গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করেন, যাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি৷ বয়সের হিসেবে তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মঘাতী হচ্ছেন৷ তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এরচেয়ে আরো ১০ গুণ বেশি মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে গতমাসে একটি আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পায়৷ একজন মডেল আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্টের মাধ্যে সুইসাইড নোট দিয়েছিলেন৷ এমনকি ভিডিওতে তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টাও দেখান৷ এরপরেই তিনি আত্মহত্যা করেন৷ বাংলাদেশে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে এ ধরণের আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম৷ পুলিশ এর মধ্যে তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে কয়েকজনতে আটকও করেছে বলেও জানা গেছে৷
ভারতের একটি হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকা পাখির জামার মতো জামা না পেয়ে অভিমানে বাংলাদেশে কিশোরী-তরুণীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে গত প্রায় তিন বছর ধরে৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও সিরাজগঞ্জে পাখির মতো জামা না পেয়ে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে৷
এর বাইরে নির্যাতন, ইভটিজিং বা যৌতুকের কারণেও নারীদের আত্মহত্যার খবর প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়৷ এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা, বিশেষ করে এসএসি ও এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সময় বা তার পর পরও আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষণীয়৷
তাজুল ইসলাম
গবেষণা যা বলছে
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিচার্স বাংলাদেশ ২০১৩ সালে এক জরিপ চালিয়ে দেখে যে, প্রতিবছর দেশে গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে৷ প্রতি এক লাখে করেন ৭ দশমিক ৩ জন৷ বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং ভৌগলিক অবস্থানের নিরিখে ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪২৯ জনের ওপর সরাসরি জরিপ চালিয়ে তারা এই তথ্য প্রকাশ করে৷ আর শহরের চেয়ে গ্রামে আত্মহত্যার হার ১৭ গুণ বেশি৷ গ্রামে যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁদের বড় অংশ অশিক্ষিত এবং দরিদ্র৷
জরিপে বলা হয়, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷ এঁদের মধ্যে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ৷ এছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন৷
তাদের হিসেবে, ঐ বছর ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন ১০ হাজার ১২৯ জন৷ এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে৷
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করছেন ২১-৩০ বছর বয়সিরা৷ এর মধ্যেও নারীর সংখ্যা বেশি৷
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব
বাংলাদেশ পুলিশের হিসাবে, প্রতিবছর ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছেন৷ এর বাইরে আছে ঘুমের ওষুধ খাওয়া, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়া, রেললাইনে ঝাঁপ দেয়া৷
তাদের হিসাবে, এর বাইরে দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে যত রোগী ভর্তি হয়, তার সর্বোচ্চ ২০ ভাগ আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া লোকজন৷
সুস্থ পরিবেশেই গড়ে ওঠে সুস্থ জীবন
শিশুর প্রথম নিঃশ্বাস থেকে স্কুল জীবন শেষ করা এবং তারও পরে সন্তানের ভালো-মন্দের সাথে থাকেন তার বাবা-মা৷ কিভাবে ছোট্ট শিশুকে একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, তারই গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের গর্ভ
মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশুর ভালোর জন্য সব কিছু করেন বাবা-মা৷ সত্যিকার অর্থে সুস্থ পরিবেশই শিশুকে সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারে৷ তবে সুস্থ পরিবেশ বলতে কী বোঝায়, সেটা খুব বুঝে-শুনে ঠিক করতে হয় মা-বাবাকে৷ আর এর জন্য সন্তান কী চায়, অর্থাৎ তার মন এবং শরীরকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের দুধ দিয়ে শুরু
