শুরু হচ্ছে বইমেলা৷ বাংলা একাডেমীর এ আয়োজনে অমর একুশে বইমেলার পরিসর দিন দিন বাড়ছে৷ বাড়ছে বইও৷ বিক্রিও বাড়ছে৷ কিন্তু অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, বইয়ের মান ততটা বাড়ছে না৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: সামনেই বইমেলা৷ আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?
মাজহারুল ইসলাম: আমাদের প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে৷ এখন তো মেলা অনেক বড় পরিসরে হয়৷ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে হচ্ছে গত চার বছর ধরে৷ এবার তো স্টলের আকারও বড় হচ্ছে৷ এ সব কারণে পরিসর বড় হচ্ছে, আর আমাদের প্রস্তুতিও খারাপ না, বেশ ভালো৷
ভালো বই প্রকাশে চ্যালেঞ্জ কী?
ভালো বই প্রকাশের সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ হলো ভালো পাণ্ডুলিপি৷ ভালো পাণ্ডুলিপির একটা সংকট আছে৷ দ্বিতীয় সমস্যা হলো ওই পাণ্ডুলিপিটা সু-সম্পাদিতভাবে প্রকাশ করা৷ আসলে এই বইগুলো সম্পাদনার জন্য যে সম্পাদক প্রয়োজন, সেটা পাওয়া যায় না৷ আবার অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থারই নিজস্ব সম্পাদনা বিভাগ নেই৷ কেন নেই সেটা আবার এক বিরাট আলোচনার বিষয়৷ সে প্রসঙ্গে যাবো না৷ আপাতত ভালো পাণ্ডুলিপি ও সু-সম্পাদিতভাবে প্রকাশ করাই বড় চ্যালেঞ্জ৷
মেলার বাইরে বইয়ের মেলা
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে বইয়ের আধুনিক কিছু দোকান৷ শুধু বই কেনাই নয়, লেখক-পাঠকদের জন্য নানান আয়োজনও আছে নতুন এ সব বইঘরে৷ ঢাকার এ রকম কয়েকটি বইয়ের জগত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
পাঠক সমাবেশ সেন্টার
ঢাকার শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় বৃহৎ বইয়ের দোকান ‘পাঠক সমাবেশ সেন্টার’৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বই প্রেমীদের নতুন ঠিকানা
পাঠক সমাবেশ সেন্টার কেবল বইয়ের বিক্রয় কেন্দ্রই নয়, এখানকার বইয়ের জগতে অন্তত একবেলা সময় সাচ্ছন্দে সময় কাটাতে পারেন বইপ্রেমীরা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
শুধু বই কেনা-বেচাই নয়, বইকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান, প্রকাশনা উৎসব, পাঠচক্র, সাহিত্য আড্ডা দেয়ারও চমৎকার জায়গা শাহবাগের এই পাঠক সমাবেশ সেন্টার৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুর
রাজধানীর কাটাবন মোড়ে আরেক বইয়ের জগত ‘দীপনপুর’৷ ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন৷ গত বছর তাঁর ৪৫তম জন্মদিনে যাত্রা শুরু হয় এই বইঘরটির৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনের স্মৃতি
দীপনের মৃত্যুর পর তাঁর সহধর্মিনী ডা. রাজিয়া রহমান জলি স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে চালু করেন এই বইয়ের দোকান৷ জাগৃতির হাল ধরার পাশাপাশি দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে ধরে রাখতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী এই বুকশপ ক্যাফে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
শিশুদের জন্য ‘দীপান্তর’
দীপনপুরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে ‘দীপান্তর’৷ শিশুরা এখানে পড়তে পারবে বই, আঁকতে পারবে ছবিও৷ পাশাপাশি আছে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা৷
ছবি: Abdullah Al Momin
দীপনপুরের যত আয়োজন
দীপনপুরে বই পড়তে পড়তে চুমুক দেয়া যাবে চা কিংবা কফির পেয়ালায়৷ প্রয়োজনীয় বইটি না থাকলে অর্ডার সাপেক্ষে যথাসময়ে বাড়িতে পৌঁছে যাবে৷ এছাড়া ক্রেতারা অনলাইনেও বই কিনতে পারেন দীপনপুর থেকে৷
