অমর একুশে গ্রন্থমেলা অন্য শহরগুলোতেও ছড়িয়ে দিতে চান প্রকাশকরা৷ তাঁরা মনে করেন, বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বইয়ের মান বাড়ানো জরুরি৷ বাংলা একাডেমি মনে করে, আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মেলা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
এবারের বইমেলায় অংশ নিচ্ছে সাড়ে চারশ' প্রকাশনা সংস্থা আর স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা সাড়ে সাতশ'৷ মেলার পরিসর বেড়ে হয়েছে সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুট৷ শুধু বইয়ের মেলা নয়, আরো আছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনাসভাসহ নানা আয়োজন৷ প্রতিদিন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আর লেখক-পাঠকের আড্ডা তো আছেই৷ বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জুড়ে এই মেলার বিস্তৃতি৷
মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এবার মেলার আয়তন বেড়েছে, অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে এবং স্টলও বেড়েছে৷ এবার নতুন ১২টি প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে৷ মোট প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে ২৩টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমির দু'টি৷''
এর আগে মেলা শুরুর দিন থেকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শুরু হলেও এবার হবে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে৷ তিন দিনের এ সম্মেলন চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ জালাল আহমেদ আরো জানান, ‘‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেশের বাইরে থেকে অনেক লোক আসেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা৷''
মেলার বাইরে বইয়ের মেলা
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে বইয়ের আধুনিক কিছু দোকান৷ শুধু বই কেনাই নয়, লেখক-পাঠকদের জন্য নানান আয়োজনও আছে নতুন এ সব বইঘরে৷ ঢাকার এ রকম কয়েকটি বইয়ের জগত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
পাঠক সমাবেশ সেন্টার
ঢাকার শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় বৃহৎ বইয়ের দোকান ‘পাঠক সমাবেশ সেন্টার’৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বই প্রেমীদের নতুন ঠিকানা
পাঠক সমাবেশ সেন্টার কেবল বইয়ের বিক্রয় কেন্দ্রই নয়, এখানকার বইয়ের জগতে অন্তত একবেলা সময় সাচ্ছন্দে সময় কাটাতে পারেন বইপ্রেমীরা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
শুধু বই কেনা-বেচাই নয়, বইকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান, প্রকাশনা উৎসব, পাঠচক্র, সাহিত্য আড্ডা দেয়ারও চমৎকার জায়গা শাহবাগের এই পাঠক সমাবেশ সেন্টার৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুর
রাজধানীর কাটাবন মোড়ে আরেক বইয়ের জগত ‘দীপনপুর’৷ ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন৷ গত বছর তাঁর ৪৫তম জন্মদিনে যাত্রা শুরু হয় এই বইঘরটির৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনের স্মৃতি
দীপনের মৃত্যুর পর তাঁর সহধর্মিনী ডা. রাজিয়া রহমান জলি স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে চালু করেন এই বইয়ের দোকান৷ জাগৃতির হাল ধরার পাশাপাশি দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে ধরে রাখতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী এই বুকশপ ক্যাফে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
শিশুদের জন্য ‘দীপান্তর’
দীপনপুরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে ‘দীপান্তর’৷ শিশুরা এখানে পড়তে পারবে বই, আঁকতে পারবে ছবিও৷ পাশাপাশি আছে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুরের যত আয়োজন
দীপনপুরে বই পড়তে পড়তে চুমুক দেয়া যাবে চা কিংবা কফির পেয়ালায়৷ প্রয়োজনীয় বইটি না থাকলে অর্ডার সাপেক্ষে যথাসময়ে বাড়িতে পৌঁছে যাবে৷ এছাড়া ক্রেতারা অনলাইনেও বই কিনতে পারেন দীপনপুর থেকে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বাতিঘর
ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় চালু হয়েছে বইঘর ‘বাতিঘর’৷ ৫০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ বইয়ের জগতে আছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখার বিষয়াবলীর পাশাপাশি খেলাধুলা, রাজনীতি ও সমকালীন বিজ্ঞান, দর্শন আর লোকসংস্কৃতির উপর রচিত লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা
২০০৫ সালে চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করেছিল বাতিঘর৷ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে তিন হাজার বর্গফুটের বড় পরিসরে পুরনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয় বাতিঘর৷ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আরো বড় পরিসরে চালু হলো বাতিঘরের দ্বিতীয় শাখা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বইয়ের ভাণ্ডার
ঢাকার বাতিঘরে প্রায় শতাধিক বিষয়ের ১০ হাজার লেখক ও এক হাজার দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার লক্ষাধিক বইয়ের বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানান কর্নার
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাতিঘরে আছে বিষয় ভিত্তিক কর্নার৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভ্রমণ ও প্রবন্ধ কর্নার’, ‘কবিতা কর্নার’, ‘দর্শন কর্নার’,‘শীর্ষেন্দু-সুনীল-সমরেশ কর্নার’, ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল কর্নার’ ‘ছোটগল্প কর্নার’, ‘ইতিহাস কর্নার’ ‘রহস্যগল্প কর্নার’ ইত্যাদি৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বেঙ্গল বই
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দেশি-বিদেশি বই বিকিকিনির সাথে পড়ুয়াদের এক নতুন আড্ডাস্থল ‘বেঙ্গল বই’৷ গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে এখানে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বিশাল আয়োজন
বেঙ্গল বইয়ের তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা জুড়ে আছে দেশি-বিদেশি বই৷ নিচতলায় সব শ্রেণির পাঠকের জন্য আছে পুরনো বই ও ম্যাগাজিন৷ দোতলার বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করার ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
বেঙ্গল বই-এ নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকে৷ অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীরা হুইলচেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবেন৷ প্রবীণদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
আকাশকুসুম
বেঙ্গল বই ভবনের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের জন্য৷ ‘আকাশকুসুম’ নামে সেই রাজ্যে শিশুবান্ধব পরিবেশে বইপড়া ছাড়াও গল্পবলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুরা হারিয়ে যেতে পারবে অন্য জগতে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
15 ছবি1 | 15
এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের শতাধিক সাহিত্যিক যোগ দেবেন৷ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, যুক্তরাজ্য, জাপান ও আফগানিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশের সাহিত্যিকরা এই সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন৷ মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘‘বইমেলা আসলে একটি বড় ধরনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন৷ বইয়ের সঙ্গে আছে আরো অনেক কিছু৷ শিশুদের জন্য নানা প্রতিযোগিতা৷ আর মেলা শুরুর প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী বাংলা একডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন৷''
বাড়ছে বই, বাড়ছে বিক্রি
গতবছর (২০১৭) বইমেলায় মোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে৷ মেলায় মোট নতুন বই এসেছিল ৩ হাজার ৬৪৬টি৷ ২০১৬ সালে বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৪৪৪টি৷ মোট বিক্রি হয়েছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই৷ ২০১৫ ও ২০১৪ সালের বইমেলায় মোট বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ২১ কোটি ৯৫ লাখ ও ১৬ কোটি টাকার বই৷ দেখা যায়, প্রতিবছরই বই মেলার পরিসর যেমন বাড়ে, প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে৷ একই সঙ্গে বাড়ছে বই বিক্রি৷