শিশুকে জন্মের সাথে সাথেই মায়ের দুধ পান করানো উচিত বলে মনে করেন বার্লিনের শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রাংক ইয়োখুম৷ তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের দুধে আছে শিশুদের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণ৷ শিশু মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে মায়ের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাটিও পায়৷ এর ফলে শিশুরা নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে যেমন রেহাই পায়, তেমনই বড় বয়সে ডায়বেটিস বা অতিরিক্ত ওজন সমস্যার মতো অসুখ থেকেও কিছুটা দূরে থাকে৷’’
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মায়ের খাবার
মা যতদিন শিশুকে দুধ পান করাবেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার থাকতে হবে৷ বিশেষ করে চর্বিযুক্ত মাছ, তাজা ফল ও সবজি৷ কারণ মাছের তেল শিশুদের মস্তিস্ক গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ মা সব কিছু খেতে পারলেও, লক্ষ্য রাখতে হয় যে শিশুর শরীর সে খাবার কিভাবে গ্রহণ করছে৷ এছাড়া মায়ের দুধ পান করার মাধ্যমেই কিন্তু শিশুরা বিভিন্ন খাবারের স্বাদও পেতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/WavebreakmediaMicro
শক্ত খাবার
বাচ্চাদের চার মাস বয়স থেকে প্রথম শক্ত খাবার দেয়া যায়৷ তবে শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ ‘বেবিফুড’ বা ঘরে রান্না করা খাবার অবশ্যই দিতে হয় ছয় মাস বয়স থেকে৷ এর কারণ, তখন আর শুধু মায়ের দুধ যথেষ্ট নয়৷ তবে সে সময় ‘‘লক্ষ্য রাখতে হবে যে শিশুর খাবারে বড়দের তুলনায় যেন মসলা এবং লবণ কম থাকে’’৷ এমনই পরামর্শ দেন ডা. ইয়োখুম৷
ছবি: Fotolia/victoria p
শাক-সবজি
অনেক সময় বাচ্চারা সবুজ-সবজি বা ফলমূল খেতে চায় না৷ তখন অনেক মা-বাবা গল্প করে, আদর করে সেগুলো তাদের খেতে বলেন, অনেকে আবার জোরও করেন৷ অথবা সালাদ বা পাতে দেয়া সবজিটুকু খেয়ে নিলে সে একটা চকলেট বা আইসক্রিম পাবে – এমন লোভও দেখিয়ে থাকেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাচ্চারা নকল করে
ডা. ইয়োখুম জানান, ‘‘মা-বাবা নিজেরা যদি নিয়মিত শাক-সবজি এবং ফলমূল খেতে অভ্যস্ত হন অথবা পছন্দ করেন, তবে সেটা খুব ছোট বয়স থেকেই সন্তানদের সামনে করা বা দেখানো যেতে পারে৷ কারণ শিশুরা বাবা-মাকে যা করতে দেখে সেটা নিজেরাও নকল করে, যা পরবর্তীতে অভ্যাসে পরিণত হয়৷’’
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
পুষ্টিগুণই যথেষ্ট
শিশুরা কোনো একটা সবজি বা ফল না খেলে জোর করার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, বলেন ডা. ইয়োখুম৷ বরং বাচ্চারা যেসব খাবার পছন্দ করে, সেসব খাবার সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে কিনা – সেদিকে লক্ষ্য রাখলেই যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
লোভনীয় মিষ্টি খাবার
বাজারে শিশুদের জন্য নানা রকম লোভনীয় মিষ্টি খাবার সাজানো থাকে, যা থেকে দূরে থাকাই ভালো৷ কারণ শিশুকাল থেকে সেসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বড় বয়সেও শরীর তা পেতে চায়৷ বলা বাহুল্য, ‘লো ফ্যাট’ দুধেও রয়েছে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, যা শিশুদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে৷ তাই বেশি মিষ্টি বা ফ্যাটের কোনো প্রয়োজনই নেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাস্থ্যকর পানীয়
বড়দের শরীরের তুলনায় বাচ্চাদের শরীরে বেশি পানি প্রয়োজন৷ তবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ট্যাপ ওয়াটার অথবা মিনারেল ওয়াটার৷ জার্মানিতে ট্যাপের পানি পান করা নিরাপদ৷ তাছাড়া ঘরে করা ফলের জুস, চা ইত্যাদি পান করা যেতে পারে৷ তবে বাজারের কেনা ‘আইস টি’, ফান্টা বা জুস নয়৷ কারণ সে সবে দেয়া থাকে প্রচুর চিনি৷ অবশ্য মাঝে মধ্যে যে এক, আধ গ্লাস পান করা যাবে না – তা কিন্তু নয়!
