1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বজ্রপাত বাড়বে, বাড়তে পারে প্রাণহানি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ মে ২০২৪

বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা দুইটিই বেড়ে চলছে৷ গরম বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা৷

পদ্মা নদীতে বজ্রবৃষ্টি৷
গরম বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: Rayhan Ahmed/Pacific Press/picture alliance

গত বৃহস্পতিবার প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে ১১ জনের মুত্যু হয়েছে৷ আর চলতি বছরে এপর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন বলে জানিয়েছে ডিজাস্টার ফোরাম৷

আবহাওয়াবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার তাপ বেশি হওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হবে৷ আর একই সঙ্গে বর্ষাকালের দৈর্ঘ বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হবে৷ অন্যদিকে বজ্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যুও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে৷

ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বালাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে আগাম সতর্কতা এবং আবহাওয়া বার্তা খুব জরুরি৷

ডিজাস্টার ফোরামের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও ব্রাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, ‘‘ কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার  নিহতদের মধ্যে তিনজন বজ্রপাতে মারা গেছেন৷ লবণ ক্ষেতে বৃষ্টির সময় লবন ঢেকে দিতে গিয়েছিরেন তারা৷ বৃষ্টি যে আসবে তা আগে থেকেই বলা হচ্ছিল৷ তাদের আগে থেকেই সতর্ক করা যেত৷ তাদের আগেই লবণ ক্ষেত ঢেকে দেয়ার জন্য সচেতন করা যেত , সেটা করা হয়নি৷’’

পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন-এ ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস(জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম)-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ' প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ প্রাণহানি বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে, যার মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে৷ যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে৷ এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে৷

আমরা লাইটেনিং আ্যরেস্টার লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি: মো. মিজানুর রহমান

This browser does not support the audio element.

ওই গবেষণার বাংলাদেশে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘‘বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এবার বজ্রপাতের আশঙ্কা বাংলাদেশে বেশি৷ মেঘের সঙ্গে তাপের একটা সম্পর্ক আছে৷ তাপ বেশি হলে মেঘে কেমিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল প্রোপার্টি বেশি হবে৷’’

তার কথা, ‘‘আমাদের এখানে বর্ষা শুরু হয় আগস্টের শেষের দিকে৷ কিন্তু এবার আগেই শুরু হয়ে গেছে৷ গত মার্চেই ঝড় বৃষ্টি হয়েছে৷ ফলে এবার বজ্রপাত বেশি হতেই পারে৷’’

তার কথা, ‘‘বজ্রপাতে হতাহত বাড়ার পেছনে আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীতা কাজ করেছে৷ বৃটিশরা আমাদের এখানে ফসলের ক্ষেতে বড় বড় কপার দন্ড লাগিয়েছিলো৷ কিন্তু আমরা সেগুলো তুলে অর্থের লোভে বিক্রি করে ফেলেছি৷’’

জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়৷ সেখনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম৷ বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধবংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে৷

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন৷ এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়৷ 

গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বজ্র নিরোধে তাল গাছ লাগানো প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে  কারণ যেখানে তাল গছ লাগানো দরকার আমরা সেখানে লাগাইনি৷ আসলে শুধু তাল গাছ নয় যেকনো উঁচু গাছ বজ্র নিরোধে সহায়তা করে৷ আসলে আমাদের গাছ লাগানোর চেয়ে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে৷ এখন জুন মাসে নড়াইলে তাল গাছের ডোঙার (এক ধরনের নৌকা) হাট বসবে৷ প্রতিবছর সেখানে ১০-১৫ হাজার ডোঙা বিক্রি হয়৷ একটা তাল গাছে দুইটা ডোঙা হয়৷ তাহলে সাত-আট হাজার তাল গাছ কাটা হবে এক মৌসুমে৷ নড়াইলের ডিসি চাইলে কিন্তু এটা বন্ধ করতে পারেন৷ ''

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম জানান, ‘‘বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুইটি৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা৷ হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না৷ এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে৷ ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যে সব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়৷ মানুষ না থাকলে  মাঠের গবাদি পশু৷ ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদি পশুও মারা যায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অনেকে মনে করেন ওই সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেয়া নিরাপদ৷ আসলে এটা ঠিক নয়৷আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্খাপনার নিচে৷’’

এই সময়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে বজ্রপাত অবধারিত: হাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

তার মতে,  ‘‘সানাতন পদ্ধতিতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার লাগালে বজ্রনিরোধ করা যায়৷ এতে খরচ কম৷ একটি বাড়িতে ১০ হাজার টাকা খরচ করেই লাগানো যায়৷ আর সরকার হাওড় এবং খোলা জায়গায় এগুলো লাগানোর উদ্যোগ নিদে পারে৷’’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিবছর তিনশোরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে৷ এটা এলার্মিং৷ আমরা লাইটেনিং আ্যরেস্টার লাগানোর একটা পরিকল্পনা নিয়েছি৷ কিন্তু এটা এখানো প্ল্যানিং কমিশন ওটা পাশ করেনি৷ আর কত জায়গায় এটা লাগাতে হবে তারও কোনো সমীক্ষা নেই৷  এটা বেশ কষ্টলি৷ আর আমাদের যে আশ্রয়কেন্দ্র সারাদেশে আছে সেগুলোকে বজ্রপাতের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করছি৷ নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও হবে৷ তবে সবগুলোই আন্ডার প্রসেস বলতে পারেন৷’’

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, তারা বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পাঠাতে আটটি বজ্রপ্রবণ জেলায় বজ্রপাত শনাক্তকরণ সেন্সর স্থাপন করেছে৷ আর একটি পাইলট প্রকল্পের  কাজ চলছে যাতে নির্দিষ্ট এলাকায় উপস্থিত লোকজনকে বার্তা পাঠানো যায়৷

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘কুমিল্লা, নোয়াখালি, যশোর , কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগ আগে বজ্রপ্রবণ ছিল৷ এখন সারাদেশেই বজ্রপাত হয়৷ আর এই সময়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে বজ্রপাত অবধারিত৷ তাই মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে৷’’

তার কথা, ‘‘এই সময় তাপ বেশি থাকার কারণে বজ্র মেঘ তৈরি হয় বেশি৷ আর এই মেঘের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