বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রাক্কালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং সিরিয়া থেকে আরো মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷
জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ এছাড়া দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক রাষ্ট্রদূত ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জানিয়েছেন, এদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ শরণার্থীই মাত্র ১০ টি দেশের থেকে বাস্তুচ্যূত৷
ইউএনএইচসিআর সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সুদানের পর সিরিয়া সংকটের কারণে গৃহহীনদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাপী এসব মানুষের সুরক্ষা জরুরি৷ দক্ষিণ সুদানের পর সিরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও কলম্বিয়ায় অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ৷ বিশ্বব্যাপী ৪ কোটি শরণার্থী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যূত হয়েছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়া এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ এসব দেশে সংঘাত ও দুর্বিষহ দুর্ভোগের কারণে সম্প্রতি সমুদ্রপথেও শরণার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে৷
চোরাকারবারিদের পথ ধরে আসছেন শরণার্থীরা
ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে ক্রমেই আরো বেশি উদ্বাস্তু সীমান্তের এভ্রস নদী পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসছেন৷ কিন্তু এ পথেও বিপদ কিছু কম নয়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সীমান্ত বলতে এভ্রস নদী
মাত্র পাঁচ থেকে ছ’মিনিটের মধ্যে এভ্রস নদী পার হওয়া যায়৷ নদী ছোট হলেও তাতে স্রোতের কিছু কমতি নেই৷ এককালে স্মাগলাররা এই পথ দিয়ে মাল পাচার করতো৷ উদ্বাস্তুরা সে পথ ধরার পর থেকে এই রুটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
দু’দেশের সেন্ট্রি টাওয়ার
সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের একাধিক সেন্ট্রি টাওয়ার খাড়া রয়েছে৷ দৃশ্যত তা সত্ত্বেও উদ্বাস্তুরা এই পথ দিয়ে গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করে চলেছেন৷ জার্মান ‘স্পিগেল’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, তুরস্ক জ্ঞাতসারে উদ্বাস্তুদের এই নতুন পথ ধরে ইউরোপে আসতে দিচ্ছে৷ এমনকি গ্রিসের দু’জন সৈন্য ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করলে তুরস্কে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর থেকে গ্রিস নীরব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
এভ্রস পার হওয়ার পর
ভূমধ্যসাগর দিয়ে এলে গ্রিসের কোনো দ্বীপে ১৫,০০০-এর বেশি অধিবাসী সম্বলিত কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে হয় – তারপরেও তুরস্কে ফেরত পাঠানোর ভয় থাকে৷ এভ্রস রুট দিয়ে এলে সেখান থেকে বিনা বাধায় দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেললাইন ধরে হেঁটে পাইস শহর অভিমুখে
এভ্রস উদ্বাস্তুদের গ্রিসে ঢোকার পর রেজিস্ট্রি করা হয় ও গ্রিসে অবস্থানের জন্য তিন মাসের ভিসা দেওয়া হয়৷ শুধু এপ্রিল মাসেই ২,৯০০ উদ্বাস্তু এভ্রস হয়ে গ্রিসে ঢুকেছেন৷ গোটা ২০১৭ সালেই এসেছিল মাত্র ১,৪৫০ জন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেল স্টেশনে বিশ্রাম
পাইস শহরটি এভ্রস নদী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে৷ উদ্বাস্তুরা এখানে খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন৷ বিশেষ করে শিশুরা পথের কষ্ট আর অভাব-অনটনে কাহিল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
নি ভিসা শহরের কাছে পুলিশের অপেক্ষায়
এখান থেকে পুলিশ উদ্বাস্তুদের প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাবে৷ উদ্বাস্তুদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে স্থানীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন৷ সিরিয়া বা ইরাক যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এভাবেই উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
পুলিশের গাড়িতে চড়ে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে
উদ্বাস্তুদের ফিলাকিও শহরে অবস্থিত প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তবে সেখানেও কর্মকর্তারা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কাঁটাতারের বেড়ার পিছনে
ফিলাকিও-র প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দেখলে মন খুশি না হওয়ারই কথা৷ উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ার ফলে জায়গা ও পর্যাপ্ত কর্মকর্তার অভাব৷ এভ্রস রুট আপাতত সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কে ইইউ আর তুরস্কের চুক্তির আওতায় পড়ে না৷ এর ফলে উদ্বাস্তুরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে যান৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বাসে চড়ে বড় শহরে
ফিলাকিও-য় রেজিস্ট্রি করার অল্প পরেই উদ্বাস্তুদের বাসে করে এথেন্স বা থেসালোনিকিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু সেখানেও উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই, কর্মকর্তারাও ব্যতিব্যস্ত৷
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা ইতিমধ্যে উদ্বাস্তু৷
এর মানে প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছে এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছে৷
আর জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশের, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের অধিকাংশই আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো থেকে এসেছে৷
ইউরোপের দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের সংখ্যা প্রমাণ করে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে সবমিলিয়ে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে৷ তাঁদের আশ্রয়ের আবেদনেরও ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া চলছে৷ জার্মানিতেও শরণার্থী ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷
শরণার্থী সংস্থা বলছে, বাস্তুচ্যুত হওয়া ৬৬৭,৪০০ দেশত্যাগী মানুষকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৫৫২,০০০৷ শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার সংখ্যাটা শতকরা ৩ শতাংশ বেড়েছে মাত্র এক বছরে৷
পিএস/এসিবি (এপি/এএফপি)
জীবন বাজি রেখে ইউরোপের পথে
অভিবাসনের আশায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই ইউরোপে আসছেন৷ ইটালির ‘পাসো ডেলা মর্তে’ হয়ে ইউরোপের আরো উত্তরের দেশগুলোতে আসতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে৷ ফটোসাংবাদিক ফেডেরিকো স্কপা ছিলেন তেমন শরণার্থীদের সঙ্গে....
ছবি: DW/F.Scoppa
গহীন জঙ্গল, দুর্গম পথ
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সভয়ে এগিয়ে চলেছে আফগান কিশোরদের একটি দল৷ সব সময় ভয় – পুলিশ যদি দেখে ফেলে! এই ভয় নিয়ে, দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরেই পেরোতে হবে ‘ডেথ পাস টু ফ্রান্স’৷ যাত্রা শেষ হতে এখনো ১২ কিলোমিটার বাকি৷
ছবি: DW/F.Scoppa
পদে পদে বিপদ
ইটালির ভেনটিমিগলিয়া শহর আর ফ্রান্সের মেতোঁর মাঝখান দিয়ে এক সময় হাইওয়ের টানেলের ভেতর দিয়ে, কখনো রেলপথ ধরে, কখনো বা গিরিপথ ধরে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয়৷ যে কোনো মু্হূর্তেই ঘটে যেতে পারে সমূহ বিপদ৷
ছবি: DW/F.Scoppa
তীব্র গতি, দৃষ্টি ক্ষীণ
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের্ অনেকেই প্রাণ হাতে নিয়ে এই হাইওয়ে টানেল ধরে ধরে হেঁটে পৌঁছাতে চান ফ্রান্স৷ জীবনের ঝুঁকি তাদের প্রায় প্রতি পদক্ষেপে৷
ছবি: DW/F.Scoppa
প্রকৃতির আশ্রয়ে, প্রকৃতির ভরসায়
কীভাবে যেতে হবে তা না জেনে, সঙ্গে কোনো খাবার না নিয়েও ‘ডেথ পাস’ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন অনেকে৷ প্রকৃতির উদারতাই তাদের একমাত্র ভরসা৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে ফরাসি সরকার তৈরি করেছিল এই প্রাচীর৷ শান্তির পতাকাও ওড়ানো হয় তখন৷ ইটালি ও ফ্রান্স সীমান্তের এই এলাকটি অভিবাসন প্রত্যাশীদের খুব পরিচিত রুট৷
ছবি: DW/F.Scoppa
ওই দেখা যায়..
৩০০ মিটার দূরেই ‘ডেথ পাস’-এর শীর্ষ বিন্দু৷ সেদিকেই তাকিয়ে আছে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ন তিন অভিবাসন প্রত্যাশী৷ এখানে অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ পুলিশ ধরলেই ফিরিয়ে দেয় ইটালিতে৷