ছবি: Fotolia/Elenathewise
সাধারণভাবে বড় হওয়া
সারাদিন ঘরে বসে কম্পিউটারে খেলা বা টিভি দেখা নয়৷ যতটা সম্ভব বাইরে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন বাচ্চাদের৷ তার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন হবি বা খেলাধুলার জন্য ক্লাবে ভর্তি করে দিলে শিশুরা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিলে-মিশে, হেসে-খেলে স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: SerrNovik - Fotolia
বয়ঃসন্ধিকাল
এই বয়সে কেউ যেমন আর বাচ্চা নয়, আবার সবকিছু বোঝার মতো যথেষ্ট বড়ও নয়৷ কিশোর-কিশোরীরা এ বয়সে অন্য রকম কিছু করতে চায়, দেখতে চায় বা নানা কারণে মানসিক সমস্যাও হতে পারে তাদের৷ তাই বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের মনের অবস্থা বুঝে সেভাবে বাধা না দিয়ে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি সুন্দভাবে বুঝিয়ে দেয়া এবং অবশ্যই একজন বন্ধুর মতো আচরণ করা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নার্ভ শক্ত রাখতে হবে
ডা. ইয়োখুমের মতে, বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ শিশুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে নানা ধরণের পরিস্থিতির জন্য বাবা-মাকে নার্ভ শক্ত রাখতে হবে এবং কিছু কিছু ব্যাপারে তাদের ‘সাপোর্ট’-ও করতে হবে৷ একমাত্র তবেই সন্তানরা বয়ঃসন্ধিকাল সহজভাবে পার করে আস্তে আস্তে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: DW/Li Fern Ong
বন্ধুর মতো সহজ সম্পর্ক
সন্তান এবং বাবা-মায়ের ভেতরের সম্পর্ক যদি বন্ধুর মতো হয়, তাহলে অনেককিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়৷ এই সম্পর্কে তৈরি করতে অবশ্য বেশ খানিকটা সময় একসাথে কাটানো খুব দরকার৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে সময় পাওয়া কঠিন হলেও সময় বের করে নেওয়াটা কিন্তু খুবই জরুরি৷ কারণ শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ‘সময়’ মহা মূল্যবান!
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
নারীদের আত্মহত্যার কারণ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ আত্মহত্যার ৯৭০টি ঘটনা পর্যালোচনা করে নারীদের বেশি আত্মহত্যার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করেছে৷ তাদের মতে, বাংলাদেশে নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন এবং ইভটিজিং-এর ঘটনা বাড়ায় অনেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন৷
অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন৷ বেশির ভাগ নারী আত্মহত্যা করেছেন গলায় দড়ি দিয়ে আর পুরুষেরা কীটনাশক খেয়ে৷
২০১৩ সালে বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক ‘প্রথম আলো' তাদের পত্রিকায় প্রকাশিত ২০টি আত্মহত্যার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে৷ তাতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে নানা দিক উঠে এসেছে৷
কারণগুলো এরকম – যৌতুকের কারণে নারীরা আত্মহত্যা করেছেন, স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে সন্তানকে হত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছেন মা৷ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে৷ এছাড়া অন্তত দু'জন রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন৷ একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে, অন্যজন মতিঝিল এজিবি কলোনিতে শ্বাসকষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজের গলা কেটে ফেলেন৷ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় নীলফামারীতে এক কিশোর আত্মহত্যা করে৷ ঐ বছর শুধু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনই আত্মহত্যার চেষ্টা করা কমপক্ষে ২৭ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হন, যাঁদের মধ্যে একজন মারা যান৷
পাবনার ‘পাগলা গারদের’ কিছু দুর্লভ ছবি
পাবনার মানসিক হাসপাতালকে অনেকে বলে ‘পাগলা গারদ’৷ সেখানকার অবস্থা নিয়ে অভিযোগ অনেক৷ তবে এখানে থাকছে হাসপাতালটির কিছু দুর্লভ ছবি, যা ১৯৯৪ সালে তুলেছিলেন এক আলোকচিত্রী৷
