1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বছরজুড়ে গুগলে কী খুঁজল ভারতীয়রা?

৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়৷ কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে জিজ্ঞাসা করাই যথেষ্ট৷

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের লোগো৷ ফাইল ফটোছবি: Sean Gallup/Getty Images

প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা কম নয়৷ দিল্লি থেকে শুরু করে শত শত মাইল দূরে প্রান্তিক পর্যায়ের কোটি কোটি বাসিন্দার কাছেও রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা৷ চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে গুগলে কোন বিষয়ে বেশি জানতে চেয়েছে জনসংখ্যায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির বাসিন্দারা?    

২০২৫ সালের সার্চ-প্রবণতার বিশদ চিত্র তুলে ধরে গুগল প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়াস ইয়ার ইন সার্চ ২০২৫: দ্য এ টু জেড অব ট্রেন্ডিং সার্চেস'৷ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর ভারতীয়দের অনলাইন অনুসন্ধানে বিনোদন, ক্রীড়া, প্রযুক্তি, জাতীয় ঘটনা ও দৈনন্দিন জরুরি তথ্যই ছিল আগ্রহের কেন্দ্রে৷

কোন বিষয়ে আগ্রহ

বিনোদন বিভাগে সবার উপরে ছিলেন ‘সাইয়ারা' ছবির অনীত পাড্ডা ও আহান পান্ডে৷ চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং সিনেমা ছিল এটি৷ সিনেমাটির টাইটেল সং সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়েছে৷

শুধু তা-ই নয়, আঞ্চলিক চলচ্চিত্রও এ বছর সার্চ তালিকায় বড় জায়গা দখল করেছে৷ হিন্দি সিনেমার সঙ্গে ‘কানতারা: এ লিজেন্ড চ্যাপ্টার ১', ‘কুলি', ‘মার্কো'–র মতো দক্ষিণ ভারতীয় ছবিগুলিও ট্রেন্ডিং তালিকায় উঠে এসেছে৷

প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় জানতেও ভারতীয়দের মধ্যে অনেক আগ্রহ দেখা গিয়েছে৷ গুগলের কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্ম জেমিনি সামগ্রিক সার্চ-এর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, আইপিএলের পরেই৷ এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) টুল ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ায় ডিপসিক, পারপ্লেক্সিটি, চ্যাটজিপিটি, গুগল এআই স্টুডিও এবং ফ্লো — এসব সম্পর্কেও ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছেন নেটিজেনরা৷

ভারতে সাইবার অপরাধের বিস্তৃত জাল

13:07

This browser does not support the video element.

ক্রীড়া বিভাগে বরাবরের মতোই এগিয়ে ছিল ক্রিকেট৷ ২০২৫ সালের আইপিএল নিয়ে সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়েছে৷ নারীদের ক্রিকেটেও ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ বিশ্বকাপ জয়ের পরে জেমিমা রডরিগেজ নারী ব্যক্তিত্বের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছেন৷

জাতীয় ঘটনা সার্চ প্রবণতায় প্রভাব ফেলেছে বছর জুড়ে৷ বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়৷ পাশাপাশি মহা কুম্ভ মেলা নিয়েও আগ্রহ ছিল৷ এই মেলায় পৌঁছনোর যাত্রাপথ, আয়োজন ও ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে বড় সংখ্যক সার্চ হয়েছে৷

গুগল সার্চের ক্ষেত্রে বহু মানুষ ‘নিয়ার মি' (আমার কাছে) ব্যবহার করে তথ্য খুঁজে নেন৷ সিনেমা হল, ওষুধের দোকান থেকে হাসপাতাল, অনেক কিছুরই খোঁজ করা হয়৷

তবে ২০২৫ সালে অন্য একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে ‘নিয়ার মি' বিকল্প ব্যবহার করে৷ ‘আর্থকোয়েক নিয়ার মি' ছিল বছরের সর্বাধিক অনুসন্ধান করা ‘নিয়ার মি' প্রশ্ন৷ পাশাপাশি বাতাসের মান সংক্রান্ত সার্চও ছিল শীর্ষে৷

লাবুবু খেলনা নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই বছরের শেষ ভাগে৷ ‘#৬৭ মিম' সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তোলায় তা নিয়েও সার্চ বেড়েছে৷

ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গুগলে রান্নার রেসিপি খুঁজেছেন৷ ঠেকুয়া ও উকড়িচে মোদকের মতো ঐতিহ্যবাহী রেসিপির পাশাপাশি ইয়র্কশায়ার পুডিং-এর মতো বিদেশি খাবারও এ বছরের সার্চ তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ উৎসব, ভ্রমণ ও আচার–অনুষ্ঠানকে ঘিরে নানা বিষয়ও সার্চের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে৷

স্কুইড গেম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শো, জনপ্রিয় সিরিজগুলোর পাশাপাশি সুনীতা উইলিয়ামসকে নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ সার্চ করেছেন৷ ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে আগ্রহ দেখা গিয়েছে৷

