২০২৪ সালের শুরুর দিন থেকেই বিভিন্ন পণ্যের উপর নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার৷ জ্বালানি, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার পণ্যে ১৮ শতাংশ মূসক দিতে হবে ভোক্তাদেরকে৷
বিজ্ঞাপন
এছাড়া বাকি যেসব পণ্যে এতদিন ১৫ শতাংশ মূসক ছিল সেটিও বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে সরকার এই পরিকল্পনা কার্যকর করেছে৷
নতুন বছরের বার্তায় প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ‘‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে আমাদেরকে এই চাহিদামাফিক পথে এগিয়ে যেতে হবে, যা ফুল সজ্জিত হবে না বরং কঠিন চ্যালেঞ্জময় হবে৷’’
অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ২০২২ সালের গণবিক্ষোভের এক পর্যায়ে তখনকার প্রেসিডেন্ট গোটাবায় রাজাপাকসের বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষুব্ধ জনতা৷ জুলাইতে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন৷ আগের সরকারের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণের দায় নিয়ে ক্ষমতায় বসা রনিল বিক্রমাসিংহে সরকার কঠোর সব সিদ্ধান্ত নেয়৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়ার শর্ত হিসেবে কর বৃদ্ধি এবং সরকারের ভর্তুকিতে কাটছাঁট করে৷
তারই প্রেক্ষিতেই ২০২৪ সালের প্রথম দিনটি শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের শুরু হচ্ছে মূল্য সংযোজনের বাড়তি কর দিয়ে, যার কারণে বিভিন্ন পণ্য কিনতে বাড়তি টাকা গুণতে হবে৷
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছায়৷ সেখান থেকে গত নভেম্বরে তা দেড় শতাংশে নেমে এসেছে৷
এফএস/এসিবি (এএফপি, এপি)
অর্থনৈতিক সংকটে যেভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার নিম্নবিত্ত মানুষ
অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিপাকে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ৷ পরিস্থিতি এমন যে দিনে দুই বেলা খাবারের খরচ মেটাতেও পারছেন না তারা৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
চাল নেই ঘরে
রাজধানী কলম্বোর কাছে ওয়ান্টামুলায় তিন সন্তান আর নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন এই নারী৷ রান্নার গ্যাস বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর স্বামী ছেড়ে যান তাকে৷ স্থায়ী কোনো চাকরি না থাকায় ছুটা কাজ করে পরিবারের খরচ চালান তিনি৷ এখন তার মতো কয়েক লাখ মানুষের পক্ষে এমনকি তিন বেলার খাবার জোগাড় করাও বড় এক চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
প্রোটিনের ঘাটতি
৪৯ বছর বয়সি নিলান্থি গুনাসেকারার ঘরে মাছ বলতে এই শুটকিটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক সংকটের আগে আমরা ভালোই খেতাম৷ সন্তানদের সপ্তাহে অন্তত তিন বা চারদিন মাংস বা মাছ খাওয়াতে পারতাম৷ এখন মাছ আমাদের পরিবারের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ গেছে, একই অবস্থা মাংসেও৷’’
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
করোনার উপর নতুন খাঁড়া
৬০ বছর বয়সি গামাগে রূপাওয়াথির (ডানে) কলম্বোতে ফলের দোকান ছিল৷ সেখান থেকে আয় দিয়ে স্বামী (মাঝে), সন্তান (বামে) নিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার৷ কিন্তু মহামারি চলাকালীন দীর্ঘ লকডাউনের কারণে তার দোকান বন্ধ হয়ে যায়৷ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেটি আর পুনরায় চালু করতে পারেননি তিনি৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
এক কাপ চা, দুটি বিস্কুট
গামাগে রূপাওয়াথির স্বামীর জন্য কোনো কোনোদিন এটিই একমাত্র খাবার৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটির সোয়া দুই কোটি বাসিন্দার এক চতুর্থাংশই বর্তমানে দুই বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খান৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
ওষুধের সংকট
হৃদরোগে আক্রান্ত মানেল পাইরিস তার ওষুধের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন৷ ৬৮ বছর বয়সি এই নারী একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে আগে নিয়মিত তিন মাসের ওষুধ পেতেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে মাসে তিন হাজার ৪০০ রুপি খরচ হয়, যা আমার পক্ষে বহন সম্ভব না৷ আমি বড়জোর এক সপ্তাহের ওষুধ কিনতে পেরেছি৷ কখনো কখনো আমার স্বামীকে টাকা ধার করতে হয় বা অগ্রিম মজুরির আবেদন করতে হয়৷’’
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
জলের অভাব
‘‘আমাদের কলে জলের সংযোগ আছে, কিন্তু খাবারের ক্রমবর্ধমান খরচ ছাড়াও জল আর বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা খুব কঠিন৷ তাই এখন টাকা বাঁচানোর জন্য আমি প্রায়ই একটি পাবলিক কূপে স্নান করি,’’ বলেছিলেন শিবরাজা সঞ্জীওয়ান নামে ৩১ বছর বয়সি অটোরিকশা চালক৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
বিপদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
৫৩ বছরের প্রিয়ানি ধম্মিকা পান বিক্রি করেন৷ এর ভিতরে থাকে বাদাম৷ তিনি বলেন, ব্যবসা এখন খুব কঠিন, কেননা, বাদামের দাম তিনগুণ আর পাতার দাম আটগুণ বেড়েছে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
কী দিয়ে রান্না করবেন?
বিদ্যাথিপাতিগে নিহাল আর তার পরিবারের গ্যাসের ট্যাংক আর চুলা চুরি গেছে৷ এর ফলে খোলা চুলায় রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা৷ কিন্তু গ্যাসের ঘাটতির কারণে জ্বালানি কাঠের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে৷ বেড়েছে দামও।