ছবি: imago/UIG
প্রথম মানসিক হাসপাতাল
বাংলাদেশের প্রথম মানসিক হাসপাতালের অবস্থান পাবনায়৷ ১৯৫৭ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল একটি বাড়িতে৷ পরে ১৯৫৯ সালে হাসপাতালটি হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়৷ শুরুতে মানসিক হাসপাতালটি ছিল ৬০ শয্যাবিশিষ্ট৷ পরবর্তীতে তা ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়৷
ছবি: imago/UIG
প্রায় দেড়কোটি মানসিক রোগী
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, ২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে এ কথা৷ এত বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য বলতে গেলে মূল সরকারি হাসপাতাল একটাই, পাবনায়৷ ছবিটি ১৯৯৪ সালে তোলা এক নারীর, যিনি ভারতের মাদ্রাজ থেকে এসেছিলেন এবং পাবনায় হাসপাতালটির শুরু থেকেই রোগী হিসেবে ছিলেন৷
ছবি: imago/UIG
মানসিক রোগী সম্পর্কে ভুল ধারণা
বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের ‘পাগল’ বলা হয়, যা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ দেশটিতে মানসিক রোগীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে৷ মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় যা এক অন্তরায়, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ ছবিতে ১৯৯৪ সালে পাবনা মানসিক হাসপাতালের রান্নাঘর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: imago/UIG
গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের জন্য নয়
১৯৯৪ সালে যখন এ সব ছবি তোলা হয়, তখন মানসিক হাসপাতালে শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের ভর্তি করা হতো না৷ এখনও সেই নিয়ম চালু আছে কিনা জানা যায়নি৷
ছবি: imago/UIG
পুরুষ ওয়ার্ড
ছবিতে পাবনার মানসিক হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতাকে রোগ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা রয়েছে, মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা৷
ছবি: imago/UIG
মানসিক রোগীদের প্রার্থনা
মুসলমান পুরুষ রোগীরা প্রার্থনা করছেন৷ মানসিক হাসপাতালে পুরুষ ওয়ার্ড থেকে ছবিটি তোলা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, মানসিক রোগীদের পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়৷ বরং তাদের পরিবারের সংস্পর্শে রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত৷ বাংলাদেশে অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন৷ পাবনা মানসিক হাসপাতালে থাকা রোগীদের আত্মীয়রা সচরাচর তাদের আর খোঁজ নিতে আসেন না৷
ছবি: imago/UIG
হিংসাত্মক প্রবণতা আছে যাদের
হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে প্রবার প্রবণতা আছে এমন রোগীদের রাখা হয় আলাদা ওয়ার্ডে৷ ১৯৯৪ সালে তোলা ছবিতে সেই ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: imago/UIG
চঞ্চল রোগীরা
মানসিক হাসপাতালে থাকা রোগীদের অনেকে অত্যাধিক চঞ্চল থাকেন৷ তারা প্রায়ই গলা ছেড়ে গান গান এবং নাচানাচি করেন৷ ছবিতে সেরকম কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের সমাজ এদের ‘পাগল’ বলে এবং প্রকাশের তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করা এক স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: imago/UIG
বদলায়নি পরিস্থিতি
পাবনা মানসিক হাসপাতালে ১৯৯৪ সালে তোলা এসব ছবির সঙ্গে বর্তমানের পরিস্থিতির ফাঁরাক খুব একটা দেখা যায় না৷ হাসপাতালের পরিধি বাড়েনি, এখনো সেটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল৷ গত বছর তোলা হাসপাতালটির কিছু ছবি পেতে ক্লিক করুন ‘আরো’ বোতামে৷
ছবি: imago/UIG
9 ছবি1 | 9
আত্মহত্যা প্রবণ এলাকা
