ইস্তানবুলের পর সন্ত্রাসী হামলা হলো জাকার্তায়৷ তুরস্কের দাবি, এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা ২০০ আইএস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে৷ তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা কি বাড়বে? বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বছরটা বরং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হবে৷
বিজ্ঞাপন
এ সপ্তাহেই তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে চালানো এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও ১৫ জন হত হয়৷ নিহতদের সবাই এবং আহতদেরও অধিকাংশই জার্মান পর্যটক৷ সরকার এ হামলার জন্য তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-কে দায়ী করে আসছে৷
শুক্রবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু দাবি করেন তুর্কি বাহিনী সিরিয়া সীমান্ত ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের তুর্কি শিবিরের কাছে আইএস-এর ৫০০টি লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে৷ হামলায় ২০০ জন আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলেও তুরস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়৷
ওদিকে জাকার্তায় সন্ত্রাসী হামলায় সাত জন নিহত হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীও হামলায় জড়িত এবং সন্ত্রাসে মদতদাতাদের গ্রেপ্তার করার জন্য ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে৷
এর আগে আইএস বা আইসিস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জাকার্তা হামলার দায় স্বীকার করা হয়য়৷ ইন্দোনেশিয়ায় আইএস-এর এটাই প্রথম হামলা৷
আইএস কি ইরাক ও সিরিয়ায় কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় রণ কৌশল বদলাচ্ছে? ইসলামি খেলাফত কায়েমের কথা বলে যে যুদ্ধের সূচনা করা হয়েছিল ইরাক ও সিরিয়ায় তা কি ধীরে ধীরে গুপ্ত হামলার আদলে বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়বে? সাম্প্রতিক হামলাগুলো সেরকম ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷ এমন চলতে থাকলে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর কারণে ২০১৬ সালে হয়ত রক্তের স্রোত আরো দীর্ঘ হবে৷
এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
বন্ধুরা, আপনার কী মনে হয়? এ বছরটা কি সত্যিই আরো ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধই হবে?