বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট থেকে আবহাওয়ার আগাম তথ্য পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ৷
বিজ্ঞাপন
মাহবুব-উল আলম হানিফের এই মন্তব্য ভাইরাল হয়ে গেছে৷
ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় নেয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে শনিবার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর আমাদের দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর সংগ্রহ করেছিল৷ আগাম তথ্য পেয়েছিলাম বিধায় সরকার ও দলীয়ভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷''
হানিফের এই বক্তব্য প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইটের আবহাওয়া বিষয়ক কোন তথ্য দেয়ার আদৌ কোনো ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেননা, বাংলাদেশ সরকার ইতোপূর্বে জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট৷
ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই স্যাটেলাইট বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, আবহওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য দেয়ার ক্ষমতা স্যাটেলাইটটির নেই৷ এটিকে মূলত সম্প্রচার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কিংবা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে টেলিকমিউনিকেশন এবং ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশ যোগাযোগ এবং সাইবারনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাভেদ ইকবাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইটটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কোনো ক্ষমতা নেই৷ এটি শুধুমাত্র সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে৷''
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বক্তব্য দেয়ায় তাই অনেকে ফেসবুকে আওয়ামী লীগ নেতার সমালোচনা করেছেন৷ তিনি কি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কর্মক্ষমতা সত্যিই জানতেন না, নাকি জানার পরও শুধুমাত্র সাফল্যের খতিয়ান দিতে ‘ভুল তথ্য' প্রকাশ করেছেন সেটা জানতে চেয়েছেন অনেকে৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে তিন হাজারের বেশি মন্তব্য পাওয়া গেছে৷
ফণীর আঘাত
শুক্রবার সকালে ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার মাধ্যমে তাণ্ডব শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ফণী৷ ক্রমাগত দুর্বল হলেও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে বাংলাদেশ আছে ফণীর আওতার মধ্যে৷ সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
ওড়িশায় ফণীর তাণ্ডব
ফণীর আঘাতের শুরুতে ওড়িশায় ৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম৷ পুরীর সাক্ষীগোপালে গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে আর ওড়িশার কেন্দ্রপাড়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এক বৃদ্ধার৷ এছাড়া গাছপালা ও ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
ওড়িশায় ক্ষয়ক্ষতি
ফণীর আঘাতের শুরুতে ওড়িশায় ৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম৷ পুরীর সাক্ষীগোপালে গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে আর ওড়িশার কেন্দ্রপাড়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এক বৃদ্ধার৷ এছাড়া গাছপালা ও ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
ওড়িশা ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে
ওড়িশা রাজ্যের উপকূল অতিক্রম করার পর উত্তর-উত্তরপূর্বে পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হয় ফণী৷ শক্তিশালী এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অনেকে আটকা পড়েন স্টেশনগুলোতে৷
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
বাংলাদেশে আঘাত
পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে আরো উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ ফণী খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফণীর পৌঁছানোর কথা৷ এরপর রাজশাহী, রংপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাংশ পেরিয়ে যেতে পারে৷ দেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
ফণী আসার আগেই লণ্ডভণ্ড
ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার আগেই ঝড়ের কারণে লন্ডভন্ড হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা৷ স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় মাত্র ১৫ সেকেন্ডের একটি দমকা হাওয়া বয়ে যায় শহরের মির্জাবাজার এলাকার উপর দিয়ে৷ ঝড়ের শক্তিতে আশেপাশের অন্তত ২৫টি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে৷
ছবি: Reuters/Narendra Sai Photography
উড়ে গেছে এভারেস্টের তাঁবু
৯০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের ঘূর্ণিঝড়ে আওতার মধ্যে নেই নেপাল৷ কিন্তু ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে এভারেস্টের বেশ কিছু তাঁবু৷ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে ৬,৪০০ মিটার উঁচুতে ২টি ক্যাম্পের ২০টি তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/F. Neukirchen
শিশুর নাম হলো ‘ফণী’
ভারতের ওড়িশা উপকূলের ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে জন্ম নিয়েছে শিশুটি৷ সে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ফণীকে নিজের নাম হিসাবে পেয়েছে মেয়েশিশুটি৷ শুক্রবার স্থানীয় সকাল ১১টায় ভুবনেশ্বরের মঞ্চেশ্বর হাসপাতালে তার জন্ম হয় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ব্যাপক প্রস্তুতি
গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য৷ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলের ৪ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে ভারতে অন্তত ১১ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছে ওড়িশা সরকার৷