গত পাঁচ বছরে বিশ্বের ২৭টি বড় শহরে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমেছে৷ কিন্তু তালিকার দিকে একটু ভালো করে নজর দিলে বোঝা যায়, এখনো উদযাপনের সময় আসেনি৷
বিজ্ঞাপন
এই তালিকায় আছে বার্লিন, লন্ডন, লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক এবং প্যারিসের নাম৷ পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন নিঃসরণের হার অন্তত ১০ শতাংশ কম৷ বৃহস্পতিবার সান ফ্রান্সিসকোতে এক জলবায়ু সম্মেলনে দেশগুলো এ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে৷
জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো এবং গণপরিবহনের আওতা বাড়ানোতেই এই মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বের বড় শহরগুলোর জোট সি-৪০-এর নেতারা৷ প্যারিসের মেয়র আনে হিডালগো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভালো কোনো খবর দিতে পারা’ খুব আনন্দের ব্যাপার৷
গ্যাস নিঃসরণ কমলেও এর ফলে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে না৷ ফলে হিডালগো মনে করেন, ‘‘আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি পরিবেশের ক্ষতি না করেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উন্নয়ন সম্ভব৷’’
কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা
জার্মানি ও উত্তর ইউরোপের বেশ কিছু স্থানে কৃষকরা গত কয়েক মাসে প্রচণ্ড গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া মোকাবেলায় হিমসিম খেয়েছে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, গরমে এমন আবহাওয়া এখন প্রায়ই থাকবে, তাই প্রয়োজন অভিযোজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
কমেছে জলীয় উপাদান
বার্লিনের উত্তরে গাড়িতে ৯০ মিনিট গেলে হান্স-হাইনরিশ গ্র্যুনহাগেনের আবাদী জমি৷ তিনি দেখলেন যে, তাঁর ফসল বেড়ে উঠতে এবার বেশি সময় লাগছে৷ কয়েক বছর আগেও যেখানে অক্টোবরের শুরুর দিকেই তিনি আলু তুলতেন, এখন তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে৷ তাঁর মতে, এর কারণ শীতের কুয়াশা পড়তে দেরি হওয়া৷
ছবি: DW/T. Walker
এক বস্তা আলু
গ্র্যুনহাগেন একটি চারা থেকে এ পরিমাণ আলুর ফলন আশা করেন৷ কিন্তু যেহেতু ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি হলে এরা বিবর্ণ হয়ে পড়ে, তাই ভালো আলুর ফলন কঠিন হয়ে পড়ছে৷ সেজন্য প্রচুর পানি খরচ করতে হচ্ছে৷ তারপরও এই গ্রীষ্মে তিনি অর্ধেক ফলন ঘরে তুলছেন৷
ছবি: DW/T. Walker
নানা শস্য
এই কৃষক নানা রকমের শস্য উৎপাদন করেন৷ অনেক শস্যেরই দ্রুত অঙ্কুর বের হয় এবং তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে৷ এতে দেরিতে আসা কুয়াশায় এদের ফলন খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ যেখানে সম্ভব, সূর্যের তাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তিনি এখন শস্যের বহুমুখীকরণ করছেন৷
ছবি: DW/T. Walker
কুয়াশার কামড়
আঙ্গুর চাষিরাও বিপাকে পড়েছেন৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের যেসব জায়গায় ওয়াইন তৈরি হয়, সেখানে উজ্জ্বল দিনের আলোর কারণে অঙ্কুর দ্রুত বের হয়৷ কিন্তু রাতে তাপমাত্রা অনেক কমে গেলে এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে৷ কুয়াশার কামড়ে এদের মৃত্যুও হতে পারে৷
ছবি: DW/T. Walker
আঙুর ঘরে তোলা
লম্বা গ্রীষ্মকাল মানে আঙুর পাকবেও দ্রুত৷ তার মানে, ফল তুলতেও হবে তাড়াতাড়ি৷ এমনকি বেশি উষ্ণ তাপমাত্রায় এদের স্বাদও বদলে যায়৷ অথচ ওয়াইন তৈরি প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত ঠান্ডা তাপমাত্রা বজায় রাখতে প্রযুক্তির বিশেষ ব্যবহার প্রয়োজন হয়৷ তাই চাষিরা রাতে অথবা খুব ভোরে, তাপমাত্রা বেড়ে যাবার আগে আঙুর তুলে ফেলতে চেষ্টা করেন৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
মৃত্তিকার যত্ন
ভূমির প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে জার্মান চাষিরা আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁদের কথা হলো, যেই ভূমি দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটায়, তাকে তুষ্ট রাখতে হলে প্রচুর গাছ ও ঝোঁপ লাগাতে হবে, যেন শুষ্ক বাতাস না আসে৷
ছবি: Sarah Selig
মাটির পুষ্টি
জার্মানির অরগ্যানিক ফুড ইন্ডাস্ট্রি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফেলিক্স সু ল্যোভেনস্টাইন বলেছেন, মাটিতে হিউমাস ও অন্য উদ্ভিদ অণু কতটা আছে, তার ওপর এর পুষ্টি নির্ভর করে৷ এসব উপাদান যত বেশি থাকবে, তত মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বাড়বে৷ তখন এটি খরা ও অত্যাধিক বৃষ্টি উভয়কেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
