নরেন্দ্র মোদীর নামে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে গুজরাতে। শুরু হয়েছে বিতর্কও।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হলো ভারতে। বুধবার গুজরাতের আমদাবাদের অদূরে নতুন স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন দেশের রাষ্ট্রপতি। এক লাখ ১০ হাজার আসন বিশিষ্ট ওই স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। বিতর্ক আরো বেড়েছে স্টেডিয়ামের দুইটি প্যাভেলিয়ন এন্ডের নাম নিয়েও।
আমদাবাদের অদূরে মোতেরা স্টেডিয়াম অনেক দিন ধরেই ছিল। এতদিন সেই স্টেডিয়ামের নাম ছিল ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলের নামে। বছরকয়েক আগে সেই স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ শুরু হয়। গুজরাত সরকার এবং গুজরাতের ক্রিকেট বোর্ডের তরফে জানানো হয়, বিশ্বের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম তৈরি হবে সেখানে। বুধবার তার উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের সময় জানা যায়, স্টেডিয়ামের নাম বদলে নরেন্দ্র মোদী করা হয়েছে। তবে স্টেডিয়াম ঘিরে যে স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে, তা বল্লভভাই প্যাটেলের নামেই আছে।
ক্রিকেটের তীর্থস্থান: লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড
ক্রিকেটের তীর্থস্থান লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড এর অবস্থান লন্ডনে৷ লর্ডসে গিয়ে ম্যাচ উপভোগ করার স্বপ্ন প্রত্যেক ক্রিকেটভক্তেরই থাকে৷ ডয়চে ভেলের অমৃতা পারভেজ এই স্টেডিয়াম এবং সেখানকার জাদুঘরের ছবিগুলো তুলে ধরছেন পাঠকদের জন্য৷
ছবি: A. Parvez
নাম কেন লর্ডস?
প্রতিষ্ঠাতা টমাস লর্ড-এর নামে স্টেডিয়ামটির নাম রাখা হয় লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, অর্থাৎ লর্ড-এর স্টেডিয়াম৷
ছবি: A. Parvez
কত বড়?
স্টেডিয়ামটির মাঝখান থেকে উত্তর-পশ্চিমের আয়তন ২৩০ মিটার৷ এর আসন সংখ্যা ২৮ হাজার৷
ছবি: A. Parvez
উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস
ব্রিটিশ এই খেলোয়াড় ডাব্লিউ জি, দ্য ডক্টর, চ্যাম্পিয়ন বা ‘ওল্ড ম্যান’ নামে পরিচিত৷ ১৮৬৫ থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেছেন৷ লম্বা দাড়ির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন তিনি৷ লর্ডসে ঢোকার মুখে গ্যালারির বাইরেই চোখে পড়বে কিংবদন্তি ক্রিকেটারের এই ভাস্কর্য৷
ছবি: A. Parvez
ট্যুর
ম্যাচ চলাকালীন লর্ডসে কোনো ট্যুর হয় না৷ তখন ঘুরে ঘুরে দেখা বন্ধ থাকে৷ ঘুরে দেখার টিকেটের কাউন্টার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে৷ দিনে ৪ থেকে ৫টা ট্যুর হয়৷ এমসিসি জাদুঘর থেকে ট্যুর শুরু হয়ে শেষ হয় গ্যালারিতে গিয়ে৷ ট্যুরে ক্রিকেটের ৪০০ বছরের ইতিহাস, অ্যাশেজের ছাই, বিশ্বকাপ ট্রফি দেখা যায়৷ প্রতিটি ট্যুরের সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট৷
ছবি: A. Parvez
টিকেটের দাম
লর্ডসে একা ঘুরতে গেলে পূর্নবয়স্কদের জনপ্রতি টিকেট ২০ পাউন্ড৷ চার জনের একটি পরিবার বা গ্রুপের টিকেটের দাম ৪৯ পাউন্ড৷ তবে বয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়৷
ছবি: A. Parvez
লং রুম
এটি লং রুমের ছবি নয়৷ কারণ, লং রুমের ছবি তোলা নিষেধ৷ ড্রেসিং রুম থেকে লং রুমের মধ্য দিয়েই খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশ করেন৷
ছবি: A. Parvez
ড্রেসিং রুমের বারান্দা
মাঠের এই দৃশ্যটি ড্রেসিং রুমের বারান্দা থেকে দেখা যায়৷ খেলোয়াড়রা মাঠে নামার আগে এখানেই তৈরি হয়ে বসে থাকেন, খেলা দেখেন৷
ছবি: A. Parvez
দর্শকদের জন্য খানা-পিনা
দীর্ঘ সময় ধরে ক্রিকেট উপভোগ করার সময় কিছু খাবার-দাবার বা পানীয় না হলে কি চলে? গ্যালারির ঠিক এখানেই রয়েছে সেই ব্যবস্থা৷
ছবি: A. Parvez
