1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় ‘‘আমার সোনার বাংলা'':

আব্দুল্লাহ আল-ফারূক২০ সেপ্টেম্বর ২০১১

স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল রবীন্দ্র সংগীত৷ সে বাধা ভেঙেছিলেন যাঁরা সনজীদা খাতুন তাঁদের অন্যতম৷ বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চার আদিপর্ব নিয়ে তাঁর ভাষ্য৷

সনজীদা খাতুন
সনজীদা খাতুনছবি: DW

রবীন্দ্র সংগীতের চর্চা আজকের বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে মফঃস্বল শহরগুলোতে৷ রবীন্দ্রনাথের গান এখন আর রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক নয়৷ অথচ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের ওপর তোলা হয়েছিল নিষেধের বেড়া৷ সেই বেড়া ভাঙতে সক্রিয় ছিলেন রবীন্দ্র অনুরাগীরা৷ সহায়ক হয়েছিল ১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ পালন ৷

বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চার গোড়া থেকেই এর প্রতিটি পর্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন সনজীদা খাতুন - শিল্পী, প্রশিক্ষক, অধ্যাপক এবং সংগঠনকারী হিসেবে৷ স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংগীত চর্চার প্রাথমিক পর্বটা কেমন ছিল? তিনি জানালেন, ‘‘৪৭ সালে পাকিস্তান হবার পরপর আব্দুল আহাদ ( প্রখ্যাত সংগীতকার) ঢাকায় আসেন৷ তিনি তো শান্তিনিকেতনে শিক্ষিত৷ তিনি এসে রেডিওতে কাজ আরম্ভ করেন৷ রেডিওতে উনি রবীন্দ্র সংগীত শেখাতেন৷ অতি সুন্দর করে ভাব বিশ্লেষণ করে শেখাতেন৷ আমরা খুব আনন্দের সাথে গান শিখতাম৷ তাছাড়া আব্দুল আহাদ যখনই রবীন্দ্র জন্মবর্ষে বা মৃত্যুদিনে অনুষ্ঠান করতেন, যারা ঢাকায় রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন তাদের সবাইকে ডেকে খুব সুন্দর করে অনুষ্ঠানগুলো করতেন৷ উনি রেডিওতে যে মান বজায় রেখেছিলেন সেটা ছিল খুবই ভাল৷ কিন্তু ক্রমে ক্রমে একটা সময় এল যখন আমরা দেখতে পেলাম পাকিস্তান সরকার ঠিক চাইছেনা যে রবীন্দ্র সংগীত এখানে প্রচার হোক৷ রেডিওতে শুধু না, বাইরেও গাওয়া হোক এটা তারা চাইছিল না৷ কিন্তু সেটা যে তারা খুব স্পষ্ট করে বলতো এমনও নয়৷ কিন্তু বুঝতে পারতাম যে মানুষের মধ্যেও একটা অন্য চাহিদা এসেছিল৷ বড় জোর গিটারে রবীন্দ্র সংগীত বাজালে লোকে শুনত৷ কিন্তু আমাদের গান গাইবার সুযোগ খুব একটা মিলত না৷''