7 ছবি1 | 7
শূন্যস্থান পূরণ
বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে সান ফ্রান্সিসকোর এই সম্মেলনে যোগ দেন কয়েক হাজার রাজনীতিবিদ, জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্যবসায়ী নেতারা৷
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণে সচেষ্ট তারা৷ সবচেয়ে বেশি গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের তালিকায় চীনের পরই আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম৷
প্যারিস চুক্তি অনুসারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয় দেশগুলো৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শিগগিরই হয়তো বৈশ্বিক উষ্ণতা এ লক্ষ্য অতিক্রম করতে পারে৷
অনুপস্থিত উন্নয়নশীল দেশগুলো
তবে বড় শহরগুলোর সাফল্যে এখনই খুশি হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা বলছেন, যে ২৭টি শহর নিঃসরণ কমানোর দাবি করছে, সেসব শহর মিলিয়ে বাস করেন মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ৷ উন্নয়নশীল কোনো দেশের কোনো শহরই এই তালিকায় নেই৷
সি-৪০ নেতারাও এই দুর্বলতা বিষয়ে অবগত আছেন৷ হিডালগো বলোন, ‘‘উন্নয়নশীল শহরগুলোসহ যেসব জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে পরিবেশ ও জ্বালানি নিরাপত্তা প্রয়োজন, সেদিকে আমাদের সবার আগে নজর দিতে হবে৷’’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক এলাকায় কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ ভবিষ্যতে খাদ্য চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপায় হতে পারে হাইড্রোপনিকস বা জলচাষ৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
২০৫০ সালে বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যার সঙ্গে আরও তিনশ কোটি মানুষ যোগ হবে৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের কোনো অঞ্চল ডুবে যাচ্ছে, আর কোথাও দেখা দিচ্ছে খরা৷ ফলে ফসল উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি খুঁজতে হচ্ছে, বিশেষ করে খরাপ্রবণ এলাকায় কীভাবে শস্য ফলানো যায়, তা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে হাইড্রোপনিকস বা জলচাষ৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
সুবিধা
অল্প জায়গায় চাষ আর বেশি উৎপাদন – হাইড্রোপনিকস দিয়ে দুটোই সম্ভব৷ এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই ফসল উৎপাদন করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. De Melo Moreira
কৃত্রিম উপায়
আলো ও তাপের ব্যবস্থা করে ফসল উৎপাদন করা হয়৷ আর ফসল যেন দ্রুত বাড়তে পারে, সেজন্য শস্যের মূলে স্প্রেসহ অন্যান্য উপায়ে পুষ্টিকর উপাদান প্রয়োগ করা হয়৷ এভাবে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
কম পানি, সার
হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে পানি রিসাইকল করা যায়৷ ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে যত পানি প্রয়োজন হয় তার মাত্র ১০ শতাংশ দিয়েই হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ফসল ফলানো যায়৷ এছাড়া একবার ব্যবহৃত হওয়া পুষ্টিকর উপাদান উবে যায় না বলে সারও বেশি প্রয়োজন হয় না৷ আর মাটির সংশ্লিষ্টতা না থাকায় কীটনাশকেরও দরকার পড়ে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
খাড়াভাবে উঠে যাওয়া
ছবি দেখে হয়ত কিছুটা বুঝতে পারছেন৷ হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে সবজির চারা একটির উপর আরেকটি বসিয়ে দেয়া যায়৷ ফলে অল্প জায়গায় বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Photoshot
অসুবিধা
হাইড্রোপনিকস ব্যবস্থায় প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান এবং অবকাঠামো প্রয়োজন হয়৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে যেমন আলো আর তাপ সূর্য থেকে বিনামূল্য পাওয়া যায়, জলচাষ ব্যবস্থায় টাকা খরচ করে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হয়৷ আর কোনো কারণে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
ছবি: Imago/View Stock
ব্যবহার বাড়ছে
হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে সব সবজি জন্মানো সম্ভব৷ তবে শসা, সবুজ সালাদ, গোলমরিচ, টমেটো, ঔষধি গাছ – ইত্যাদির ফলন ভালো হয়৷ ২০১৬ সালে হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ২১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়েছিল৷ প্রতিবছর সেটি সাত শতাংশ হারে বাড়ার কথা৷