১৮১৪ থেকে ২০১৪
২০১৪ সালে লর্ডসের দুই শত বার্ষিকী উপলক্ষে এখানে এক বিশেষ ম্যাচের আয়োজন করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৫ জুলাই সেই ম্যাচে এমসিসি একাদশের অধিনায়ক ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, তাঁর দলের বিপক্ষে ছিল শেন ওয়ার্নের বিশ্ব একাদশ৷
ছবি: A. Parvez
এমসিসি জাদুঘর
এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ক্রীড়া জাদুঘর৷ ১৮৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের অনেক স্মারক রয়েছে এখানে৷
ছবি: A. Parvez
লেখা আছে তামিম ইকবালের নাম
লর্ডসে যারা শতক হাঁকিয়েছেন বা নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট, তাদের নামগুলো এখানে একটু পর পর ভেসে ওঠে৷ তামিম ইকবালের নামও দেখা যায় সেখানে৷
ছবি: A. Parvez
জাদুঘরের নীচতলা
জাদুঘরটি দোতলা৷ নীচের তলায় একটি টিভিতে চলতে থাকে ইংল্যান্ড জিতেছে এমন সব ম্যাচ৷ আর রয়েছে লর্ডসে রেকর্ড গড়া খেলোয়াড়দের ব্যবহৃত জার্সি, ব্যাটসহ অনেক জিনিস৷ ডন ব্র্যাডম্যান থেকে শুরু করে শেন ওয়ার্ন, সাঙ্গাকারাসহ অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারের ক্রিকেট সরঞ্জাম আছে এখানে৷
ছবি: A. Parvez
শচীনের জন্য বিশেষ সম্মান
সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট সরঞ্জাম রয়েছে শচীন টেন্ডুলকারের৷ আলাদা করে সম্মান জানানো হয়েছে এই ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’কে৷
ছবি: A. Parvez
অ্যাশেজ ট্রফি
অ্যাশেজ টেস্ট সিরিজ হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে৷ এর একটি ইতিহাস রয়েছে৷ ছোট্ট এই যে ট্রফিটি, এটাকে বলা হয় উর্ন অর্থাৎ ছাইদান বা ভস্মাধার, যার নামে এই টেস্ট সিরিজের নামকরণ৷ টেরাকোটার তৈরি ৬ ইঞ্চি এই ট্রফিটি আনুষ্ঠানিক ট্রফি নয়৷ তবে এর ভেতরেই ছিল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচের বেইলসের ছাই৷
ছবি: A. Parvez
অ্যাশেজ ট্রফির রেপ্লিকা
অ্যাশেজ টেস্ট সিরিজ জয়ী দলের হাতে যে ট্রফিটি দেখা যায়, এটি সেটি৷ মূল অ্যাশেজের রেপ্লিকা এটি৷
ছবি: A. Parvez
বিশ্বকাপ
এমসিসি জাদুঘরে গেলে দেখতে পাবেন বিশ্বকাপের এই ট্রফিটি৷
ছবি: A. Parvez
লর্ডসের স্লোপ
লর্ডসের মাঠের বিশেষত্ব হলো এর স্লোপ বা ঢাল৷ পুরো মাঠেই শেষ প্রান্তটা একটু ঢালু৷ দক্ষিণ পূর্ব দিকের চেয়ে উত্তর পশ্চিম দিকটা ২ দশমিক ৫ মিটার উঁচু৷
ছবি: A. Parvez
ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুম
লর্ডসে দুটি ড্রেসিং রুম৷ মাঠে নামার আগে প্রায় সব খেলোয়াড়ের মনেই কিছু কুসংস্কার কাজ করে৷ কে কোন জায়গায় বসলে ভালো খেলবে এই চিন্তাও করেন অনেকে৷
ছবি: A. Parvez
অনার্স বোর্ডে বাংলাদেশ
২০১০ সালে লর্ডস টেস্টের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ৫৫ রানে আউট হয়েছিলেন তামিম৷ দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৩৷ লর্ডসে কোনো বাংলাদেশির প্রথম সেঞ্চুরি৷ ১৫ চার আর ২ ছয়ে মাঠ আলো করে ৯৪ বলে শতক হাঁকান তামিম৷ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে উঠলেন শূন্যে৷ জার্সির পিঠে নিজের কাল্পনিক নাম দেখিয়ে অনুচ্চারে বলেছিলেন, ‘এবার আমার নামটা লেখো৷’
ছবি: A. Parvez
সেরা বোলারদের অনার্স বোর্ড
এই বোর্ডটিতে তাঁদের নাম রয়েছে, যাঁরা কোনো টেস্টের এক ইনিংসে ৫টি ইউকেট নিয়েছেন৷
ছবি: A. Parvez
মিডিয়া সেন্টার
এই মিডিয়া সেন্টারের নাম জে.পি. মর্গান মিডিয়া সেন্টার৷ ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে এই বিশেষ মিডিয়া সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: A. Parvez
ভিক্টোরিয়া যুগের প্যাভিলিয়ন
টমাস ভেরাইটি এই প্যাভিলিয়নটি নির্মাণ করেন৷ এখানে দর্শকদের আসনের পেছনেই ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুম৷ ১৮৯০ সালে এটি উন্মোচন করা হয়৷