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছর প্রায় চার হাজার নতুন বই প্রকাশ হয়েছে বইমেলায়৷ এবার আশা করছি আরো বাড়বে এবং তা সাড়ে চার হাজার হতে পারে৷ বইমেলাকে কেন্দ্র করেই মূলত বাংলাদেশে সৃজনশীল বই প্রকাশ হয়৷ এবং তার সংখ্যা ৯০ ভাগেরও বেশি৷ বইমেলার এক মাসে বই প্রকাশ হয় চার হাজার আর সারা বছরে হয় পাঁচশ'৷ তাই সহজেই বোঝা যায়, বইমেলা নতুন বই প্রকাশের জন্য কতটা গরুত্বপূর্ণ৷'' তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বইয়ের সংখ্যা বাড়াই যথেষ্ট নয়, এর মান বাড়াও জরুরি৷ এ জন্য প্রকাশকদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করতে সরকারকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে৷ বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইয়ের ৩০ ভাগ নবীন লেখকদের৷ সরকার উদ্যোগ নিলে প্রতিভাবান তরুণ লেখকদের বই আরো বাড়বে৷''
‘বইমেলা আসলে একটি বড় ধরনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন’
যেভাবে এলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা
কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালে ১৯৮৩ সালে একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা'-র আয়োজনের উদ্যোগ নেন৷ কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দু'জন ছাত্র নিহত হন এবং তারপর সেই বছর আর বইমেলা হয়নি৷ ১৯৮৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়৷
২০১৪ সাল থেকে এই বইমেলা বর্ধমান হাউজ থেকে সম্প্রসারিত হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিস্তৃত হয়৷ এখন প্রকাশকদের স্টলগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই স্থান দেয়া হয়েছে৷ আর বর্ধমান হাউজ এলাকায় লিটল ম্যাগ, মিডিয়া এবং বাংলা একাডেমিসহ অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়৷
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ‘বইমেলার ইতিহাস ও নতুন আঙ্গিকে বইমেলা' শিরোনামে এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘১৯৮৪ সালের আগেও এই বইমেলার কিছু ধারাবাহিকতা আছে৷ ১৯৬৫ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তখনকার পরিচালক কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীন তখনকার পাবলিক লাইব্রেরিতে (এখন ঢাকা বিশ্বদ্যালয় লাইব্রেরি) শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেছিলেন, যাকে ঢাকার প্রথম বইমেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এরপর ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে প্রথম একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলারও আয়োজন করা হয়েছিল৷''
‘মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করতে সরকারকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে’
শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, ‘‘ওই বছর বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন৷ তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাঁদের বই নিয়ে বসে যান৷ ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন৷ সে উপলক্ষ্যে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান৷''
ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে...
সাধারণভাবে বইমেলা হয় প্রকাশকদের৷ কিন্তু বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি৷ মেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘‘এই বইমেলা আমাদের ভাষা শহিদ, আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের ঐতিহ্যের অংশ৷ বইমেলার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে তুলে ধরি৷ এই মেলার মাধ্যমে নতুন সাহিত্যিক এবং পাঠক সৃষ্টি হয়৷''
