পরিবারের দাবি, কিথ ল্যামন্ট স্কটের হাতে তখন বই ছিল৷ পুলিশ বলছে, অস্ত্র ছিল, তাই তাঁকে গুলি করা হয়৷ নিহত হন স্কট৷ তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শার্লট শহরের মানুষ৷ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে নগর প্রশাসন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লট শহরের এক অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের কার পার্কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কিথ ল্যামন্ট স্কট৷ পুলিশ বলছে, তাঁর শরীর তল্লাসি করতে চাইলে স্কট তা না মেনে অস্ত্র বের করেছিলেন৷ অন্যদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, স্কট সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাঁর হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, ছিল বই৷
কিথ ল্যামন্ট স্কট নিহত হওয়ার পর থেকেই শার্লটে চলছে বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে পুলিশের৷
বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের একজন গুলিতে নিহত হয়েছেন৷ তবে পরে জানানো হয়, ওই ব্যক্তিকে আসলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে, অর্থাৎ তাঁর জীবন সংকটাপন্ন৷
বুধবার বিক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নেয়৷ শত শত মানুষ পুলিশকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকে৷ স্লোগানের অনেক বক্তব্যই ছিল পুলিশের প্রতি কটাক্ষপূর্ণ৷ এ সময় অনেক বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ও অন্যান্য দ্রব্য ছুড়তে শুরু করে৷ পুলিশের টহল গাড়ি ও রাস্তার পাশের ভবনের কাচের জানালায় ঢিল ছুড়তে শুরু করে তারা৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তখন কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে৷ বিক্ষোভকারীরা তখন দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যান৷ সেই সময় কিছু লোক দোকানপাট লুট করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