আগাম প্রচারের ঢক্কানিনাদ ছিল৷ কিন্তু বছর শেষের ভাষণে তেমন কিছুই বললেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
ছবি: Reuters
বিজ্ঞাপন
বিদায়ী বছরের শেষ সন্ধ্যেতে, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে সাতটায় টিভিতে ভারতবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ দেশের মানুষ রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিলেন, এবার কী চমক দেন প্রধানমন্ত্রী৷ ৮ নভেম্বর আচমকা ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর এত রকম নতুন নিয়মবিধি চালু হয়েছে এবং রদ হয়েছে, যে লোকে নাজেহাল৷ এই পরিস্থিতিতে সবারই প্রত্যাশা ছিল, নতুন বছরের উপহার হিসেবে হয়ত কোনও ভালো খবর দেবেন মোদী৷ হয়ত রেহাই মিলবে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার ওপর জারি রাখা বিধিনিষেধ থেকে৷ হয়ত বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ নতুন নোট পাওয়া যাবে নতুন বছরে৷
কিন্তু না, সেরকম কিছুই করলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ তার বদলে সহজে ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার কিছু ঘোষণা করলেন, যা প্রত্যক্ষভাবে মানুষের কষ্ট লাঘবে কোনও ভূমিকাই নেবে না৷ একবার দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী ঘোষণা করলেন তিনি, বর্ষশেষের সান্ধ্যভাষণে৷
- শহরাঞ্চলে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণের সুদে ৪% এবং ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণের সুদে ৩% ছাড়৷
নোট বাতিলের পর ভারতের নাজেহাল অবস্থা
ভারতে ৫০০ আর ১,০০০ টাকার নোট বাতিল হয়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেবার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ কাজেই হয়রান ও অধৈর্য হচ্ছেন মানুষ, দানা বাঁধছে রাজনৈতিক প্রতিরোধ৷
ছবি: REUTERS/File Photo/A. Dave
টাকা বাতিলে আতঙ্ক সর্বত্র
৮ই নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ৯ই নভেম্বর থেকে পাঁচশ’ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করা হচ্ছে৷ পরের বৃহস্পতিবার থেকেই ব্যাংকে ঢুকে টাকা বদল করার জন্য মানুষের ভিড় ও ধস্তাধস্তি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Altaf Qadri
লেডিজ ফার্স্ট
নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকে নোট বদলানোর জন্য মহিলাদের আলাদা লাইন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
ব্যাংক কর্মীরাও ব্যতিব্যস্ত
আসামের গুয়াহাটির একটি ব্যাংকে এক ব্যাংক কর্মী নোট তুলে ধরে দেখছেন, তা সাচ্চা কিনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
অনন্ত প্রতীক্ষা
রাজধানী নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকের সামনে সুদীর্ঘ লাইন৷ ধীরে ধীরে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে, যদিও বাড়ছে অসন্তোষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Das
ভুক্তভোগী
মুম্বইতেও মানুষজন লাইন করে দাঁড়িয়েছেন, টাকা বদলানোর আশায়৷ কিন্তু বয়স্ক মানুষদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ চূড়ান্ত অসুবিধেয় পড়েছেন পেনশনভোগী ও ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ সাধারণ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
প্রতিরোধ দানা বাঁধছে
সোমবার, ২৮শে নভেম্বর ভারত বনধ-এর ডাক দেয় বিরোধীরা৷ দেশ জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷ ছবিতে বনধের দিনে মুম্বই৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ধর্মঘটের দিনেও টাকা বদলানোর লাইন
দৃশ্যটা কলকাতার৷ ২৮শে নভেম্বর ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যা সমর্থন করেননি৷ জানিয়েছিলেন, জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে৷ বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে ছিলও তাই৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
‘দিদি’ মাঠে নামলেন
সোমবার আঠাশে নভেম্বর কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা অবধি মিছিল করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সেদিন নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার হুমকিও দেন তিনি৷ মমতা আগামী ৬ই ডিসেম্বর অবধি এক বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
8 ছবি1 | 8
- ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ঋণে গ্যারান্টার থাকবে কেন্দ্র সরকার৷ ডিজিটাল লেনদেন করলে ৬% কর ছাড় পাবেন ছোট ব্যবসায়ীরা৷
