জার্মানিতে প্রতিবছর সাড়ে চার কোটি বাচ্চা মোরগ কেটে বা গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ কারণ, সেগুলো ডিম উৎপাদন করতে পারে না৷ আশার কথা হচ্ছে, মোরগ হত্যা কমানোর এক উপায় বের করেছেন গবেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
গণহারে বাচ্চা মোরগ হত্যা না করে বরং ভিন্নপন্থায় উৎপাদিত ডিম প্রথমবারের মতো জার্মানির বাজারে ছাড়া হয়েছে৷ বাচ্চা মোরগ কারণ হচ্ছে, এসব মোরগের মাংস ব্রয়লারের মোরগের মতো ভালো নয়, আর সেগুলো ডিমও উৎপাদন করতে পারে না৷
তবে, প্রাণী অধিকার কর্মীরা এভাবে বাচ্চা মোরগ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়৷ তা সত্ত্বেও এতকাল বর্বর এই পন্থা বন্ধের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি৷ তবে, এখন পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে৷ জার্মানির কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন এক পন্থা আবিষ্কার করেছেন যা ব্যবহার করে একটি ডিম পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে যে মোরগ হবে নাকি মুরগী৷
কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার বৃহস্পিতিবার বার্লিনে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এই পন্থায় ভবিষ্যতে পুরুষ মোরগ হত্যার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে না৷''
নতুন উদ্ভাবিত পন্থায় ডিমের খোলসের মধ্যে সুক্ষ্ম একটি ফুটো করে কিছু তরল বের করে পরীক্ষা করা হয় এবং তখন বোঝা যায় যে ভবিষ্যতে এই ডিম ফুটে মোরগ নাকি মুরগি বের হবে৷ মোরগ ডিমগুলো তখন শুরুতেই আলাদা করে সেগুলো দিয়ে উচ্চমানের প্রাণীখাদ্য তৈরি করা যায়৷
ইতোমধ্যে কিছু হ্যাচারি এই পন্থা ব্যবহার শুরু করেছে৷ আর সেসব হ্যাচারিতে উৎপাদিত ডিমও বার্লিনের ২২৩টি সুপারমার্কেটে বিক্রি শুরু হয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর সুপারমার্কেট দু'টির ৫,৫০০ সেন্টারে এমন ডিমের দেখা মিলবে, যেগুলোর উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ায় কোন পুরুষ মোরগ হত্যা করা হয়নি৷
ডিম ‘কেন’ খাবেন?
ডিম খেলে কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়ে আর সেই সাথে বাড়ে নানা সমস্যা – এরকম ধারণা অনেকেরই৷ ডিমে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানা ভিটামিন ও মিনারেল৷ জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা ডিম খাওয়া নিয়ে কী বলছেন...
ছবি: Imago
ডিম খেলে কি সত্যিই কোলেস্টেরল বাড়ে?
একটি ডিমের কুসুমে গড়ে ২৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা কিনা ধমনীর রক্ত জমাট হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ আর এ কথা ভেবে অনেকেই খাবারের তালিকা থেকে ডিম পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন৷ জার্মানির ডায়েবেটিস ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মাটিয়াস রিডল জানান, ডিম খেলে প্রতিটি মানুষেরই যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবে তা ভাবা মোটেই ঠিক নয়৷
ছবি: Imago
ডিম ফিট রাখে
গত কয়েক বছরের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল নিজে থেকে স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ দিনে একটি ডিম খেলে শরীরের ক্ষতি তো হয়ই না, বরং ডিম শরীরকে ফিট রাখে৷ জানান ড. রিডল৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
প্রতিদিন ডিম খান
প্রতিদিন একটি করে ডিম খেয়েছেন এ রকম এক হাজার পুরুষকে নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইউনিভারসিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাদের কারোই হার্ট অ্যাটাক বা স্টোকের ঝুঁকি বাড়েনি৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Gerten
আরো গবেষণা
প্রায় একই রকম তথ্য জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা এপিডস্টারের কাছ থেকে৷ ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৫০,০০০ মানুষকে নিয়ে করা হয়েছিল গবেষণা এবং সে গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, হৃদপিণ্ডে ডিম খাওয়ার নেতিবাচক কোনো প্রভাব তো পড়েইনি বরং তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে শতকরা ১২ ভাগ৷
ছবি: Colourbox/zemgalietis
উঁচু মানের প্রোটিন
ডিমে রয়েছে উঁচু মানের প্রোটিন, যা শক্তির জোগান দেয় এবং স্লিম রাখে৷ ডিম যেমন শরীরের পেশিকে শক্ত করে, তেমনি কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
স্লিম থাকতে ডিম খান
সকালে দুটো ডিম খেলে তা প্রায় পাঁচ ঘন্টা পেট ভরা রাখে৷ শুধু তা-ই নয়, ডিম মিষ্টি জাতীয় কোনো কিছু খাওয়ার আগ্রহকে দমন করে৷ তাই ডা. রিড বললেন, ওজন কমাতে আগ্রহীদের জন্য ডিম খুব উপকারী৷
ছবি: Meghala Shree
প্রয়োজনীয় মিনারেল
ডিমে রয়েছে জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো জরুরি মিনারেল, যা প্রতিটি শরীরের জন্য প্রয়োজন৷ এই মিনারেলের একটি কম হলেই শরীর ক্লান্ত লাগে এবং মানুষ সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ তাছাড়া এসবের অভাবে শরীরে নানা ইনফেকশন, চুল পড়া বা থাইরয়েডের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/M. Gerten
ভিটামিন ভাণ্ডার
ডিমে একমাত্র ভিটামিন ‘সি’ ছাড়া সব ভিটামিনই রয়েছে৷ ডিমে থাকা ভিটামিন এ, ডি এবং ই শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য খুবই জরুরি৷ তবে যারা ডিমের পুরো ভিটামিন পেতে চান, তাদের জন্য খাঁচায় পোষা মুরগির চেয়ে খোলা ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো মুরগির ডিমই বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞের৷