ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তবর্তী কুরস্কে গত বেশ কয়েকমাস ধরে তীব্র লড়াই চলছে। কিয়েভের ফোর্স রাস্তার দখল নিতে চায়।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র লড়াই চলছিল। তবে রোববার ইউক্রেন সেখানে আচমকাই অভিযান শুরু করেছে। রাশিয়ার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ৪২ টি লড়াই হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে, তার মধ্যে অন্তত ১২টি লড়াই এখনো জারি আছে।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, কুরস্কে রাশিয়ার সেনাকে কার্যত চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ইউক্রেনের সেনা। রাশিয়ার তরফে অবশ্য এই ধরনের কোনো লড়াইয়ের কথা বলা হয়নি। রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলিতে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে এবং রাশিয়া প্রতিআক্রমণ চালিয়েছে।
গত অগাস্টে কুরস্কে শেষ এই ধরনের অভিযান চালিয়েছিল ইউক্রেন। নতুন বছরের গোড়ায় দ্বিতীয় অভিযান চালানো হলো। তবে এখনো পর্যন্ত কোনোপক্ষই হতাহতের কোনো খবর দেয়নি।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
জেলেনস্কির বক্তব্য
এদিকে রোববার ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিযে একাধিক কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জো বাইডেন সরকারের থেকে বিরাট সাহায্য পেয়েছে তার সেনা। এবং সে কারণেই এতদিন ধরে এই লড়াই জারি রাখা সম্ভব হয়েছে। ট্রাম্পের আমলেও এইভাবেই সাহায্য পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের আমলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই আরো এককদম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে মনে করছেন জেলেনস্কি।
জেলেনস্কির কথায়, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আরো শক্ত এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গড়ে তুলতে হবে ইউরোপজুড়ে। ট্রাম্পের সঙ্গে এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কারণ অ্যামেরিকার হস্তক্ষেপ ছাড়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনী তৈরি করা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। এবং অ্যামেরিকাই পারে রাশিয়ার এই অভিযান বন্ধ করতে।
এর আগে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ন্যাটোর সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছিল। এবার এসে আবার তা হলে পরিস্থিতি আরো কঠিন হবে বলে মনে করেন জেলেনস্কি। বস্তুত, এর আগে ট্রাম্প ন্যাটো ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। সে কারণেই ট্রাম্প ক্ষমতা নিলেই তার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।