- কৃষকদের জন্য রবিশস্য ও খরিফ শস্যের মরশুমে ঋণশোধে ৬০ দিন পর্যন্ত রেহাই৷ কৃষকদের ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করতে তিন কোটি ‘কিষাণ কার্ড' বদলে যাবে ‘রু-পে' কার্ডে৷
- প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মেয়াদি জমার ক্ষেত্রে আগামী ১০ বছর ৮% সুদের নিশ্চয়তা৷
- দেশের ৬৫০ জেলায় গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবকালীন সুবিধা হিসেবে ৬০০০ টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান৷
এর মধ্যে একদম শেষের যে ঘোষণাটি, অর্থাৎ মহিলাদের প্রসবকালীন অনুদান, সেটাই একমাত্র জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরে নেওয়া যায়৷ যদিও ১২৫ কোটি মানুষের দেশে সন্তানজন্মে উৎসাহ দেওয়া কতটা বিচক্ষণতার পরিচয়, সে প্রশ্ন থেকেই যায়৷ যেমন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ১০ বছরের মেয়াদি জমায় সুদের হার বৃদ্ধি কতটা আদতে প্রবীণদের স্বার্থে, সে প্রশ্ন তুলছেন লগ্নি বিশেষজ্ঞরা,কারণ, প্রবীণ মানুষদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি জমা আদৌ বাস্তবিক নয়৷ বরং চিকিৎসা ও অন্যান্য নিয়মিত প্রয়োজনে বরং স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ই তাঁদের জন্য বেশি সুবিধার৷ কিন্তু বাদবাকি ছাড় ঘোষণার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ধরন কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এবং সেটা বেশ স্পষ্ট৷ সরকার মূলত চাইছে, মানুষ আরও বেশি করে ধার নিক ব্যাঙ্ক থেকে৷ সে বাড়ি, বা গাড়ি কেনার জন্যেই হোক, বা ব্যবসার প্রসারে কিংবা কৃষিকাজে৷ সরকার নানা ছাড় ঘোষণার মাধ্যমে ঋণ নিতে উৎসাহ দিচ্ছে লোককে৷
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন? উত্তরটা খুঁজতে হলে একটু পিছনদিকে তাকাতে হবে৷ ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন বড় অঙ্কের নোট বাতিলের ঘোষণা করলেন, তখন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক উপদেষ্টা ডঃ কৌশিক বসু, হার্ভার্ডখ্যাত অর্থনীতিবিদ, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং থেকে শুরু করে বহু অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ একটাই প্রশ্ন করেছিলেন – ভারতে কী এমন জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে নোট বাতিল করার মতো একটা বড় সিদ্ধান্ত এমন আচমকা নিতে হলো? সাধারণ লোকের মনেও একই প্রশ্ন ছিল, কারণ, নোট বাতিল পরবর্তী সময়ে, টাকার আকালে, ব্যাঙ্ক আর এ টি এম-এর লম্বা লাইনে, নিত্যদিনের দুর্ভোগে স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছিল যে সরকার এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তৈরি ছিল না৷ নেহাতই অপরিণামর্শী এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল এই নোট বাতিল৷
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
সারা বিশ্বেই আজ যোগাসনের কদর৷ পশ্চিমে দেহ-মন চর্চার এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে যোগব্যায়াম বা ‘ইয়োগা’৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী স্কুলগুলোয় যোগাভ্যাসকে বাধ্যতামূলক করতে চান৷ আর সেখানেই সমস্যা!
ছবি: Fotolia/W. Goldswain
স্বাস্থ্য সুরক্ষার দারুণ উপায়
সুস্থ, সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়ামের তুলনা নেই৷ তাই শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে যোগচর্চা যে সাহায্য করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তার ওপর মানসিক চাপ কমাতে যোগাসনের তুলনা হয় না৷ ‘ওয়েলনেস আর ফিটনেস’-এর জগতে ‘ইয়োগা’ আজ এক অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু তাই বলে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক যোগশিক্ষা?
ছবি: MFA+ FilmDistribution e.K./ Jan Schmidt-Garre
বাধ্যতামূলক যোগচর্চা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি চাইছে, যোগচর্চা বা ‘ইয়োগা’-কে ভারতের জাতীয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরার৷ তাই স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রমে যোগব্যায়ামকে বাধ্যতামূলক করতে লবি-ও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ভারতের কট্টর মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এই যোগচর্চার বিরোধী৷
ছবি: AFP/Getty Images/I. S. Kodikara
সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদ?
