা একটি ভালো পেশা৷''

 ‘‘শুধু আমাদের সময় নয়, আমাদের অগ্রজ যাঁরা, (সেই সময়ের) লেখকদের অনেকেই সাংবাদিক ছিলেন৷ শামসুর রাহমান দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন৷ রনেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেনের মতো দেশসেরা প্রাবন্ধিকরাও সাংবাদিক ছিলেন৷ হাসান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকতা করেছেন৷''

মুস্তাফিজ শফি প্রখ্যাত লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘তিনি তাঁর অনেক সাক্ষাৎকারে লোকাল বাসে ভ্রমণের কথা বলেছেন৷ কারণ, বাসে গণমানুষের কাছে যাওয়া যায়৷ সাংবাদিকরা সমাজের উপর-তলা থেকে নীচের তলা পর্যন্ত যেতে পারেন৷ এটি নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ লেখক তৈরি করে৷''

গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক ও বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বললেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে প্রতিবেদক থেকে শুরু করে সম্পাদক পর্যন্ত বই প্রকাশের ঐতিহ্য রয়েছে৷ এর মধ্যে প্রভাষ আমিন, তুষার আবদুল্লাহ, নুরুজ্জামান লাবুর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, যাঁরা নিজেদের প্রতিবেদন বা কলামের সংকলন প্রকাশ করেন প্রতিবছর৷  আমার নিজেরও এ ধরনের সংকলন রয়েছে৷''

সাংবাদিক পরিচয় ঝেড়ে লেখক হয়ে উঠতে সময় লাগে

This browser does not support the audio element.

এ ধরনের বইগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার এবার যে বইটি বের হচ্ছে সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার৷ বয়সজনিত কারণে তাঁরা বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবেন না৷ এটি সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট৷'' উদাহরণ হিসেবে হোলি আর্টিজানের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নুরুজ্জামান লাবুর লেখা বইয়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ উদিসা মনে করেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বই৷

প্রকাশক রবিন আহসান অবশ্য ভিন্ন সুরে বললেন, তিনি বললেন, ‘‘যেহেতু দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ানো হয়, তাই সাংবাদিকদের সে বিষয়ক বইয়ের চাহিদা বেশ ভালো৷ তবে সাংবাদিকদের গল্প, উপন্যাসের চাহিদা খুবই কম৷  সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত একজনের কাছে পাঠক ঐ বিষয়েই বই চায়৷ সাংবাদিক  পরিচয় ঝেড়ে লেখক হয়ে উঠতে সময় লাগে৷''

 

ফাতেমা আবেদীন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