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি৷ আত্মহত্যার চরম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে ঝিনাইদহ পরিচিত৷ স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহে ২০১০ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩৮০ জন আর চেষ্টা করেছে ২১০৯ জন; ২০১১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩০৯ জন, চেষ্টা করেছে ২৮৪৯ জন; ২০১২ সালে আত্মহত্যা করেছে ২৯৫ জন, চেষ্টা করেছে ২৫৮৩ জন; ২০১৩ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩১১ জন, চেষ্টা করেছে ২৬৩৯ জন; ২০১৪ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩০৩ জন, আর চেষ্টা করেছে ২৪০৯ জন এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩৬৩ জন আর চেষ্টা করেছে ২৬০০ জনের ওপরে৷
ঝিনাইদহে প্রতিবছর গড়ে আত্মহত্যা করে ৩৫০ জন৷ আর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ৷ যাঁরা আত্মহত্যা করেন তাঁদের অধিকাংশই নারী৷
নারী নির্যাতন, পারবিারিক কলহ, সংসারে অশান্তি, অসুস্থতা, বাবা-মার ওপর অভিমান, প্রেম ঘটিত ব্যাপার, কৃষকের ঘরে কীটনাশকের সহজ লভ্যতা ও তুচ্ছ ঘটনায় আবেগ প্রবণ হয়ে এই জেলার মানুষ হরহামেশা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷
বিশেষজ্ঞরা যা বলেন
বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আত্মহত্যার দু'টি ধরন আছে – পরিকল্পিতভাবে এবং আবেগ তাড়িত হয়ে আত্মহত্যা৷ বাংলাদেশে অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা আবেগ তাড়িত হয়ে ঘটে৷ এ কারণে তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন৷ তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা৷ নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা ইত্যাদি৷''
তিনি জানান, ‘‘আসলে শহর বা গ্রাম নয় আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কম হয় অঞ্চলভেদে৷ আত্মহত্যার উপকরণের সহজলভ্যতা আত্মহত্যা একটি বড় কারণ৷ আবার আত্মহত্যার ঘটনা প্রচার হলে বা কেউ প্রত্যক্ষ করলে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে৷''
বলিউডের যে তারকারা অবসাদের শিকার
তারকাদের ঝলমলে জীবন দেখে মনে হতে পারে, তাদের জীবনে কোনো অবসাদ বা ডিপ্রেশন নেই৷ বলিউডের অবসাদগ্রস্ত তারকাদের অনেকে এই মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও কেউ কেউ সমাধান হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
দীপিকা পাড়ুকোন
দীপিকা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন একথা নিজেই স্বীকার করেছেন একটি সাক্ষাৎকারে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘একটা সময় আমার মনে হত আমি কি করব? কোথায় যাবো? আমি কেবল কাঁদতাম৷’’ দীপিকা নিজের অবসাদের ব্যাপারটি যে বুঝতে পেরেছেন এ কারণে বিশেষজ্ঞরা তাঁকে সাহসী বলেছেন৷
ছবি: DW/P. M. Tewari
আনুষ্কা শর্মা
দীপিকার পর আনুষ্কাও তাঁর অবসাদের কথা জানিয়েছেন৷ তিনি এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করেছেন৷ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যখন আপনার পেটে ব্যথা হয় তখন কি আপনি চিকিৎসকের কাছে যান না? এটাও সেরকমই একটি ব্যাপার৷’’ আনুষ্কা জানিয়েছিলেন তাঁর অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার রয়েছে আর সেটার চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: AP
পারভীন ববি
২০০৫ সালে পারভীন ববিকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছিল, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল মৃতদেহ উদ্ধারের ৭২ ঘণ্টা আগে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বেশ কিছুদিন ধরে না খেয়ে ছিলেন৷ পারভীন ডিপ্রেশন এবং সিজোফ্রেনিয়ার শিকার ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিল্ক স্মিতা
দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিদ্যা বালন অভিনীত ডার্টি পিকচার মুভিটি৷ নাম, যশ, খ্যাতির শিখরে থেকে একসময় তিনি মানসিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ ১৯৯৬ সালে নিজের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি৷
ছবি: ALT Entertainment/Balaji Motion Pictures
জিয়া খান