শিল্পী, প্রশিক্ষক, অধ্যাপক এবং সংগঠনকারী হিসেবে সক্রিয় সনজীদা খাতুনছবি: DW

বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, প্রয়াত কাজি মোতাহার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত উদার স্বভাবের৷ এবং রবীন্দ্রভক্ত৷ ফলে বাবার কাছ থেকে উৎসাহের অভাব ছিলনা কন্যা সনজীদার জন্য৷ রবীন্দ্র সংগীত শিখেছেন, গেয়েছেন৷ পরবর্তীকালে শিখিয়েছেন, গড়ে তুলেছেন ‘ছায়ানট' প্রতিষ্ঠান৷ অল্প বয়স থেকেই অনুষ্ঠানে গান করেছেন সনজীদা৷ পঞ্চাশ দশকের একটি অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করলেন তিনি বিশেষভাবে, ‘‘পঞ্চাশ দশকে একবার - আমার খুব ভাল করে মনে আছে - কার্জন হলে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো৷ আমাকে গান গাইতে বলা হয়েছিল৷ আমি খুব বিস্মিত হয়ে গেলাম গান গাইতে৷ কী গান গাইবো? এমন সময় দেখা গেল সেখানে বঙ্গবন্ধু৷ তখন তো তাঁকে কেউ বঙ্গবন্ধু বলে না - শেখ মুজিবুর রহমান৷ তিনি লোক দিয়ে আমাকে বলে পাঠালেন আমি যেন ‘সোনার বাংলা' গানটা গাই - ‘আমার সোনার বাংলা'৷ আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম৷ এত লম্বা একটা গান৷ তখন তো আর এটা জাতীয় সংগীত নয়৷ পুরো গানটা আমি কেমন করে শোনাবো? আমি তখন চেষ্টা করে গীতবিতান সংগ্রহ করে সে গান গেয়েছিলাম কোনমতে৷ জানিনা কতটা শুদ্ধ গেয়েছিলাম৷ কিন্তু তিনি এইভাবে গান শুনতে চাওয়ার একটা কারণ ছিল৷ তিনি যে অনুষ্ঠান করছিলেন, সেখানে পাকিস্তানিরাও ছিল৷ তিনি দেখাতে চেষ্টা করছিলেন তাদেরকে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' কথাটা আমরা কত সুন্দর করে উচ্চারণ করি৷ এই সমস্ত গানটার ভিতরে যে অনুভূতি সেটা তিনি তাদের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করেছিলেন৷ এবং আমার তো মনে হয় তখনই তাঁর মনে বোধহয় এটাকে জাতীয় সংগীত করবার কথা মনে এসেছিল৷ বায়ান্ন সালে যখন আমরা রবীন্দ্র সংগীত চর্চা করি তখন আমরা কিন্তু ঐ বায়ান্নর পরে পরে শহীদ মিনারে প্রভাতফেরিতে আমরা রবীন্দ্র সংগীত গাইতাম৷ এবং এইভাবে রবীন্দ্র সংগীত কিন্তু তখন বেশ চলেছে৷ আরো পরে কেমন যেন একটা অলিখিত বাধা এলো৷ পাকিস্তান আমলের পরে রবীন্দ্র সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা' যখন জাতীয় সংগীত হল, তার কিছুকাল পরে দেখা গেল - নানা ধরনের ওঠাপড়া চলছিল তো - সেই সময় গানটা না করে শুধু বাজনা বাজাবার একটা রেয়াজ শুরু হল৷ আমার মনে হয় এর মধ্যে সেই পাকিস্তানি মনোভাবটা কাজ করেছে৷''

সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের ওপর তোলা হয়েছিল নিষেধের বেড়া

রবীন্দ্র শতবর্ষ পালনের সময় থেকেই বাধাটা জোর পেতে থাকে৷ সনজীদা খাতুনের ভাষ্য: ‘‘৬১ সালে যখন রবীন্দ্র শতবর্ষ হল, ততদিনে আমি সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা৷ কাজেই আমার পক্ষে গান গাওয়া খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল বাইরের অনুষ্ঠানে৷ রেডিওতে গাইতাম৷ শতবর্ষ উপলক্ষে ‘তাসের দেশ' নাটক করা হচ্ছিল মঞ্চে৷ গান গাইতে হবে৷ আমি গান গাইতে বসে গেলাম৷ কিন্তু মুখের মধ্যে একটা রুমাল পুরে দিয়ে আমি গান গেয়েছিলাম৷ কারণ আমার গলা চিনে ফেললে আমার সরকারি চাকরিতে অসুবিধা ছিল৷ এই অনুষ্ঠানে গানটা গেয়ে আমি বেরিয়ে আসছি, আহাদ সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করছেন,‘‘কে গাইলো বলতো? ভালই তো লাগলো৷'' আমি তাড়াতাড়ি পালিয়ে গেলাম সামনে থেকে৷ কারণ আমি গেয়েছি এটা যদি প্রচার হয়ে যায় তাহলে আমার চাকরিতে অসুবিধে হবে৷ এইসব দিন তখন আমরা পার করেছি৷ ৬১ সালে যখন আমাদের অনুষ্ঠান সব পরপর হয়ে গেল, সরকারের লোক এসে সামনে বসে থাকতো চেয়ারে৷ দেখতো আমরা কী করছি৷ কিন্তু আমরা অনুষ্ঠান করে গিয়েছি৷ তারও পরে যেটা হয়েছিল শেষ দিকে, মোনেম খাঁর (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আইউব-অনুগত গভর্নর) লোকজন বাধা দেবার জন্য এসেছে৷ এবং কৌশলে আমাদের সেখান থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে৷ সবাই আমরা দ্রুত সেখান থেকে চলে গিয়েছি৷ পরে মোনেম খাঁর পুত্র এবং অন্যরা এসে ভাঙচুর করেছে৷ কিছু ফুলের টব ভেঙে চলে গেছে৷ কাজেই এই বাধাগুলো আমরা দেখেছি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