যোগাভ্যাসের সময় সাধারণত বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দ এবং শ্লোকের ব্যবহার করা হয়৷ সাধনার জন্য ‘ওম’ ধ্বনির প্রচলন সর্বজনসিদ্ধ৷ এছাড়া আসনগুলোর নামেও রয়েছে পৌরাণিক ছোঁয়া৷ তাই স্কুলগুলোয় যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধীদের বক্তব্য স্পষ্ট: এমন কিছু করলে তা ভারতের অ-হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে৷
ছবি: AP
‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’
ভারতের ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, স্কুলের শিশুদের যোগাসন ও সূর্যপ্রণাম করতে বাধ্য করা তাদের ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী৷ তাই সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত তাঁরা৷ ওদিকে, যোগশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য নিয়ে ২১শে জুনকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’ হিসেবে পালন করার পরিকল্পনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যোগ, তুমি কার?
যোগসাধনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা নয়, পাঠক্রমে ‘সূর্যপ্রণাম’ থাকবে কিনা – তা নিয়ে রাজনীতির ‘টাগ অফ ওয়ার’ চলছে এখন৷ অথচ যোগচর্চাকে কি আজ আদৌ ভারতীয় বলা যায়? বিশ্বজুড়ে এক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাভ্যাস৷ যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দু’কোটি মানুষ যোগব্যায়াম করেন – এর মধ্যে আছেন অগণিত খ্রিষ্টান, মুসলমান, ইহুদি এবং নাস্তিকও৷
ছবি: Fotolia/XtravaganT
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান
জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আক্সেল মিশায়েল যোগসাধনার নানা মার্গের সঙ্গে পরিচিত৷ তাঁর কথায়, ‘‘যোগচর্চা আজ যে রূপ নিয়েছে, তা ভারতীয়ও নয়, নয় পশ্চিমেরও৷ এ হলো বহুজাতিক, আন্তঃসাংস্কৃতিক৷ বিভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে এর অবস্থান৷ তাই হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য থেকে যোগসাধনাকে বের করে আনলে চলবে না৷’’
ছবি: Colourbox/George Dolgikh
যোগসাধনা করতে হবে স্বেচ্ছায়
হলিউডের এর ‘ওয়েলনেস গুরু’ দীপক চোপরা মনে করেন, যোগ গোটা মানবজাতির উত্তরাধিকার৷ এছাড়া আধুনিক শরীরনির্ভর, পশ্চিমে জনপ্রিয় ‘হঠযোগ’ ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন নয়৷ তাই যোগব্যায়াম নিয়ে রাজনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে এর গুণাগুণ তুলে ধরা প্রয়োজন৷ তবে সেটা গায়ের জোরে নয়, আর আইন করে তো নয়ই৷
ছবি: Africa Yoga Project
7 ছবি1 | 7
একটা সম্ভাব্য উত্তর উঠে এসেছিল সেই সময়৷ যে বহু লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের কারণে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির নাভিশ্বাস উঠছে৷ মূলত বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলি বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে এবং শোধ দেয়নি৷ তার মধ্যে আছে বিজয় মালিয়ার মতো মহা শিল্পোদ্যোগী, যে বহু কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ রেখে দেশ ছেড়েই ফেরার হয়েছে! এদের অনৈতিকতার ভার চেপেছে ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়ে৷ কাজেই ব্যাঙ্কগুলিতে আর্থিক মজুত বাড়ানোর আশু প্রয়োজন ছিল, ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে৷ এই প্রসঙ্গেই জানা যায়, বিখ্যাত মার্কিন সংস্থা ‘মুডি'র একটি রিপোর্টের কথা৷ বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিভিন্ন দেশেরও ‘ক্রেডিট রেটিং', অর্থাৎ ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা নিরপেক্ষভাবে নির্দিষ্ট করে দেয় পেশাদার সংস্থা মুডি৷ নরেন্দ্র মোদীর সরকার গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মুডি'র কাছে আর্জি জানিয়েছিল ভারতের ক্রেডিট রেটিং কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য৷ কিন্তু সব খতিয়ে দেখে মুডি সেই আর্জি নাকচ রে দেয় মূলত দুটি কারণে৷ এক, ভারতের বিপুল পরিমাণ পুরনো বৈদেশিক ঋণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার কাছে, যা ভারত এখনও শোধ করতে পারেনি৷আর দুই, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির আরও বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণ, যা পরিশোধের কোনও সম্ভাবনাই আর নেই৷
এরকম বেহাল আর্থিক পরিস্থিতিতে, বড় অঙ্কের নোট বাতিল করে, বাজারে থাকা নগদ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে বাধ্য করে, সেই টাকা তোলার ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ব্যাঙ্কের তহবিল ভরানো ছাড়া সরকারের কীই বা করার ছিল৷ আফসোস একটাই, যে সরকারকে তার জন্যে নানাবিধ ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে হলো৷ কালো টাকা সাফ করার অজুহাত দিতে হলো, যদিও, আর্থিক হিসেব অনুযায়ী কালো টাকার মাত্র ৬% নগদ হিসেবে বাজারে থাকে৷ বাকি ৯৪% লগ্নি হয়ে যায় সোনায়, জমিতে, সম্পত্তিতে এবং সুইস ব্যাঙ্কের বেনামি আমানতে৷ ফলে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভরে নেওয়া হলো ব্যাঙ্কের তহবিল৷ এবার সেই টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো ব্যাঙ্কের চলে না৷ তাকে সেই টাকা খাটাতে হবে৷ কীভাবে? মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষকে ঋণ দিয়ে৷ যাঁদের ঋণশোধ না করে বিজয় মালিয়াদের মতো দেশ ছেড়ে পালানোর সামর্থ নেই৷ অথবা বড় শিল্পগোষ্ঠীর মতো সরকারি দাক্ষিণ্যে ঋণ মকুব করিয়ে নেওয়ার জোর নেই৷ তাঁদের সুদের টাকাতেই আবার স্বচ্ছলতা আসবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায়৷
এরপর বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন ঋণ নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন!
