বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার এখনও কোন অগ্রগতি নেই৷ এরমধ্যে তিনজন কোথায় আছেন সে বিষয়েও সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই৷
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জনের এখন পর্যন্ত ফাঁসি হয়েছে৷ বাকি আছেন আরো পাঁচজন৷ তারা হলেন আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী৷ রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী ক্যানাডায় অবস্থান করছেন৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ তাদের ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানালেও দেশ দুটির সরকারের কাছ থেকে কোন সাড়া মিলেনি৷ অন্যদিকে আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিন কোথায় আছেন সেই খোঁজ এখন পর্যন্ত পায়নি সরকার৷
খুনিদের ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুটোর খবর জানি, তিনটার কোনো খবর জানি না৷ যে দুজনেরটা জানি, তাদের ফেরানোর কোনো আপডেট নাই৷’’ তিনি জানান, অ্যামেরিকা সরকারকে নতুন করে কোন তথ্য দেয়নি৷ অন্যদিকে ক্যানাডা এখন পর্যন্ত কোন তথ্যই দেয়নি৷
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন সরকার এই ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যারা সর্বোচ্চ আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের (মধ্যে) যাদের ব্যাপারে এই রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি তারা পলাতক থাকার কারণে, এবং দুজন দুটি দেশে থাকার কারণে, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে এই রায় কার্যকর করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর৷’’
বঙ্গবন্ধু হত্যা ও বিচারের আদ্যোপান্ত
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক এবং অন্ধকারতম অধ্যায়৷ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং বিচার না করার প্রত্যক্ষ চেষ্টাকে ব্যর্থ করে বিচারের বিস্তারিত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24
সেদিনের ঘটনা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য হত্যা করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে৷
ছবি: bdnews24
নিহত পরিবারের সদস্য ও অন্য যারা
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুর শিশু সন্তান শেখ রাসেল, আরো দুই ছেলে শেখ কামাল, শেখ কামাল এবং তাদের স্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল (ব্রিগেডিয়ার পদে মরণোত্তর পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এবং সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও সেদিন হত্যা করা হয়৷
ছবি: AP
শেখ ফজলুল হক মণি ও সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা
একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে৷ এরপর বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা চালিয়ে সেরনিয়াবাত, তার ছেলে, মেয়ে, নাতি, বড় ভাইয়ের ছেলে এবং এক আত্মীয়কে হত্যা করে৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় রক্ষা পান৷
ছবি: bdnews24.com
বিচার রোধের প্রক্রিয়া
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দু মাস ২২ দিনের (১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষায় ‘ইনডেমনিটি অরডিন্যান্স’ জারি করেন৷ ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান একে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন৷
ছবি: imago/Belga
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
প্রথমে জার্মানি এবং তারপর ভারতে দীর্ঘ নির্বাসনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা৷ দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন৷
ছবি: DW/M.Rahman
২১ বছর পর...
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও তাহের উদ্দীন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওই বছরই বঙ্গবন্ধুর পি এ এএফএম মোহিতুল ইসলাম ১৫ আগস্টের ঘটনায় থানায় এফআইআর করেন৷
ইনডেমনিটি আইন বাতিল ও বিচার শুরু
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়৷ ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে ২০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল এবং ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়৷
নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার পর ২০০০ সালে হাইকোর্ট বিভক্ত রায় দেন৷ পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে৷ বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
৩৪ বছর পর রায়
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হলে আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন৷ ১৯ তারিখ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল আবেদন খারিজ করে দেন৷
ছবি: bdnews24
জাতির দায়মুক্তি
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) এবং মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)-এর ফাঁসি কার্যকর হয়৷ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১২ এপ্রিল তারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Bdnews24.com
পলাতক যারা
খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এএম রাশেদ চৌধুরী এবং এসএইচ নূর চৌধুরী এখনও পলাতক৷
ছবি: Bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মৃত্যুদণ্ড দেন৷ আপিলের রায়ে তিনজন খালাস পান৷ বাকি ১২ জনের মধ্যে আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর বের হয়৷
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে৷ সেসময় পলাতক ছিলেন ছয়জন৷
১০ বছর পর ২০২০ সালে ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতকদের একজন ৭২ বছর বয়সি মাজেদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বাকি পাঁচজনের একজন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছেন এমন সংবাদ বের হলেও তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেনছেন, ‘‘তার ব্যাপারে একটা খবর এসেছিল৷ আমরা এটা যাচাই বাছাই করে দেখেছি, এখন পর্যন্ত এর সত্যতা আমরা পাইনি৷’’
বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কার্যকর হয় ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড৷ পলাতক ছয় খুনির একজন মারা গেছেন৷ বাকি পাঁচজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দেশে৷ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Bdnews24.com
