বাংলাদেশে অবরোধ চলছেই৷ সরকারি তরফ থেকে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেই৷ বিরোধীদের অবরোধ বন্ধেরও উদ্যোগ নেই৷ ফলে বাড়ছে প্রাণহানি, অস্থিরতা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে৷ ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে এই বিষয়ে সরব অনেকে৷ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাবেনা৷ আমাদের সংবিধানে ক্ষমতার বিন্যাস কীভাবে বলা আছে, রাষ্ট্রের পরিচালনা নীতি কীভাবে বলা আছে সে সব আমলে আনা জরুরি৷ সংবিধানে গোলমেলে ব্যবস্থা থাকলে কোনোদিনই এই সংঘাতময় রাজনীতির বিলোপ ঘটবে না৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘একদিকে বলবেন জনগণ রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার মালিক, অথচ নাগরিকের ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো ব্যবস্থা সংবিধান করবে না, তখন সংবিধানের অন্য সব প্রতিশ্রুতি কেবল ফাঁকি৷ ধোঁকা৷ কথা একটাই – বদলাতে হবে এসব অন্যায় নীতি৷ সংবিধান কেমন চাই, সেটি জনগণই ঠিক করুক৷ ক্ষমতার বিন্যাস কী ভাবে হবে, সেটি জনগণই ঠিক করুক৷ তাদের উপর দায় চাপিয়ে একদল শকুনের, মানুষের মৃত্যুর উপর স্বর্গবাস বন্ধ হোক৷''
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্লাহ টানা অবরোধের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘বিএনপির অবরোধ কি সরকারের বিরুদ্ধে না সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে? যদি সরকারের বিরুদ্ধে হয় মন্ত্রী, এমপি, সরকারি দলের নেতাদের গাড়ি না পুড়িয়ে সাধারণ জনগণের গাড়ি পোড়াচ্ছে কেন এবং নিরীহ চালক/অসহায় মানুষকে পুড়িয়ে মারছে কেন?''
বাংলা ব্লগেও এই বিষয়ে লিখেছেন অনেকে৷ আমার ব্লগে ব্লগার মাহবুবুল আলমের লেখার শিরোনাম, ‘‘বিএনপির ভারতবিরোধিতা এবং বর্তমান ভারত তোষণনীতি৷'' এই ব্লগার মনে করেন বিএনপি ভারত বিরোধিতা থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে নিজেদের স্বার্থে৷ তবে এর ফলে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ৷ কেননা ‘ভারতের দালাল' বলে আওয়ামী লীগের যে সমালোচনা দলটি করত ভবিষ্যতে সেটা আর সম্ভব হবে না৷
এছাড়া সামহয়্যার ইন ব্লগে রাফা লিখেছেন, ‘‘তারেক জিয়ার ভুল রাজনীতির শিকার খালেদা জিয়ার বিএনপি৷'' তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষকেই ভাবতে হবে তারা কোন বাংলাদেশ চায়৷ এবং তার জন্য সোচ্চার হতে হবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই৷ এখন আর চুপ করে থাকার কোন অবকাশ নেই৷''