জিএমএফ’এ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৮ জুন ২০১৩ডয়চে ভেলের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন, সেই সঙ্গে ডয়চে ভেলের নিজস্ব বাৎসরিক আয়োজন: গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম৷ এছাড়া মহাপরিচালক এরিক বেটারমান শীঘ্রই জার্মানির এই বৈদেশিক বেতার-টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন উত্তরসূরি পেটার লিমবুর্গের হাতে৷ জার্মান সরকারের সংস্কৃতি ও মিডিয়া সংক্রান্ত দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বের্ন্ড নয়মান তো উৎসব ও সম্মেলনের উদ্বোধন উপলক্ষ্যেই বলেন, ‘‘ডয়চে ভেলে শুধু স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মতো বিশ্বজনীন মূল্যবোধের বাহকই নয়, বরং সূচনা থেকেই (এই প্রতিষ্ঠান) ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে এসেছে৷''
আজ সেই ডয়চে ভেলের মিডিয়া উপস্থাপনার গ্রাহক সারা বিশ্বে দশ কোটির বেশি ব্যবহারকারী: প্রত্যহ৷ ডয়চে ভেলের হয়ে কাজ করেন ৬০টি দেশ থেকে আগত প্রায় তিন হাজার সাংবাদিক ও কর্মী৷ সব মিলিয়ে জার্মানির সাবেক রাজধানী বন শহরে ডয়চে ভেলের মুখ্য কার্যালয়, ও সেই সঙ্গে পাশের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সেন্টার প্রায় আড়াই হাজার অতিথি-অভ্যাগত-প্রতিনিধিদের সমাগমে জমজমাট৷ মঙ্গলবার সেখানেই উপস্থিত ছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে৷
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন৷ প্রায় একই সময়ে ক্ষমতাকেন্দ্রে পালাবদল ঘটতে চলেছে ডয়চে ভেলেতেও৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে প্রথমেই বিদায়ী মহাপরিচালক এরিক বেটারমানকে ধন্যবাদ জানান৷ স্বাগত জানান আগামী মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গকেও৷ এছাড়া তিনি গত ৬০ বছর ধরে ডয়চে ভেলের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করেন ও সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান৷
ভেস্টারভেলে বলেন, পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে৷ বর্তমান প্রজন্ম এমন একটা আন্তর্জাতিকতার আবহের মধ্যে রয়েছে, যেমনটা আগে কখনো দেখা যায় নি৷ মোবাইল টেলিফোন বা আধুনিক প্রযুক্তি যে মাত্রায় পৌঁছে গেছে, তা অভূতপূর্ব৷ গত শতাব্দীতে বিপ্লব সহ যে সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটত, সে সম্পর্কে জানতে অনেক সময় লেগে যেত৷ কিন্তু আজ প্রায় সব ঘটনাই মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷ অতীতে শব্দ, কণ্ঠ ও ছবি একতরফা পাঠানো হতো৷ আজ ইন্টারনেটের দৌলতে মানুষ সহজেই তার নাগাল পেতে পারে৷ কিন্তু অন্যদিকে এটাও মনে রাখতে হবে, যে তথ্যের বন্যা মানেই সার্বিক চিত্র পাওয়া নয়৷ প্রজন্মের ধারণাও বদলে যাচ্ছে৷ আজ আর পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না – মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে৷ গোটা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের মনে একই স্বপ্ন৷ তারা জানে, অন্যরা কীভাবে বেঁচে আছে৷ তাই স্বৈরাচারী শাসকরাও তরুণ প্রজন্মকে উপেক্ষা করতে পারছে না৷
ভেস্টারভেলে আরও বলেন, বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতিও৷ ভারতের জনসংখ্যা শীঘ্রই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় তিন গুণ হতে পারে৷ তাছাড়া প্রজন্মের অনুপাতের মধ্যেও পার্থক্য বাড়ছে৷ পাকিস্তানের মতো দেশে জনসংখ্যার মধ্যায় তরুণ প্রজন্মের অনুপাত বেড়ে চলেছে৷ অন্যদিকে জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশে তরুণদের সংখ্যা কমছে৷
পানামা বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশও আজ বিশাল অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখে৷ সেখানে জার্মানিতে রেল স্টেশন ও বিমানবন্দর তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যার শেষ নেই৷ বাংলাদেশে পোশাক কারখানার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করেছে৷ ভেস্টারভেলের মতে, টেকসই উন্নয়নের পথে স্বল্পমেয়াদী মুনাফা দেখলে চলবে না৷ জি টোয়েন্টি-র দিকে তাকালে বোঝা যায়, বিশ্বের চরিত্র কতটা বদলে চলেছে৷ ‘নেক্সট সিক্স' গোষ্ঠী উঠে আসছে৷ আফ্রিকায় সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে৷ অর্থনৈতিক উন্নতি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যেও সম্পর্ক বাড়ছে৷ কিন্তু যত বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য হবে, সমাজে মুক্তির সম্ভাবনাও বাড়ে৷ সুশিল সমাজ শক্তিশালী হচ্ছে৷ প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে তাদের সক্রিয় ভূমিকা উঠে আসছে৷ সম্প্রতি তুরস্কের ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ সবার জন্য সমৃদ্ধি, মুক্ত সমাজ ছাড়া কোনো পথ নেই৷ তাদের সৃজনশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বলেন ভেস্টারভেলে৷
এসবি, এসি /ডিজি