ছবি: Abdullah Al Momin
বাতিঘর
ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় চালু হয়েছে বইঘর ‘বাতিঘর’৷ ৫০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ বইয়ের জগতে আছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখার বিষয়াবলীর পাশাপাশি খেলাধুলা, রাজনীতি ও সমকালীন বিজ্ঞান, দর্শন আর লোকসংস্কৃতির উপর রচিত লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা
২০০৫ সালে চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করেছিল বাতিঘর৷ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে তিন হাজার বর্গফুটের বড় পরিসরে পুরনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয় বাতিঘর৷ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আরো বড় পরিসরে চালু হলো বাতিঘরের দ্বিতীয় শাখা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বইয়ের ভাণ্ডার
ঢাকার বাতিঘরে প্রায় শতাধিক বিষয়ের ১০ হাজার লেখক ও এক হাজার দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার লক্ষাধিক বইয়ের বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানান কর্নার
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাতিঘরে আছে বিষয় ভিত্তিক কর্নার৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভ্রমণ ও প্রবন্ধ কর্নার’, ‘কবিতা কর্নার’, ‘দর্শন কর্নার’,‘শীর্ষেন্দু-সুনীল-সমরেশ কর্নার’, ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল কর্নার’ ‘ছোটগল্প কর্নার’, ‘ইতিহাস কর্নার’ ‘রহস্যগল্প কর্নার’ ইত্যাদি৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বেঙ্গল বই
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দেশি-বিদেশি বই বিকিকিনির সাথে পড়ুয়াদের এক নতুন আড্ডাস্থল ‘বেঙ্গল বই’৷ গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে এখানে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
বিশাল আয়োজন
বেঙ্গল বইয়ের তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা জুড়ে আছে দেশি-বিদেশি বই৷ নিচতলায় সব শ্রেণির পাঠকের জন্য আছে পুরনো বই ও ম্যাগাজিন৷ দোতলার বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করার ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
নানা আয়োজন
বেঙ্গল বই-এ নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকে৷ অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীরা হুইলচেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবেন৷ প্রবীণদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
আকাশকুসুম
বেঙ্গল বই ভবনের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের জন্য৷ ‘আকাশকুসুম’ নামে সেই রাজ্যে শিশুবান্ধব পরিবেশে বইপড়া ছাড়াও গল্পবলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুরা হারিয়ে যেতে পারবে অন্য জগতে৷
ছবি: DW/Abdullah Al Momin
15 ছবি1 | 15
বই বিক্রি তো বাড়ছে, বইয়ের মান কি বাড়ছে?
না, বইয়ের মান সেভাবে বাড়ছে না৷ গতবছর বই মেলায় ৪১০০-র মতো বই বের হয়েছে৷ এর মধ্যে ৫ শতাংশও মানসম্পন্ন বই ছিল সেটা বলা যাবে না৷ আবার সেখানেই যেতে হয় – ভালো পাণ্ডুলিপি ও সু-সম্পাদিতভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না৷ অনেক লেখক নিজের ইচ্ছাতে পাণ্ডুলিপিটা ভালো করে পড়ে দিচ্ছেন, সেটাই প্রকাশ হচ্ছে৷ এখনো প্রকাশকদের মধ্যে একটা অংশের পেশাদারিত্ব সেভাবে গড়ে উঠেনি৷ এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়ও জড়িত৷ এই সেক্টরটা এখনো বেশ অবহেলিত৷
বইমেলা কি লাভজনক হয়?
