1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্যোগবাংলাদেশ

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে কী করছে বাংলাদেশ?

৩ মে ২০২৫

বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। আরো বেশি ‘থান্ডার অ্যারেস্টার' লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছে তারা। তবে তা কি সময়মতো ঠিক জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে?

বাংলাদেশের আকাশে বজ্রপাতের চিত্র
বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর ৩০০ মানুষ বজ্রপাতে মারা যানছবি: Rayhan Ahmed/Pacific Press/picture alliance

বাংলাদেশে বজ্রপাত বাড়ছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। গেল বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাতে ২৯৭ জন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরও মৌসুমের শুরুতেই বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩০ জন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। জেলাগুলো হলো বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট। বৃহস্পতিবার বজ্রপাতের পূর্বাভাস ছিল দেশের আট জেলায়। জেলাগুলো হলো: ঢাকা, শেরপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ১ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে বজ্রপাতের সতর্কতা দেয়া শুরু হয়েছে। এর আগে এই সক্ষমতা ছিল না। তিনি বলেন, " আমরা দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে এখন এই সতর্কতা দিতে পারি। আমরা উন্নত গাণিতিক মডেল, লাইটনিং ডিটেক্টর এবং জাপানের ইউমোরি স্যাটেলাইটের ডাটা বিশ্লেষণ করে অ্যালার্ট দিচ্ছি।”

এপ্রিল থেকে বজ্রপাতের সতর্কতা দেয়া শুরু হয়েছে: আবুল কালাম

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, "বাংলাদেশে এখন গড়ে প্রতিবছর ৩০০ মানুষ বজ্রপাতে মারা যান। প্রচুর গবাদি পশুও মারা যায়। ২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাতকে বাংলাদেশে দুর্যোাগ ঘেষণা করা হয়েছে।”

" বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রমেঘের এলাকার পরিবর্তন ঘটেছে। উঁচু গাছপালা কেটে ফেলার কারণে এখানে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। আর একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের কারণে অধিকাংশ সময় মাঠে থাকায় কৃষকরা  এর শিকার হচ্ছেন বেশি। বজ্রপাত উচু জায়গায় আঘাত করে নিস্ক্রিয় হয়। মাঠে বা খোলা জায়গায় গাছপালা না থাকায় কৃষক, গবাদি পশু, পথচারিদের আঘাত করে,” বলেন তিনি।

পরিবেশ ও বজ্রপাত বিষয়ক গবেষক এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহেযোগী অধ্যাপক ড.ফেরদৌস আহমদে বলেন, "মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর , যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেক্সাস ও ফ্লোরিডায়ও অনেক বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। অষ্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও বজ্রপাতের হার অনেক বেশি। কিন্তু সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক কম। এর কারণ হলো, ওরা  আগেই পূর্বভাস দিতে পারে। ওই এলাকাগুলো আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ নয়। আর লাইটনিং অ্যারেস্টার অনেক বেশি। তাদের সচেতনতামূলক কার্মসূচিও অনেক এগিয়ে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা নাই।”

তার কথা, "আমাদের এখানে শহরের চেয়ে গ্রামে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক বেশি। কারণ, শহরে উঁচু ভবন আছে। আর ভবনগুলোতে প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু গ্রামে ফাঁকা জায়গা, খোলা মাঠ, ফসলের মাঠ অনেক বেশি। সেখানে আবার এখন উঁচু গাছ নাই। ফলে বজ্রপাতের সময় মাঠে থাকা কৃষক, গবাদি পশু, পথচারী এর শিকার হন।”

"আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে নাইট্রোজেন বেশি নিতে পারছে মেঘ। নাইট্রোজেন যত বেশি নেবে, বজ্রপাত তত বাড়বে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশে বিগত সরকারের সময়ে বজ্রপাত নিরোধে সারাদেশে ৪০ লাখ তালগাছ লাগানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন স্বল্প পরিসরে লাইটনিং অ্যারেস্টার লাগানো হয়েছে।

গবেষক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, "ওই তালগাছ লাগানো হয়েছিল রাস্তার দুই পাশে। মাঠের মধ্যে লাগানো হয়নি। কিন্তু সেটা তো তেমন কাজে আসেনি। আর রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়নি। কারণ, বজ্রপাতে মাঠ ও খোলা জায়গায় যারা থাকেন, তারা এর শিকার হন। আর  লাইটনিং অ্যারেস্টার যা বসানো হয়েছে, তা-ও অপরিকল্পিত। লাগানে হয়েছে জেলা প্রশাসকের অফিস ভবনের উপরে। সেখানে আবার ওয়্যারলেস টাওয়ার আছে৷ সেটা অ্যারেস্টারের চেয়ে উঁচু৷ তাহলেও ওটা কী কাজে আসবে? ওখানে তো অ্যারেস্টার প্রয়োজন নাই। আবার মাঠে যা দেয়া হয়েছে, তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।”

বজ্রপাতের প্রাকৃতিক নিরোধক আমরা নষ্ট করে ফেলেছি: গওহার নাঈম

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘বজ্রপাত আগেও হয়েছে, মানুষ মারাও যাচ্ছে। আর এখন ক্ষতিপূরণ দেয়ার কারণে রিপোর্টেড হচ্ছে বেশি। কিন্তু আমরা বজ্রপাতের যে প্রাকৃতিক নিরোধক, তা নষ্ট করে ফেলেছি। মাঠের  পাশে বাবলা গাছ, তাল গাছ কেটে ফেলেছি। রেইনট্রি গাছ নাই। ফলে মাঠে যখন বজ্রপাত হয়, তখন কিন্তু সেখানে মানুষ আর গবাদি পশু ছাড়া উঁচু কিছু পায় না। ”

"মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিতে বজ্রপাতেরও প্রয়োজন আছে। মাছের উৎপাদনের জন্য দরকার। মাছের ডিমের জন্য দরকার। কারখানায় নাইট্রোজেন লাগে।  বজ্রপাত নাইট্রোজেন উৎপাদন করে,” বলেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানান,  বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ আছে। তাই এটা নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখন পূর্বভাস ও সচেতনতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন," আমরা এখন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সতর্কতা নিয়ে কাজ করছি। এখন যেহেতু  বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে, তাই আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওই পূর্বাভাস সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা  মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে এই পূর্বাভাস সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আর জেলা প্রশাকদের মাধ্যমেও প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি।”

" সারাদেশে অ্যারেস্টার বসানোর একটা প্রকল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি। অ্যারেস্টার বসালে সেটা সব সময় মেনটেইন করতে হয়। এর সঙ্গে মন্ত্রণালায় ও দাতারা যুক্ত আছেন। তারা এর সাম্ভাব্যতা যাচাই করছেন। তার পরে সিদ্ধান্ত হবে,” বলেন তিনি।

আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন," বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলেই ভবন বা ঘরে আশ্রয় নিতে হবে। খোলা জায়গা, ছাতা বা গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না।”

বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে চলছে গবেষণা

01:04

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