জটিল সমস্যা সমাধানে এআই এখনও মানুষের গভীর বিচার-বিবেচনার বিকল্প হতে পারে না: মুনমুন ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

গুগল সার্চ বিশ্লেষণে মানসিকতার প্রকাশ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘সাম্প্রতিক গুগল সার্চের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণ ভারতবাসীর আগ্রহ কোন দিকে৷ যে তিনটি বিষয় সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা হয়েছে, তা কেবল রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং জনগণের মানসিকতারই প্রতিফলন৷

​তার মতে, ‘‘ভারতে ‘সিজফায়ার' শব্দটি  বহু বছর ধরে প্রচলিত, বিশেষত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে৷ তবে ইদানীং এই শব্দের বহুল অনুসন্ধান প্রমাণ করে যে, মানুষের আগ্রহ বেড়েছে৷ এই আগ্রহ কেবল ‘সিজফায়ার' কী বা কারা, কেন ব্যবহার করে, তা জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানুষের গভীর শান্তিপ্রীতি-র ইঙ্গিত দেয়৷''

সম্প্রতি ভারতে ওয়াকফ নিয়ে ফের আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে৷ তারই সঙ্গে বেড়েছে সার্চের সংখ্যা৷

রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর মতে, ‘‘ওয়াকফ বিল নিয়ে মানুষের আগ্রহের কারণ সুদূরপ্রসারী৷ ওয়াকফ সম্পত্তি হলো মুসলিমদের ধর্মীয় ও জনহিতকর কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তি৷ দুঃখের বিষয় হলো, এত বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের একটি বড় অংশের মধ্যে দারিদ্র বেশি৷ মানুষ এখন জানতে চাইছে, এই আইন কি ‘মুসলমান বিরোধী', নাকি এটি সত্যিই তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য৷ মানুষের এই অনুসন্ধান প্রবণতা প্রমাণ করে যে, তারা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও সমাজ সংস্কারের বিষয়ে গভীরভাবে আগ্রহী৷''

এআই ব্যবহারের ভালো মন্দো, বিশ্লেষকেরা যা বলছেন

​যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপিকা মুনমুন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এআই ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ ভুল পথে চালিত হবে কি না বা যাচাই না করার প্রবণতা কতটা তৈরি হবে, সেটা দেখতে হবে৷ মানুষ কীভাবে এআইকে ব্যবহার করবে, তার উপরে এটা নির্ভর করছে৷ ভবিষ্যতে বিষয়টা বোঝা যাবে৷''

এই অধ্যাপিকা আরো বলেন, ‘‘সাধারণভাবে পড়ুয়ারা এখন নিজেরা লেখা ছেড়ে দিয়েছে৷ তারা চ্যাট জিপিটি, জেমিনিতে সার্চ করেই লিখে দিচ্ছে৷ লেখাটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে৷ আগে অন্তত পিডিএফ পড়ে কিছু বুঝত৷ কিন্তু এখন চ্যাট জিপিটি থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে৷ তারা অনুসন্ধান করেও না যে, তা সঠিক তথ্য না ভুল তথ্য৷::

​তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘চ্যাট জিপিটিতে যখন আমরা একটা বিষয় দিচ্ছি, ও কিন্তু ঠিকও দেয়, ভুলও দেয়৷ সেটা নির্ভর করে যে, ও সার্চ করে কী পেয়েছে৷ মানুষ কিন্তু শর্টকাটের জন্য এটাকে বড্ড বেশি ব্যবহার করছে৷ মানে সাহায্যের জন্য কম, বরং খাটনি থেকে বাঁচার জন্য৷ ফলে নলেজ গ্যাপ অর্থাৎ জ্ঞানের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে৷''

ডিপফেক পর্নের টার্গেট নারী রাজনীতিবিদরা

02:52

This browser does not support the video element.

মুনমুন এআই-এর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘জটিল সমস্যা সমাধানে এআই এখনও মানুষের গভীর বিচার-বিবেচনার বিকল্প হতে পারে না৷ কতটা আমি পড়ব আর কতটা চ্যাট জিপিটি থেকে নেব, এইটা শিখলে তবে কিন্তু এআই সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে৷''

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত এআই-এর ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আলোকপাত করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে সমস্ত কাজই এআই দিয়ে হবে এবং এর ফলে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের চাকরি চলে যাবে৷ মানুষের জায়গায় সবকিছু রোবট দিয়ে হবে এবং যা কাজকর্ম হবে, সেই সমস্ত কাজগুলো কিন্তু এআই করে দেবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এআই নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে৷ সুরক্ষার সমস্যা এখনও আছে, তখনও থাকবে৷ এআই নির্ভরতার ফলে যে প্রধান সমস্যাটি বাড়বে, তা হলো ডিপফেক৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