বইমেলা অবশ্যই লাভজনক৷ আমাদের দেশের লেখক-প্রকাশকরা এই বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন৷ সারা বছর কোনো বই প্রকাশ হচ্ছে না, বইমেলা ঘিরেই সব বই প্রকাশ হয়৷ এটা এখন আর বইমেলা নয়, এটা বাঙালির চেতনার একটি মেলা, এটা একটা মিলনমেলা৷ এটা আমাদের সংস্কৃতির একটা উৎসব৷ বিশ্বে কিন্তু কোথাও এক মাস ধরে বইমেলা হয় না৷
কোন ধরনের বই বেশি বিক্রি হয়?
সারা বিশ্বেই যেমন সবচেয়ে বেশি চলে উপন্যাস, এখানেও তাই৷ এর বাইরে গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভ্রমন কাহিনি এগুলো চলে৷
আপনি বলছিলেন, প্রকাশকরা বইমেলার অপেক্ষায় থাকেন? কিন্তু বই তো সারা বছর পড়ার বিষয়?
এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে৷ আমাদের পাঠকরাও এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন৷ তাঁরাও বইমেলার জন্য অপেক্ষা করেন৷ এছাড়া মেলার বাইরে বই প্রকাশ হলে পাঠকদের কাছে পরিচিত করা যায় না৷ মেলাতে একটা বই এলে যেভাবে প্রচার হয়, অন্য সময় সেভাবে প্রচার হয় না৷ আর লেখক বা প্রকাশক যদি নিজের উদ্যোগে প্রচার চালাতে চায়, সেটাও কঠিন৷ কারণ পত্রিকার বিজ্ঞাপনের যে ব্যয় সেটা দেয়াও খুব কঠিন৷ সবকিছু মিলিয়েই এটা মেলাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে৷
‘যেভাবে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা উচিত ছিল, সেভাবে স্মরণ করা হয়নি’
This browser does not support the audio element.
দেশে হুমায়ূন আহমেদ, শামসুর রাহমানের মতো লেখক আসছে না কেন?
দেশে আর হুমায়ূন আহমেদ আসবে না৷ অন্য একজন লেখক আসবেন, তিনি তাঁর মতো করে৷ যেমন আমরা আরেকজন রবীন্দ্রনাথ পাইনি৷ সেটা সম্ভবও না৷ হয়ত ভালো লেখক আসবেন৷ তিনি নিজের মতো করেই জায়গা করে নেবেন৷
আমরা জানি হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ বই আপনি বের করেছন৷ এবার হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোনো নতুন বই আসছে?
হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই আসার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই৷ উনাকে ঘিরে প্রতি বছরই কিছু বই বেরুচ্ছে৷ আগামীতেও বের হবে৷ আমরা উনার সংকলন বের করছি৷ উনি বেঁচে থাকতে এটা শুরু হয়েছিল৷ প্রতিবছরই একটা বা দুই খণ্ড রচনাবলী বের হয়৷ এবারও দুই খণ্ড রচনাবলী বের হচ্ছে৷ আর হুমায়ূনকে ঘিরে তো ৩/৪ শ' বই বের হয়েছে৷ এবারও সেই ধারাবাহিকতায় নিশ্চয়ই কিছু বই বাজারে আসবে৷
বইমেলা ও হুমায়ূন আহমেদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ বইমেলার সময় কীভাবে তাঁকে স্মরণে রাখা যায়?