২০১৩ সালে জিয়ার আত্মহত্যা বলিউডে তোলপাড় তুলেছিল৷ মাত্র ২৫ বছরের জিয়া নিজের ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলো৷ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তাই তাঁর আত্মহত্যার কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মনীষা কৈরালা
গর্ভাশয়ে ক্যান্সারের কারণে মনীষা অবসাদে ভুগছিলেন৷ কিন্তু এসময় পরিবার ও বন্ধুরা তাঁকে সঙ্গ ও সাহস দেয়ায় তিনি সেই অবসাদ থেকে ফিরে এসেছেন৷ মনীষা বলেন তিনি নিরাশাবাদী নন, তাই ডিপ্রেশনের সাথে লড়াই করে জিতেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাহরুখ খান
বলিউডের বাদশাহ বলা হয় তাঁকে৷ কিন্তু তিনিও ডিপ্রেশনের শিকার৷ এটা শুনতে অস্বাভাবিক লাগতে পারে৷ কেননা জীবনে নাম, যশ, খ্যাতি কোনোটারই অভাব নেই তাঁর৷ কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর বেশ অনেকটা সময় তিনি অবসাদে ভুগছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
অমিতাভ বচ্চন
অ্যাংরি ইয়াং ম্যান হিসেবে পরিচিত অমিতাভ বচ্চন বরাবরই কঠিন সব ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ ৯০ এর দশকে নির্মাতা হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই কোম্পানি পরিবেশিত মুভিগুলো ফ্লপ হওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছিলেন৷ সেই সময় তিনি গভীর অবসাদে ভুগছিলেন৷ তাই মানসিক অসুস্থতার কারণে শারীরিক কিছু অসুস্থতাও দেখা দিয়েছিল তাঁর৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
ধর্মেন্দ্র
এক, দুই না টানা ১৫ বছর ধরে অবসাদে ভুগেছিলেন বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ ডিপ্রেশনের কারণে তিনি মদ্যপান শুরু করেন এবং এতে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন যে সংসারে অশান্তি শুরু হয়৷ কিন্তু বর্তমানে তিনি এসব পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন৷
ছবি: Mskadu
গুরু দত্ত
১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর নিজের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম সৃজনশীল পরিচালক গুরু দত্তকে৷ বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন৷ প্রতি রাতে মদ্যপান এবং ঘুমের ওষুধ ছিল তাঁর সঙ্গী৷ যেদিন মারা যান সেদিনও একসাথে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন৷
ছবি: Guru Dutt Films
10 ছবি1 | 10
চিকিৎসকেরা বলছেন, যাঁরা আত্মহত্যা করেন তাঁদের ৯৫ ভাগই কোনো না-কোনো মানসিক রোগে ভোগেন৷ তাজুল ইসলামের কথায়, ‘‘এই মানসিক বোগের সঠিক চিকৎসা করা গেলে আত্মহত্যা কমবে৷ মাদকাসক্তি আত্মহত্যা প্রবণতার জন্য একটি বড় কারণ৷ তাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া দরকার৷''
বাংলাদেশে মানসিক রোগের চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ২০০৷ জেলা পর্যায়েই মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই৷ শুধু ২২টি মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও পাবনার হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা হয়৷ ডা. তাজুল ইসলাম জানান, ‘‘যত লোক আত্মহত্যা করেন, তার অন্তত ১০ গুণ লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যান৷ কিন্তু তাঁরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন৷ সঠিক মানসিক চিকিৎসা না হলে তাঁদের বড় একটি অংশ আবারো আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন৷''
আত্মহত্যা নিয়ে গোটা বিশ্বে উদ্বেগ আছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) হিসাবে, ১৫-৪৪ বছর বয়সি জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো আত্মহত্যা৷ ডাব্লিউএইচও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতিবছর সাড়ে ১৫ লাখ মানুষ আত্মঘাতী হবেন৷ আত্মহত্যার চেষ্টা চালাবেন এর কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও আত্মহনন একটি ফৌদজারী বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ তবে যিনি আত্মহত্যা করেন, তাঁকে আর এই শাস্তি দেয়ার সুযোগ থাকে না৷
আত্মহত্যা বন্ধে কি কি উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে আপনার মনে হয়? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে