বছর ঘুরে আবারো এসে গেল বড়দিন৷ আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা৷ কিন্তু এই ক'টা ঘণ্টা কিছুতেই যেন পার হতে চাইছে না৷ ছোট্ট মেয়েটি তাই বাইনোকুলারে চোখ রাখলো৷ দূরের চাঁদটাকে কাছে, আরো কাছে টেনে নিল সে৷ হঠাতই তার চোখ পড়লো বুড়োটার দিকে৷
বিজ্ঞাপন
আরে চাঁদে তো বুড়ি নয়, বাস করে এক বুড়ো! ছোট্ট একটা কুড়েঘরে, একদম একা৷ কথা বলার কেউ নেই – না আত্মীয়স্বজন, না কোনো বন্ধু৷ তাই একা একাই ঘুরে বেড়ায় বুড়ো, বেঞ্চে বসে একাই সজল নয়নে তাকিয়ে থাকে আমাদের এই পৃথিবীর দিকে...৷
মেয়েটা ভাবে, আহা রে, বড়দিনেও একা চাঁদের বুড়ো? এমন একটা দিনেও ওর ওখানে কোনো হৈচৈ নেই, নেই আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া৷ তাহলে তো ওকে উপহার দেয়ারও কোনো মানুষ নেই৷ না, এটা তো হতে পারে না...৷ উপহার ছাড়া বড়দিন আবার হয় নাকি?
কিন্তু চাঁদের বুড়োর জন্য উপহার আমাদের এই ছোট্ট বন্ধুটি পাঠাবে কী করে? মেয়েটা ভাবতে থাকে৷ সাদা কাগজে ছবি একে, লেখে ‘ভালোবাসি'৷ তারপর চাঁদের দিকে চিঠিটা ধরে দাঁড়ায়৷ কিন্তু বুড়ো ওকে দেখতেই পারে না৷ এবার কাগজ দিয়ে একটা প্লেন বানায় মেয়েটি, ছুড়ে দেয় চাঁদের দিকে৷ তীর-ধনুক দিয়েও চেষ্টা করে তার চিঠিটা চাঁদের বুড়োকে পাঠাতে৷ কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না৷ বড্ড মন খারাপ হয়ে যায় মেয়েটার৷
ওদিকে বাড়িতে এর মধ্যেই বড়দিনের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, উপহার দেয়া৷ ....আরে, বাবা যে এবার তাকে আরো শক্তিশালী একটা দুরবিন দিয়েছে!
জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব পালন
যে-কোনো উৎসব মানেই আনন্দ আর তা সবার জন্যই৷ চলুন এই ছবিঘরের মধ্য দিয়ে জানা যাক কে কিভাবে উৎসবের আনন্দ গ্রহণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিসমাস ট্রি
যে-কোনো উৎসব মানেই হৈচৈ, আনন্দ, উপহার, কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া৷ তবে তা যদি হয় ধর্মীয় কোনো উৎসব তাহলে স্বাভাবিকভাবে সবকিছুর মাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়৷ জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব নানাজনে নানাভাবে উদযাপন করে৷ বেশিরভাগ মানুষই অতি যত্নে ক্রিসমাস ট্রি সাজান৷ আর সবাই অপেক্ষা করে থাকে ক্রিসমাস ট্রির নীচে রাখা উপহারের জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আস্ত মাছ ভাজি
যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ২৪ ডিসেম্বর রাতে৷ তাই এ রাতকে পবিত্র রাত বলা হয় অর্থাৎ তখন থেকে বড়দিনের মূল উৎসব শুরু হয়ে যায়৷ জার্মানিতে সেদিন রাতে পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী মাছ খাওয়া হয়, বিশেষ করে কারফেন মাছ, তবে সব অঞ্চলে নয়৷ আস্ত মাছটি ওভেনে বেক করে পরে কেটে কেটে পরিবেশন করা হয়৷ এবং এ রাতেই উপহারগুলো সুন্দর প্যাকেটে ভরে ক্রিসমাস ট্রির নীচে সাজিয়ে রাখা হয়৷
ছবি: Fotolia/Teressa
রাজহাঁসের রোস্ট
বড়দিন পারিবারিক উৎসব৷ তাই যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে তারা উৎসবের দিনগুলো একসাথে উদযাপন করতে চায়৷ খাবারের আয়োজন হয় বেশ ঘটা করে৷ সেদিন খাওয়া হয় বিশাল আকারের ওভেনে রোস্ট করা রাজহাঁস৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ রেসিপি৷ রাজহাঁসের পেটের ভেতরে যে মশলা বা পুর ভরা হয় তার ওপরই নির্ভর করে রাজহাঁসের রোস্টের স্বাদ৷
ছবি: picture-alliance/Tobias Hase
ক্রিসমাসের দ্বিতীয় দিন
আয়োজনের দিক থেকে এই দিনটিও অনেকটা ২৫ তারিখের মতো৷ তবে যাদের পরিবারের বেশিরভাগ মানুষ কাছাকাছি থাকেন তারা সাধারণত দুদিন দু বাড়িতে যান, অর্থাৎ একদিন মা-বাবার বাড়ি আর পরের দিন শ্বশুর বাড়ি৷ অথবা একদিন নিজেরা যায়, পরের দিন অন্যরা আসে৷ তবে দুদিনই খাবারের আয়োজনে থাকে উৎসবের ছোঁয়া৷ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি প্রচুর মিষ্টি খাবারও থাকে৷ বিশেষ ধরণের কেক, বিস্কুট কত কি!
