1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বই উৎসব: সব পাবে না, সবার পাওয়া নিয়েও সংশয়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ ডিসেম্বর ২০২২

এবার নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সব বই পাচ্ছে না। তাদের হাতে কমপক্ষে একটি-দুইটি করে বই ধরিয়ে দেয়ার সর্বশেষ চেষ্টা চলছে। এই অল্প বই আবার সবাই পাবে কী না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

শিশুদের নতুন বই পাওয়ার আনন্দ (ফাইল ফটো)
শিশুদের নতুন বই পাওয়ার আনন্দ (ফাইল ফটো)ছবি: bdnews24

বই ছাপার কাজে নিয়োজিত  একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে গড়ে চাহিদার ৫০-৫৫ ভাগ বই ছাপা হয়েছে। বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ পর্যন্ত বই ছাপা সম্ভব হবে।  শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হয়তো বইয়ের পুরো সেট দেয়া যাবে। আর শেষ পর্যন্ত ১ জানুয়ারি কিছু স্কুলে হয়তো বই বিতরণ সম্ভব হবে না।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড(এনসিটিবি) বলছে, সব শিক্ষার্থীই ১ জানুয়ারি বই পাবেন। তবে সব বই দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। নতুন বছরের প্রথম দিন সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই উৎসব হবে যথারীতি।

এনসিটিবির  তথ্য বলছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে চার কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার কপি বই ছাপানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকে ৯ কোটি ৯২ লাখ ৮৩ হাজার, মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮, ইবতেদায়ি শ্রেণিতে দুই কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার, দাখিলে চার কোটি এক লাখ ৪৪ হাজার কপি বই ছাপা হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই ছাপা হচ্ছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৭৭ কপি।

‘ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৮০ ভাগ বই ১ জানুয়ারিতেই চলে যাবে’

This browser does not support the audio element.

ছাপা ও কাগজের মান নিয়ে প্রশ্ন:

এবার পাঠ্য পুস্তকের কাগজ এবং ছাপার মান ভালো নয় বলে স্বীকার করেছেন খোদ মুদ্রণকারীরা। শুধু তাই নয় কয়েকটি মুদ্রণ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা নিম্নমানের কাগজে আগেই বই ছেপে গুদামজাত করে রেখেছে। শেষ মুহূর্তে তারা ওই বই সরবরাহ করবে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তখন আর বইয়ের মান দেখার সময় থাকবেনা। এটা প্রাথমিকের বইয়ের ক্ষেত্রে বেশি ঘটেছে বলে জানা গেছে। আর প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সিন্ডিকেট করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান। তিনি আরো বলেন, "তাদের কারণে প্রাথমিকের বই ছাপায় সবচেয়ে বেশি দেরি হচ্ছে। আরো বেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।” মুদ্রণ শিল্প সমিতির বর্তমান সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন," এবার কাগজের জন্য নিম্ন মানের পাল্প ব্যবহার করা হয়েছে। আর রিসাইকেল করা কাগজ বেশি ফলে কাগজ ও ছাপার মান খারাপ।” তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দাবি করেন, "এবার কাগজের উজ্জ্বলতা একটু কম। আর সব ঠিক আছে। দেশে কাগজের ভার্জিন পাল্পের সংকট থাকায় এটা হয়েছে।”

জানা গেছে বাজারে অব্যবহৃত (ভার্জিন) পাল্পের ঘাটতির কারণে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতার কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রিসাইকেল বা পুরোনো কাগজ প্রক্রিয়াজাত করে বানানো পাল্পেরও ঘাটতি আছে। এই সুযোগে পুরোনো কাগজ সরবরাহকারী এবং কাগজ উৎপাদনকারীদের অনেকে সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের কাগজের ব্যবসা করেছে। আর প্রকাশকেরা সুযোগ নিয়েছে, অধিক মুনাফা করছে।

পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রকাশকেরা যা বলছেন:

মুদ্রণকারীরা বলছেন,  মোটামুটি পাঁচটি কারণে এবার পাঠ্য পুস্তক ছাপতে দেরি হচ্ছে। দেরিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া , কার্যাদেশে বিলম্ব, কাগজ সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া।  শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, "সব কার্যাদেশ  প্রায় একই সঙ্গে দেয়ার কারণে কাগজের সংকট আরো বেড়ে যায়। আগে মাঝখানে সময়ের ব্যবধান রেখে  কার্যাদেশ দেয়া হতো। আর একই সময়ে গাইড বই ছাপা শুরু হওয়ায় কাগজের চাহিদা একসঙ্গে অনেক বেড়ে যায়।”

‘আমরা আশা করছি ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী বই পাবেন’

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, "এখন যা পরিস্থিতি তাতে শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনে এক-দুইটা করে বই পাবে। সেটের সব বই পাবে না। সেটা পেতে পুরো জানুয়ারি মাস লেগে যাবে।”

তোফায়েল খান বলে, "ষষ্ঠ  ও সপ্তম শ্রেণির ৮০ ভাগ বই ১ জানুয়ারিতেই স্কুলগুলোতে চলে যাবে। কিন্তু অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৫০ ভাগের বেশি বই ১ জানুয়ারিতে স্কুলগুলোতে যাবে বলে মনে হয় না। প্রাইমারিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বই নিয়ে সমস্যা হবে না। তবে অন্য শ্রেণির বই নিয়ে সমস্যা হবে।”

তার কথা, "পুরো সেট বই শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি পাবেন না। এখন চেষ্টা চলছে ওই দিন বই উৎসব করতে কমপক্ষে এক-দুইটি বই যেন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া যায়। তবে আমার আশঙ্কা গ্রামের বা প্রত্যন্ত এলাকার কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি বই পাবেন না। কোনো কোনো উপজেলাও বাদ পড়বে। কারণ আর দুই-তিন দিনের মধ্যে সবখানে বই পাঠানো সম্ভব হবে না।”

বোর্ড চেয়ারম্যান যা বললেন:

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম  বলেন, "আমরা আশা করছি ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী বই পাবেন। কেউ বাদ পড়বেন না। হয়তো পুরো সেট আমরা দিতে পারব না। দুই-একটি বই কম  হতে পারে। তবে তারা জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই পেয়ে যাবেন। আমরা এরইমধ্যে ৮০ ভাগ বই পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।”

তিনি বলেন, "আমরা প্রাথমিকের বই নিয়ে একটু সমস্যায় ছিলাম। তবে কয়েক দিনে বিশেষ নজর দেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির বই নিয়েও সমস্যা ছিলো। আরো দুই-একদিন আছে, সমস্যা কাটিয়ে উঠব।”

তার কথা,"সব শিক্ষার্থী তো আর বছরের প্রথম দিন বই নিতে স্কুলে আসে না। তাই যারা আসবে তারা বই পাবে। তবে সেটের সব বই হয়তো দিতে পারব না। ১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসব হবে।”

তারপরও আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন,"কিছু প্রকাশক হয়তো দুষ্টামি করার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে বই ছাপা বাধাগ্রস্ত করছে। তবে সেটা কারা করছে তা ১ জানুয়ারি বোঝা যাবে। তখন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