ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে যখন বাড়ির বউদের ‘কাজের লোক' নয়, পরমাত্মীয়ার সম্মান দিতে বললো, তখনই সৌদি আরবের একটি সরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার করলো ‘বউ পেটানোর' নিয়ম৷ বিষয়টা জানাজানির পর থেকেই ঝড় উঠেছে বিশ্বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Gambarini
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নারীবাদী, মানবদরদী সকলেই এর প্রতিবাদ করেছেন৷ প্রশ্ন তুলেছেন, কোনো দেশের সরকারি টেলিভিশন স্ত্রীয়ের ওপর নির্যাতন চালানোর এমন একটা অনুষ্ঠান প্রচার করলো কী করে?
ভিডিও-টা ‘ক্লিক' করলে ঘটনাটা আরো পরিষ্কার হবে৷ দেখবেন সেখানে বক্তব্য রাখছেন খালেদ আল-সাকাবি নামে দেশটির এক থেরাপিস্ট বা মনস্তত্ত্ববিদ৷ ভিডিও-তে তিনি নানাভাবে ব্যাখা করছেন একজন পুরুষ কোন কোন কারণে তাঁর স্ত্রীকে মারবেন৷ স্ত্রীকে মারধর করা এবং শাসন করা যে স্বামীর অধিকার, তাও বেশ জোর গলা নিয়েই দাবি করেছেন সাকাবি৷ বলেছেন, স্ত্রীকে মারা যেতেই পারে৷ তবে যে সব কারণে ইসলাম স্ত্রীকে মারার অনুমতি দেয়, শুধুমাত্র সেই সব কারণে মারতে হবে৷ সাকাবির কথায়, ‘‘শৃঙ্খলার জন্য স্ত্রীকে মারা যেতে পারে, নিজের রাগ প্রকাশ করার জন্য নয়৷''
সাকাবির যুক্তি, স্বামী যখন স্ত্রীকে মারবেন, তখন এটা বোঝানোর জন্যই মারবেন যে স্বামীর সঙ্গে তিনি যে ব্যবহার করেছেন, তা ঠিক হয়নি৷ অর্থাৎ অনুচিত ব্যবহারের জন্যই মার খাচ্ছেন বউটি৷ তবে এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি এই থেরাপিস্ট৷ পুরুষদের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, ‘‘স্ত্রীকে মারধর শুরুর আগে তাঁকে মনে করিয়ে দিন যে, আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী স্বামীর অধিকার এবং স্ত্রীয়ের কর্তব্য কী কী৷''
শারীরিক নির্যাতন করলে নারী এবং পুরুষ – উভয়ের মর্যাদাই কি ক্ষুণ্ণ হয় না? লিখুন নীচের ঘরে৷
সৌদি নারীদের পাঁচটি ‘নিষিদ্ধ’ কাজ
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়৷ সেখানে নারীদের অধিকার এখনো খুবই সীমিত৷ সৌদি নারীদের এমন কিছু কাজও করতে দেওয়া হয় না, যে’সবের ক্ষেত্রে আইন কোনো বাধা নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
গাড়ি চালানো মানা
নারী গাড়ি চালাতে পারবে না – এমন কোনো আইন নেই সৌদি আরবে৷ তবু সেখানে নারীরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ গোঁড়ামির কারণে সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, নারী গাড়ি চালানো শুরু করলে সমাজের সব বিধিনিষেধ অমান্য করবে৷ অনেক মুসলিম দেশের নারীও যখন বৈমানিক হচ্ছে সৌদি নারীরা তখন গাড়ি চালানোর সুযোগও পাচ্ছে না৷ ২০১১ সালে একটি নারী সংগঠন ‘উইমেন ড্রাইভিং’ নামের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল৷ সফল হতে পারেননি৷
ছবি: Jürgen Fälchle/Fotolia
একা চলাফেরা করা নিষেধ
সৌদি আরবের মেয়েরা একা কোথাও যেতে পারেন না৷ স্বামী, বাবা-মা, ভাই বা পরিবারের অন্য কোনো পুরুষ ঘরে না থাকলে মেয়েদের জন্য তখন পুরুষ দারোয়ান থাকে৷ অতি রক্ষনশীল সৌদি সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, নারীকে একা থাকতে দিলে সে পাপের পথে পা বাড়াবে৷ এ কারণে কেনাকাটার জন্য বাইরে গেলেও সৌদি নারীর সঙ্গে পরিবারের কোনো-না-কোনো পুরুষ সদস্য থাকে৷ ইদানীং অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
আধুনিক পোশাক এবং চড়া প্রসাধন নয়
সৌদি আরবে পর্দাপ্রথা খুব কঠিনভাবে মানা হয়৷ তাই সব নারীই বোরকা পরেন৷ সবার মুখ অবশ্য ঢাকা থাকেনা৷ তবে মুখ দেখা গেলেও নারীদের প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজেকে খুব আকর্ষণীয় করে তোলার সুযোগ খুবই সীমিত৷ আধুনিক পোষাক পরা যায় না, একটু বেশি প্রসাধনী ব্যবহার সৌদি আরবের নারীদের জন্য এখনো স্বপ্নের মতো৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
নারী সব জায়গায় আলাদা
রক্তের সম্পর্কের পুরুষ ছাড়া নারী অন্য পুরুষের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না৷ বেশির ভাগ ভবনে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ রয়েছে৷ দ্য টেলিগ্রাফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবে এখনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, পার্ক, সমুদ্র সৈকতের মতো জায়গাগুলোতেও নারী আর পুরুষের জন্য আলাদা স্থান রাখা আছে৷ অনুমতি ছাড়া নারী-পুরুষ একসঙ্গে চলাফেরা করলে নারীরই বেশি কঠোট শাস্তি হয়৷
ছবি: Fotolia/Minerva Studio
নারী খেলাধুলা করলেও অপবাদ
নারীর খেলাধুলা করার অধিকারও খুব সীমিত৷ আন্তর্জাতিক সব প্রতিযোগিতায় এতদিন সৌদি আরব শুধু পুরষ ক্রীড়াবিদই পাঠাতো৷ লন্ডন অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো নারী প্রতিযোগী পাঠিয়েছিল সৌদি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়৷ ধর্মীয় নেতারা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি৷ অনেক ধর্মীয় নেতার চোখেই অলিম্পিকে অংশ নেয়া নারীরা পতিতার মতো৷