বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণের দায়ে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি হয়েছে৷ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রোববার প্রথম প্রহরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর খবর অনুযায়ী, জেলার মাহবুবুল ইসলাম দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়৷ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় পলাতক আসামির একজন ক্যাপ্টেন মাজেদ।
গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর
আদালতের আদেশে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বৃহস্পতিবার ৭২ বছর বয়সি মাজেদের মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে আদালত। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর থেকে দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় মাজেদ আপিলের সুযোগ হারিয়েছিলেন৷ ধরা পড়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও সে আবেদন খারিজ হয়ে যায়। আবেদন খারিজের পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, যে কোনো দিনক মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে৷
বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কার্যকর হয় ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড৷ পলাতক ছয় খুনির একজন মারা গেছেন৷ বাকি পাঁচজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দেশে৷ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Bdnews24.com
৫ খুনির দণ্ড কার্যকর
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়৷ এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)৷ এছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবোয়েতে মারা গেছেন৷
ছবি: Bdnews24.com
এখনও অধরা ৫ খুনি
বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান৷ গ্রেপ্তার বা প্রত্যার্পণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বারবার অবস্থান বদলে করেছে খুনিরা৷
ছবি: Bdnews24.com
রাজনৈতিক আশ্রয়
রাশেদ চৌধুরী এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ নানাভাবে চেষ্টা সত্ত্বেও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ বারবার কূটনৈতিক কথা চালাচালি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশ্বাসও মিলেছে৷ কিন্তু আলোচনায় কখনই গতি আসেনি৷
ছবি: Bdnews24.com
মৃত্যুদণ্ডই বাধা
নূর চৌধুরী অবস্থান করছেন ক্যানাডায়৷ তিনিও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত৷ এ ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কোনো আসামিকে হস্তান্তর করা ক্যানাডার আইন অনুযায়ী বৈধ নয়৷ সে কারণে আইনি জটিলতাতেই এখনও আটকে আছে নূর হোসেনের ভাগ্য৷
ছবি: Bdnews24.com
ঘাতকেরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের আরেকজন মোসলেম উদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে৷ এর আগে তার ভারত ও জার্মানিতে অবস্থানের তথ্যও ছিল গোয়েন্দাদের কাছে৷ মোসলেমও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ তবে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তবে তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: Bdnews24.com
নিশ্চিত নয় অবস্থান
বাকি তিন খুনি শরিফুল হক ডালিম, আবদুর রশিদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই৷ তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে লিবিয়া, সেনেগালসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করলেও তিনি স্থায়ীভাবেই পাকিস্তানে বসবাস করেন৷ তবে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাওয়া হলেও, মেলেনি সে উত্তর৷