নেতা ও প্রশাসন যখন হাতের নাগালে
সোশ্যাল মিডিয়া দক্ষিণ এশিয়ায়ও সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দিচ্ছে৷ মিডিয়া ও লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে এই প্রত্যক্ষ সংলাপের সুযোগ নিচ্ছেন নেতা, মন্ত্রীসহ শীর্ষস্তরের অনেকে৷
ছবি: DW/S. Leidel
সুষমা স্বরাজ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টুইট করে হাতেনাতে ফল পেয়েছেন, এমন ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা কম নয়৷ বিদেশের মাটিতে সংকটে পড়া থেকে শুরু করে মধুচন্দ্রিমার ঠিক আগে সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর পাসপোর্ট অন্তর্ধান – এমন অনেক পরিস্থিতিতে মুশকিল আসান হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বরাজ৷
ছবি: AP
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাপ
আপদকালীন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী বা শীর্ষ আমলার টুইটার অ্যাকাউন্ট মনে রাখা অনেক সময়ে কঠিন হতে পারে৷ তাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিশেষ অ্যাপ চালু করেছে৷ বিদেশে সংকটে পড়লে যে কোনো ভারতীয় নাগরিক এর সাহায্যে নিকটবর্তী দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সংবাদমাধ্যমকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে ফেসবুক, টুইটারকেই নিজের বার্তা পৌঁছে দেবার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন৷ পিএমও বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সজাগ থাকে৷ সরাসরি যোগাযোগ করলে অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়৷
ছবি: twitter.com/narendramodi
শশী থারুর
ভারতের রাজনৈতিক জগতে টুইটার ব্যবহারের পথিকৃৎ বলা যেতে পারে সাবেক কূটনীতিক, লেখক ও কংগ্রেস নেতা শশী থারুরকে৷ বিগত সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনিও সরাসরি অনেক মানুষের সহায়তা করতে পেরেছিলেন৷ অন্যদিকে নানা মন্তব্যের কারণে বার বার সমস্যায় পড়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপর্যয়ের সময় টুইটার
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দক্ষিণে চেন্নাই শহরে ভয়াবহ বন্যায় গোটা শহর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল৷ সরকার, প্রশাসন ও নৌ-বাহিনী সহায়তা ও ত্রাণ তৎপরতার কাজে টুইটার-কে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিল৷ #ChennaiRains এবং #ChennaiRainsHelp হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন জলবন্দি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল৷
ছবি: Imago/Xinhua
সরকারি পরিষেবার ‘টুল’
ভারতীয় রেল বিশ্বের অন্যতম বিশাল ও জটিল এক পরিবহণ নেটওয়ার্ক৷ যাবতীয় সদিচ্ছা সত্ত্বেও যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই৷ ভারতীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু তাই ফেসবুক ও টুইটারের এক সার্বিক প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন৷ এর মাধ্যমে নানা বিষয় নিয়ে সরাসরি রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/Adnan Abidi
সজীব ওয়াজেদ জয়
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুক এবং টুইটারে বেশ সক্রিয়৷ তাঁর ফেসবুক পেজের স্ট্যাটাস প্রায়ই খবর হয়৷ তিনি প্রয়োজন হলে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা এবং তথ্য দেন সেখানে৷