ছবি: Erika Klein
উপহার
বড়দিন উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের পছন্দের উপহার দেয়ার জন্য আগে থেকে টাকাও জমিয়ে রাখেন৷ জার্মানিতে একটা রীতি বেশ প্রচিলিত, বড়দিন উপলক্ষ্যে কি পেতে চান বা কি প্রয়োজন তেমন একটি তালিকা তৈরি করে রাখেন এবং সেটা দেখেই পরিবারের অন্যরা উপহার কিনে আনেন৷ যদি কারো পছন্দ না হয়, বদল করে আনার সুবিধার্থে কেনার রশিদটিও সাথে দিয়ে দেয়৷ বলা যায়, বাড়ির বাচ্চারা ওদের নানু-দাদুর কাছ থেকে সবচেয়ে দামি উপহারটি পেয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
তরুণ প্রজন্ম
জার্মানরা ঐতিহ্যপ্রিয়, তবে তা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে তেমন লক্ষ্য করা যায় না৷ ওরা অনেকেই এতো ঝামেলায় যেতে চায় না৷ তারা ঐতিহ্যবাহী খাবারের চেয়ে হালকা বা সহজ উপায়ে তৈরি খাবারই বেশি পছন্দ করে থাকে৷ যেমন বিদেশি খাবার রাকলেট বা ফনড্যু৷ যা আগে থেকে তৈরি বা প্রস্তুত না করে অতিথি আসার পরে একসাথে বসে ঝটপট করে ফেলা যায় এবং গরম গরম খাওয়া যায়৷
শীতকালীন হলিডে
অনেক জার্মান বড়দিনের ঝামেলায় না যেয়ে চলে যান অন্য কোথায়ও ছুটি কাটাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে৷ জার্মানিতে এখনো তুষারপাত হয়নি৷ কাজেই এবারও ‘সাদা বড়দিন’ হচ্ছে না৷ তাই একসাথে কয়েকদিন ছুটি থাকায় অনেকেই স্কিয়িং করতে চলে যায় সুইজারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ার কোনো পর্বতমালায়৷
ছবি: Fotolia/Gorilla
চলো যাই গরমের দেশে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বের আবহাওয়ায় এসেছে বিরাট পরিবর্তন৷ জার্মানি শীতপ্রধান দেশ৷ বছরের এ সময়ে যতটা শীত পড়ার কথা তত শীত না পড়লেও যথেষ্টই শীত৷ গত বছরও ছিলো প্রচণ্ড ঠান্ডা৷ তাই এই শীত থেকে পালাতে অনেকেই বড়দিনের ছুটিতে এমন কোনো দেশে চলে যায় যেখানে হালকা পাতলা পোশাক পরে যথেষ্ট সূর্যের তাপ গ্রহণ করা সম্ভব৷ শীতের বাকি দিনগুলোর জন্য রিজার্ভে রেখে দিতে পারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’৷
ছবি: picture alliance/dpa
বড়দিনে বিদেশিরা কি করেন?
আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো উৎসবই আর শুধু নিজস্ব উৎসব হিসেবে নেই৷ জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলমানের বসবাস৷ তাছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও রয়েছেন৷ তারাও ছুটির দিনগুলোতে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলিত হন, খাওয়া-দাওয়া করেন৷ করেন উপহার আদান-প্রদান৷ আসলে ‘ধর্ম যার যার হলেও উৎসব কিন্তু সবার’ – এই রীতিই মানুষের মাঝে লক্ষ্য করা যায়৷ অনেক বিদেশির বাড়িতেও মোমবাতি বা আলোকসজ্জা দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
মাথায় একটা বুদ্ধি আসে মেয়েটির৷ নতুন দুরবিনটা একটা বাক্সে পুরো অনেকগুলো গ্যাসবেলুন দিয়ে উড়িয়ে দেয় সে৷ আর দেখতে দেখতে সেটা ঠিক পৌঁছে যায় চাঁদের বুড়োর কাছে৷ কী আনন্দ৷ পৃথিবীর ছোট্ট বন্ধুর কাছে থেকে উপহার পেয়ে হাসি ফোটে মুখে৷ বাক্স থেকে দুরবিনটা বের করে চোখ রাখতেই, ধীরে ধীরে বড়দিনের রঙে রাঙা পৃথিবীটা তার চোখের সামনে চলে আসে৷ আর তারপর খুঁজতে খুঁজতে ছোট্ট বন্ধুটিকেও দেখতে পেয়ে যায় আমাদের চাঁদের বুড়ো৷ চোখে জল আসে, বলে ‘আমিও ভালোবাসি'৷
বন্ধুরা, হোক ‘জন লুইস’ কোম্পানির বিজ্ঞাপন৷ তবু ভিডিও-টা দেখলেন? ইউটিউবে #ManOnTheMoon নামের এই ভিডিও-টি দেখে আপনার কাকে বলতে ইচ্ছে করছে ‘ভালোবাসি’?