এই বইমেলাকে পাঠকপ্রিয় করা, মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করার পেছনে হুমায়ূন আহমেদের একটা বড় ভূমিকা তো আছেই৷ দুঃখজনক হলো, হুমায়ূন আহমেদ যে বছর না ফেরার দেশে চলে গেলেন, সেবছরও তাঁকে দায়সারাভাবে স্মরণ করা হয়েছে৷ যেভাবে তাঁকে স্মরণ করা উচিত ছিল, সেভাবে স্মরণ করা হয়নি৷ ২০১২ সালে তিনি চলে যান৷ ওই বছর থেকেই লেখক ও প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটা দাবি তোলা হয়েছিল যে, বাংলা একাডেমীর সামনের রাস্তা (দোয়েল চত্ত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত) তাঁর নামে নামকরণ করা হোক৷ বিশ্বে বহু দেশে নামকরা লেখকদের নামে রাস্তার নাম হয়েছে৷ বাংলাদেশেও হয়েছে৷ অথচ কী কারণে যেন হুমায়ূন আহমেদের নামে এটা হচ্ছে না৷ এটা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরাও সেটা করছেন না৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭
ঢাকার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ পয়লা ফেব্রুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ছবিঘরে উঠে এসেছে মেলার জানা অজানা নানা কথা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘মুক্তধারা’-র স্টল৷ নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গঠনের পরের বছরই চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল একুশে গ্রন্থমেলার৷ দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়সের সমান তাই গ্রন্থমেলার বয়সও৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এ বছর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো৷ প্রতিটি প্রবেশপথেই দর্শণার্থীদের তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রবেশ পথ
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ থাকায় এ বছর মেলার প্রবেশ পথে আগের বছরগুলোর তুলনায় দর্শকদের দীর্ঘ সারি কম ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সব্যসাচী লেখকের অনুপস্থিতি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারুলিপি প্রকাশনের স্টলে কবি সৈয়দ শামসুল হকের ছবি৷ এ বছর থেকে আর কখনো একুশের গ্রন্থমেলায় পাঠকরা দেখতে পাবেন না সব্যসাচী এই লেখককে৷ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
না থেকেও আছেন হুমায়ূন
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে হুমায়ূন আহমেদের ছবি৷ গত পাঁচ বছর ধরে মেলায় তাঁর উপস্থিত না থকালেও পাঠকদের কাছে তিনি আজও সমান সমাদৃত৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাগৃতি প্রকাশনী
ফয়সাল আরেফিন দীপনের জাগৃতি প্রকাশনীতে তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি৷ দীপন চলে যাওয়ার পর প্রকাশনীটির হাল ধরেছেন তিনি৷ এ বছর জাগৃতি প্রকশনী থেকে তিনি প্রকাশ করেছেন ৫২টি নতুন বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিদিন নতুন বই
প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন বই৷ বাংলা একাডেমির তথ্যমতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ২,৭৪৫৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সেলফি তুলছেন মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড়
ছুটির দিনগুলোতে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়৷ সাধারণ দিনগুলোতে মেলার দুয়ার বিকেল ৩টায় খোলা হলেও শুক্র ও শনিবারে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও মেলার দু’টি চত্ত্বরে আরো দশটি প্যাভিলিয়ন ও স্টল থেকে পাঠকরা কিনতে পারবেন বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন বইয়ের স্টল
এবারের মেলায় নতুন বইয়ের একটি স্টল চালু করেছে বাংলা একাডেমি৷ মেলায় প্রকাশ হওয়া প্রতিদিনের নতুন সব বই একই জায়গায় চোখ বোলানোর সুযোগ পাচ্ছেন পাঠকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টল
দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দিরের আদলে তৈরি এ স্টলটি নজর কেড়েছে সবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রন্থমেলার পরিসর
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গ্রন্থমেলার একটি প্যাভিলিয়ন৷ এবারের গ্রন্থমেলায় একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি
এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শিশু প্রহর
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১.৩০ মিনিট শিশু প্রহর৷ মেলার এ সময়টি শুধুই শিশুদের জন্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনপ্রিয় লেখক
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লেখক জাফর ইকবালকে ঘিরে ভক্তরা৷ অটোগ্রাফ নেয়ার পাশাপাশি ভক্তরা লেখকের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগও হাতছাড়া করছেন না৷
বাংলা একাডেমির মঞ্চে মেলার প্রতিদিনই থাকছে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুড কোর্ট
এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ফুড কোর্ট৷ ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ভালো মানের খাবার পাচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
21 ছবি1 | 21
বইমেলা ঘিরে উগ্রবাদীদের এক ধরনের তৎপরতা আমরা কয়েক বছর ধরে দেখছি, এর কারণ কী?