৫ খুনির দণ্ড কার্যকর
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়৷ এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)৷ এছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবোয়েতে মারা গেছেন৷
ছবি: Bdnews24.com
এখনও অধরা ৫ খুনি
বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান৷ গ্রেপ্তার বা প্রত্যার্পণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বারবার অবস্থান বদলে করেছে খুনিরা৷
ছবি: Bdnews24.com
রাজনৈতিক আশ্রয়
রাশেদ চৌধুরী এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ নানাভাবে চেষ্টা সত্ত্বেও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ বারবার কূটনৈতিক কথা চালাচালি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশ্বাসও মিলেছে৷ কিন্তু আলোচনায় কখনই গতি আসেনি৷
ছবি: Bdnews24.com
মৃত্যুদণ্ডই বাধা
নূর চৌধুরী অবস্থান করছেন ক্যানাডায়৷ তিনিও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত৷ এ ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কোনো আসামিকে হস্তান্তর করা ক্যানাডার আইন অনুযায়ী বৈধ নয়৷ সে কারণে আইনি জটিলতাতেই এখনও আটকে আছে নূর হোসেনের ভাগ্য৷
ছবি: Bdnews24.com
ঘাতকেরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের আরেকজন মোসলেম উদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে৷ এর আগে তার ভারত ও জার্মানিতে অবস্থানের তথ্যও ছিল গোয়েন্দাদের কাছে৷ মোসলেমও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ তবে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তবে তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: Bdnews24.com
নিশ্চিত নয় অবস্থান
বাকি তিন খুনি শরিফুল হক ডালিম, আবদুর রশিদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই৷ তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে লিবিয়া, সেনেগালসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করলেও তিনি স্থায়ীভাবেই পাকিস্তানে বসবাস করেন৷ তবে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাওয়া হলেও, মেলেনি সে উত্তর৷
ছবি: Bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী
যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত সে দেশের সরকার পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়ার খবর গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল৷ দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের এই উদ্যোগে সেখানে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদ বাতিলের সম্ভাবনা তৈরি হয়৷ তবে এই বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি জানা যায়নি৷
বিডিনিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত বছর চিঠি দিয়েছিলেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ওই পর্যন্তই আছে, তারা কাগজপত্র দেখতেছেন৷ ওদের আমরা বললে বলে, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস স্বাধীন৷ তারা দেখবে বিষয়টা'৷’’
ক্যানাডায় নূর চৌধুরী
ক্যানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছে সরকার৷ তবে
আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির আইনে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ৷ অন্য দেশের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও তাই তারা ফেরত পাঠাতে পারে না৷
বিডিনিউজ জানিয়েছে বুধবার দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ক্যারিনা গোল্ডের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য’ এই খুনিকে ক্যানাডা থেকে ফেরত পাঠানো হবে বলে বাংলাদেশের ‘দৃঢ় প্রত্যাশার' কথা বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
দুই খুনিকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে বলছি, খুনিদের ফেরত দাও৷ যেহেতু তোমরা সুশাসনের কথা বল, আইনের শাসনের কথা বল, আমরা আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই, এ কারণে তোমরা খুনিদের ফেরত দাও৷’’
তিনি দেশ দুটিকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘‘তোমাদের দেশকে আমরা ‘হাব ফর কিলারস' (খুনিদের আশ্রয়স্থল) হিসাবে দেখতে চাই না৷ এটা তোমাদের জন্য লজ্জার৷”
১৯৭২-১৯৭৫: এক জার্মান কূটনীতিকের চোখে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
12:03
রশীদ ও ডালিমের হদিস নেই
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রশীদ ও ডালিম৷ তবে বহুদিন ধরেই তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই জানা যাচ্ছে না৷
পুলিশ সদরদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তাদের 'অবস্থান সনাক্তকৃত নয়'৷ তবে ডালিমের ‘সম্ভাব্য অবস্থান’ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়া আর রশীদের ‘সম্ভাব্য অবস্থান' লিবিয়া কিংবা জিম্বাবোয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বলছে, পলাতক খুনিদের আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তারা৷ তাদের সবার নামেই ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি আছে৷
এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুইজন ছাড়া বাকি তিনজন কোন দেশে অবস্থান করছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই৷’’
দুই খুনিকে ফেরাতে এবং অন্যদের অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো তথ্য নাই৷ এত লোক বাইরে থাকে, কিন্তু দুষ্টলোকের খোঁজ দেয় না৷ আমরা তাদের অ্যাওয়ার্ড দিব বলেছি, তবুও তারা দেয় না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রবাসী ভাইবোনদের বলছি, আপনারা অন্তত একটা কাজ করেন, প্রতি মাসে অন্তত একবার এই খুনিদের বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন আর জনসাধারণকে বলেন যে, এখানে খুনি থাকে৷ যাতে তারা পীড়িত হয়৷’’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা একদল সেনা কর্মকর্তা৷ খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে ক্ষমতা দখলকারী পরবর্তী সরকার৷
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর এই অধ্যাদেশ বাতিলের করে৷ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর খুনের বিচার কাজ৷
এফএস/আরআর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