ওসমান গনি বলেন, ‘‘আমাদের বইমেলাকে ভিন্নভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেয়ার সুযোগ আছে৷ একটি প্রকল্প করে যদি প্রতিবছর কমপক্ষে ৪০টি বইও ইংরেজিতে অনুবাদ করা যায়, তাহলে আমাদের ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা প্রকাশকরা চাই বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক৷ এই সময়ে দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরেও অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হোক৷''
এবারও বইমেলায় নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মেলায় প্রবেশের শৃঙ্খলার বিষয়টিও৷ জালাল আহমেদ বলেন, ‘‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের বইমেলা৷ আমরা চাইনা, বইমেলায় প্রাণের কোনো ঘটতি থাকুক৷''
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতা বইমেলা৷ ব্যস্ত কলেজ স্ট্রিট পাড়াও৷ কলকাতার বইয়ের আঁতুড়ঘর৷ ছোটবড় প্রায় সমস্ত প্রকাশনার দফতরই এখানে৷ যে পাড়ার রাস্তাঘাটেও ছড়িয়ে থাকে বই৷ বই নিয়ে আড্ডা হয় কফি হাউসে৷ হেঁটে দেখা যাক সেই পাড়া৷
ছবি: Twisha
বইপাড়া
কলেজ স্ট্রিটকে বলা যেতে পারে শিক্ষাসংস্কৃতির সূতিকাগার৷ বাংলা ভাষায় বই প্রকাশের প্রধানতম কেন্দ্র এটিই৷ বই কেনাবেচারও৷ প্রতিদিন নতুন নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে, প্রকাশনার খুঁটিনাটির পরিকল্পনা হচ্ছে এখানে বসেই৷ অল্প দূরেই ছাপাখানা, কাগজের পসরা, সবই কলেজ স্ট্রিটকে ঘিরে৷ স্কুলকলেজের পাঠ্যবইয়ের কেজো দুনিয়াদারি যেমন এখানে, পাশাপাশি রচিত হচ্ছে সাহিত্যের উজ্জ্বল মণিমুক্তোও৷
ছবি: Twisha
হারানো বই
হঠাৎ কোনো হারিয়ে-যাওয়া ফুরিয়ে-যাওয়া বইয়ের খোঁজ মিলে যাবে এখানে৷ কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে বা প্রেসিডেন্সির রেলিঙে৷ গুপ্তধন পাওয়ার উল্লাসের সঙ্গে মিশে যাবে স্মৃতির বিলাস বা বেদনা৷
ছবি: Twisha
এবং দে’জ
চল্লিশের দশকে দে বুক স্টল নামে ছোট বইয়ের দোকান হিসেবে পথ চলা শুরু৷ ১৯৭০ সালে শুরু হয় তাদের প্রকাশনাসংস্থা দে’জ পাবলিশার্স৷ প্রায় পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে এখন তাদের প্রকাশনা দপ্তর ও বইয়ের দোকান বিশাল আকার নিয়েছে৷ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত হিসেব করা কঠিন৷ এখন তারা পশ্চিমবঙ্গের অগ্রনী প্রকাশক৷
ছবি: Twisha
চক্রবর্তী, চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোম্পানি
১০৮ বছর আগে প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের তিন ছাত্র ‘চক্রবর্তী, চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ কলেজ স্ট্রিটের ওপরে দু’টি তলা নিয়ে দোকানটি অবস্থিত৷ নীচের তলায় পাঠ্যপুস্তক ও ওপরের তলায় বাকি নানা ধরনের বই৷ বর্তমান মালিকেরা ১৯৭১-এ অধিকাংশ শেয়ার কিনে এর মালিকানা পান৷ ১৯৭৩ থেকে তাঁরা নিয়মিত নানা ধরনের বই প্রকাশ করে আসছে৷
ছবি: Twisha
বেঙ্গল পাবলিশার্স
বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মনোজ বসু৷ তাঁর রচিত অনেক বইই প্রকাশিত হয়েছিল এই প্রকাশনী থেকে, তার মধ্যে আছে ‘নিশিকুটুম্ব’৷ এ ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত লেখকের ও নানা ধরনের বই এঁরা প্রকাশ করেছেন, যেমন ‘সুন্দরবন অমনিবাস’, ‘জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ’৷ ইদানীং তাঁদের প্রকাশনায় ভাটার টান, গত দু’বছর ধরে তাঁরা নতুন বই প্রকাশ করছেন না, বইমেলাতেও থাকছেন না৷
ছবি: Twisha
কফিহাউস
বইপাড়ার ঠিক মাঝখানে কফিহাউস৷ তাকে বলা যাবে না নিছক রেস্তোরাঁ, যদিও খাবার পাওয়া যায়৷ মূলত কফিতে চুমুক দিয়েই চলে এখানকার আড্ডা গল্প আর তা থেকে ছলকে ওঠে সাহিত্যশিল্পের দ্যুতি৷ কে না এসেছেন এখানে! শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে কৃত্তিবাসের কান্ডারীরা, নকশাল আন্দোলনের ছোটোবড়ো কর্মীরা, লিটল ম্যাগাজিনের স্বপ্নপাগল ছেলেমেয়েরা৷ এসেছেন, এখনও আসেন। কফিহাউস শিল্পসাহিত্য ভাবাই যায় না!
ছবি: Twisha
বই পাঠানোর ধুম
বই পাঠকের কাছে পৌঁছনোর আগে থাকে লম্বা এক প্রস্তুতিপর্ব, তারই শেষ পর্যায়ে থাকে থাকে বইয়ের প্যাক ছাপা বাঁধাইয়ের পালা শেষ করে রওনা দেয় প্রকাশকের গখরে বা বইয়ের দোকানে৷ টেম্পো ট্রাক ভ্যান বা রিক্সা, কত রকম যে বাহন তার!