এটার কারণ বিশ্লেষণ তো আসলে কঠিন৷ তবে এটা বলা যায়, উগ্রবাদীরা সারা বিশ্ব জুড়েই তো তাণ্ডব ছড়ানো, উচ্ছৃঙ্খলতা দেখানো, এ সব করছে৷ তবে গত দুই বছর তেমন কিছু ঘটেনি৷ বিশেষ করে পুলিশের তৎপরতায় গত বছর খুব ভালোভাবে বইমেলা শেষ হয়েছে৷ আর উগ্রবাদীদের এই তৎপরতাও কিন্তু কমে আসছে৷ আমি আশা করছি, এবারের মেলাটাও সুন্দর ও সু-শৃঙ্খলভাবে হবে৷
দেশে ভালো বই, ভালো লেখকের সম্ভাবনা কতটুকু?
অনেকেই লিখছে৷ বিশেষ করে তরুণরা ভালো লিখছে৷ আমরা আশা করছি, সামনের দিনে আমরা ভালো কিছু লেখক পাবো৷
বইমেলায় যে বই আসে, তাতে লেখকদের স্বাধীনতা কতটুকু থাকে?
আমাদের দেশে লেখকরা তো পুরো স্বাধীনতাই ভোগ করেন৷ কোনো বই তো আর সেন্সর করে প্রকাশ হয় না৷ ফলে তাঁরা যেটা লিখছেন, সেটাই প্রকাশ হচ্ছে৷
বই প্রকাশনায় সরকারের সহায়তা কেমন?
এই যে দেখেন চার হাজার বই প্রকাশ হচ্ছে৷ এর মধ্যে হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ লেখকের বই সেভাবে প্রচার হচ্ছে না৷ ফলে বইগুলো সেভাবে বিক্রি হয় না৷ প্রকাশকরা তাঁদের গোডাউনে ভর্তি করে রাখেন৷ এগুলো আর আলোর মুখ দেখে না৷ এতে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বইগুলো পাঠকের কাছে যাচ্ছে না৷ দেখেন, আমাদের পাশেই কলকাতায় একটা বড় বই মেলা হয়৷ সেখানে যে বই প্রকাশ হয়, তার বড় একটা অংশ সরকার কিনে নিয়ে স্কুল, কলেজ এবং পাবলিক পাঠাগারগুলোতে পাঠায়৷ সেখানে সাধারণ মানুষ বইগুলো পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন৷ এই সেক্টরে সরকারের একটা প্রণোদনা থাকা উচিত৷ আগে যেটা বলছিলাম, একজন প্রকাশক কেন একজন সম্পাদক রাখতে পারবেন না? কারণ সে নিজেই তো স্বচ্ছল না৷ কারণ, বই বিক্রি করে সারা বছরের খরচের টাকা আসছে না৷ এখন অনেক শিক্ষিত তরুণ এই পেশায় আসছেন এবং ভালো বই তাঁরা বের করছেন৷
গত বছর স্টল ছিল কতটা, আর নতুন বই এসেছিল কত?
গত বছর নতুন বই ছিল ৪ হাজার ১০০৷ আর প্রকাশকদের স্টল ছিল সাড়ে ৩শ'র মতো৷ এর বাইরে মিডিয়া, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্টলও থাকে৷
এবারের বইমেলা ঘিরে আপনার স্বপ্ন কী?
আমরা আশা করছি, এবারের বইমেলা ভালো হবে৷ কারণ এবার দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল৷ আমি আশা করছি, অত্যন্ত সফল একটি মেলা এবার হবে৷
এ সাক্ষাৎকারটি প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