ধরুন আপনি ঢাকার গুলিস্তান মোড় বা কলকাতার ধর্মতলা মোড়ে যানজটে আটকে আছেন৷ হঠাৎ দেখলেন রাস্তা দিয়ে একটা বাঘ ছুটে আসছে! কেমন লাগবে আপনার? আপনি নিশ্চয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বেন? হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই ঘটেছে কাতারের রাজধানী দোহায়৷
বিজ্ঞাপন
বেঙ্গালুরুতে কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে চিতাবাঘ ঘুরে বেড়ানো নিয়ে ভারতে হইচই পড়ে গিয়েছিল৷ সিলিকন সিটির একটি স্কুলে চিতাবাঘ ঢোকায় ঐ অঞ্চলের সব স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ৷ তবে দোহাতে যা ঘটেছে, তা দেখে বেঙ্গালুরুর স্কুল কর্তপক্ষ এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে, এমন ঘটনার সাক্ষী একমাত্র তাঁরাই নন৷ এর চেয়েও ভয়ানক ঘটনা ঘটতে পারে৷
মঙ্গলবার দোহার এক্সপ্রেসওয়ের ব্যস্ত রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘটি৷ ঘটনাটি একজন প্রত্যক্ষদর্শী ক্যামেরাবন্দি করেন৷ মাত্র কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে৷ ভিডিওটা ক্লিক করলেই দেখবেন, যানজটে ঠাসা রাস্তার মধ্যে দিয়ে কীভাবে একটা বাঘ ছুটে বেড়াচ্ছে৷ হতভম্ব বাঘমামা হয়ত রাস্তা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছিল৷
শেষ পর্যন্ত এক ব্যক্তি পোষা কুকুর ধরার মতো একটা গাড়ির নীচ থেকে বাঘটিকে বার করে এনেছেন৷ সেই দৃশ্যও রয়েছে ভিডিওতে৷ বাঘটার গলায় একটা শিকল বাঁধা, অর্থাৎ বাঘমামা কারুর পোষ্য ছিল৷ সম্ভবত ট্রাকে বা গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কোনোভাবে খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল বাঘটি৷
ইতিমধ্যে অবশ্য বাঘটিকে ধরা গেছে এবং বাঘমামার মালিককেও শনাক্ত করেছে দোহার কর্তৃপক্ষ৷
আসলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে আর্থিক প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য বাঘ, চিতাবাঘ বা সিংহের মতো বন্যপ্রাণী পোষা নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু এই ভিডিওটি দেখলে আপনি চমকে উঠতে বাধ্য৷ ভিডিওটি দেখে বলুন তো, ঠিক বলছি কিনা!
ডিজি/এসিবি
বিপদে আছে বাঘ
বাঘ ভয়ংকর, বাঘ হিংস্র, বাঘের থাবার কবলে পড়লে কারো রক্ষা নেই – সবই ঠিক৷ তারপরও সারা পৃথিবীর বাঘই পড়েছে ভীষণ বিপদে৷ ‘আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস’-এ পাওয়া তথ্য বলছে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে বাঘ৷
বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে
সারা বিশ্বেই বাঘের সংখ্যা খুব দ্রুত কমছে৷ এক শতক আগে যেখানে এক লাখের মতো বাঘ ছিল, সেখানে এখন আছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার বাঘ! আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে তিনটি একেবারে উধাও৷ তাছাড়া শুধুমাত্র সুমাত্রা, সাইবেরিয়া, রয়েল বেঙ্গল, মালয়, ইন্দোচীন এবং দক্ষিণ চীনের বাঘই টিকে আছে৷ ছবির এই বাঘটাও এখন আর জঙ্গলে নেই, শুধু চিড়িয়াখানাতেই আছে এরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Joe
বাঘ থাকবে কোথায়?
বাঘের বিচরণ ছিল এমন জঙ্গলের প্রায় ৯৩ শতাংশই এখন মানুষের দখলে৷ কোথাও শুরু হয়েছে চাষবাস৷ কোথাও গড়ে উঠেছে জনবসতি৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে বসবাসের জায়গার অভাবেই হয়ত বাঘ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে৷ ছবির এই সাদা রঙের বিরল বেঙ্গল টাইগারের হয়ত আর চিহ্নই থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/W. Layer
রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও মহাবিপদ
জলবায়ু পরিবর্তন বাঘের জন্যও বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের তো বিপদ দিন দিন বাড়ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়ছে, ততই ছোট হয়ে আসছে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ঘর’ সুন্দরবন৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে যেমন আর মাত্র ১০০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশিষ্ট আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Kundu
শিকারের সময়...
শিকারের সময় বাঘ একা থাকতে পছন্দ করে৷ সাধারণত রাতেই খাদ্যের খোঁজে শিকারে বের হয় বাঘ৷ অন্ধকারে শিকার তাকে দেখবে না, চুপি চুপি সামনে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড়টা কামড়ে ধরা যাবে – এ সব আবার বাঘমামা খুব ভালো বোঝে!
ছবি: Getty Images/N. Asfouri
সাঁতারু বাঘ
বাঘের হাত থেকে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দেয়া রীতিমতো আহাম্মকি৷ বাঘের পানি খুব পছন্দ৷ সাঁতারেও খুব পটু সে৷ সুতরাং পানিতে ঝাঁপ দেয়া শিকারকে ধরা বাঘের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়৷
ছবি: Imago
বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় মানুষ নেই...
বাঘ কিন্তু মানুষের মাংস খেতে পছন্দ করে না৷ বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় হরিণ, মহিষ, ভালুক, কুকুর, চিতা, কুমির, এমনকি অজগর সাপও আছে, কিন্তু মানুষ নেই৷ তারপরও কেন বাঘ মানুষ শিকার করে? ভয়ে৷ যখন মনে হয়, মানুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে তখন নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে উল্টো নিজেই আক্রমণ করে বসে বাঘ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Scheidemann
বংশবৃদ্ধির সময়
যেসব অঞ্চলে আবহাওয়া একটু গরম, সেখানে নভেম্বর থেকে এপ্রিল – এই সময়টাই বাঘের প্রজননের জন্য আদর্শ সময়৷ শীতপ্রধান দেশে শীতেই বাচ্চা নেয় বাঘ৷ বাচ্চা সাধারণত ১০৩ দিন মায়ের পেটে থাকে৷ বাঘিনী একসঙ্গে তিন থেকে চারটি বাচ্চা দেয়৷ বয়স আট সপ্তাহের মতো হলেই বাঘের ছানারা মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে৷ দেড় বছরের মাথায় ছানা বাঘ একা একা শিকার শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রু
বাঘের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ কিন্তু মানুষ৷ মানুষই তাদের চক্ষুশূল৷ হবে না কেন! জঙ্গল দখল করে করে বাঘের বসবাসের জায়গা ছোট করছে মানুষ৷ নানা ছুতোয় বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকারও করে মানুষ৷ বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রুও তাই মানুষ৷