ছবি: A. Parvez
রানী যেখান থেকে খেলা দেখেন
এই ঘরের জানালা দিয়েই রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ খেলা দেখেন৷ তাঁর জন্য রয়েছে একটি বিশেষ চেয়ার৷
ছবি: A. Parvez
মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসি
লর্ডসের ট্যুরের দায়িত্বে থাকেন এমসিসি’র সদস্য৷ আমাদের যিনি ট্যুর গাইড ছিলেন, তিনিও এক সময় ক্রিকেট খেলতেন জাতীয় দলের হয়ে৷ এমসিসি’র সদস্য হতে বিশেষ কিছু যোগ্যতা লাগে৷ তবে অনেক ক্রিকেটার অসাধারণ ক্রিকেটীয় যোগ্যতায় এমসিসি’র সম্মানিত সদস্য হয়েছেন৷ এর মধ্যে রয়েছেন শচীন টেন্ডুলকর, ওয়াসিম আকরাম, কুমার সাঙ্গাকারা, রাহুল দ্রাবিড়, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্ন, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ইনজামাম উল হক ও আরো অনেকে৷
ছবি: A. Parvez
স্যুভেনির শপ
ক্রিকেট বল, জার্সি, খাতা, কলম, সোয়েটার– ক্রিকেটের নানা সরঞ্জাম পাবেন লর্ডস শপে৷ দোকানটি স্টেডিয়ামের একপাশে৷
ছবি: A. Parvez
25 ছবি1 | 25
ভারতে নেতা-মন্ত্রীদের নামে স্টেডিয়াম বা প্রকল্প নতুন কিছু নয়। তবে ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে কিছু করেননি বলেই ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য। সকলেরই কর্মজীবনের পরে অথবা মৃত্যুর পরে নামাঙ্কিত প্রকল্প অথবা সৌধ তৈরি হয়েছে। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে বহু রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব চলাকালীন তাঁর নামে স্টেডিয়াম নির্মাণ সম্ভবত এই প্রথম ঘটনা।
স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি বিরোধী দলগুলি রাজনৈতিক সুযোগ ছাড়েনি। তারা বলতে শুরু করেছে, বল্লভভাইয়ের নাম সরিয়ে মোদীর নামে স্টেডিয়াম তৈরি করে বিজেপি বুঝিয়ে দিল, তারা দেশের ইতিহাসকে সম্মান করে না। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর লিখেছেন, 'বল্লভভাই প্যাটেল বিজেপির মূল সংগঠন আরএসএস কে নিষিদ্ধ করেছিলেন। বিজেপি এতদিন পরে তার প্রতিশোধ নিল।'
বিজেপির অবশ্য বক্তব্য, কোনোভাবেই বল্লভভাইকে অসম্মান করা হয়নি। গোটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সটির নাম তাঁর নামে। কেবলমাত্র স্টেডিয়ামটির নাম মোদীর নামে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাতের খেলাধুলোর বিষয়ে মোদী অনেক কাজ করেছিলেন। সেই সম্মানেই স্টেডিয়ামের নাম তাঁর নামে রাখা হয়েছে।
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামের একটি প্যাভেলিয়ান এন্ডের নাম আদানি এবং অন্যটি আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্সের নামে। আদানি এবং আম্বানির সঙ্গে মোদীর এবং বিজেপির সম্পর্ক সুবিদিত। বিরোধীরা সবসময়ই অভিযোগ করেন, এই দুই গুজরাতি শিল্পপতিকে মোদী বহু সুবিধা পাইয়ে দেন। তাঁরাও বিজেপিকে বিপুল অর্থ সাহায্য করেন। বস্তুত, মোদীর আমলে বিশেষত আদানির ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
কিছুদিন আগেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, দেশ এখন 'হাম দো হামারা দো' নীতিতে চলছে। অর্থাৎ, মোদী-শাহ এবং আদানি-আম্বানি। বুধবার স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পরে তিনি টুইটে লেখেন, তিনি যা বলেছিলেন, বাস্তবে তা-ই ঘটল। বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও একই ধরনের টুইট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে কেন দুইটি প্যাভেলিয়ান দুই বর্তমান শিল্পপতির নামে রাখা হলো তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছে, সাধারণত, প্যাভেলিয়ান ক্রিকেটারদের নামে হয়। অথবা জায়গার নামে। দেশের একজন ক্রিকেটারকেও কী যোগ্য মনে করল না গুজরাত ক্রিকেট বোর্ড?