কানে কম শোনেন, অথবা শুনতেই পান না – এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়৷ শ্রবণশক্তির অভাব মেটাতে কিছু ক্ষেত্রে ‘হিয়ারিং এড' ব্যবহার করতে হয়৷ কিন্তু আলোর সাহায্যে শব্দ শোনা? জার্মান বিজ্ঞানীরা ঠিক এমনই এক প্রযুক্তি তৈরি করছেন৷
বিজ্ঞাপন
আংশিক বা সম্পূর্ণ বধিরতা মানুষের ইন্দ্রিয়র সবচেয়ে বড় রোগ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, প্রায় ৩৬ কোটি মানুষ কানে ঠিকমত শুনতে পান না৷ অনেকে কম শোনেন, কেউ আবার সম্পূর্ণ বধির৷ জার্মানির গ্যোটিঙেন শহরের বিজ্ঞানীরা আলোর স্পন্দনের সাহায্যে বধিরতার চিকিৎসা করতে চান৷ ইএনটি ডাক্তার প্রো. টোবিয়াস মোসার বলেন, ‘‘শ্রবণশক্তির অভাব একদিকে অডিটারি ক্যানাল, টিমপ্যানাম-এ হতে পারে৷ সেটা হলো সাউন্ড ট্রান্সমিশন অথবা সাউন্ড কন্ডাকশন সংক্রান্ত শোনার সমস্যা৷ কিন্তু সেই সমস্যার উৎস ককলিয়া, শ্রবণের স্নায়ু অথবা মস্তিষ্কেও থাকতে পারে৷ তখন সেটাকে সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস বলা হয়৷ ককলিয়া-য় হেয়ার সেন্সরি সেল অথবা স্নায়ুকোষ ত্রুটিপূর্ণ থাকতে পারে কিংবা হারিয়ে যেতে পারে৷''
সাধারণত এই সব হেয়ার সেন্সরি সেল শব্দকে স্নায়ুর স্পন্দনে রূপান্তরিত করে৷ সেগুলির বেশি ক্ষতি হলে সাধারণ হিয়ারিং এড যন্ত্র আর কাজ করে না৷ তখন তথাকথিত ককলিয়া ইমপ্লান্ট বসাতে হয়৷ তার কাজ হলো ত্রুটিপূর্ণ হেয়ার সেন্সরি সেল এড়িয়ে শব্দকে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে সরাসরি স্নায়ুকোষ বা ককলিয়ায় পৌঁছে দেওয়া৷ সেখানেই স্নায়ুর স্পন্দন সৃষ্টি হয়৷ আসলে মস্তিষ্কেই শ্রবণের বোধ সৃষ্টি হয়, যদিও তা তেমন স্পষ্ট নয়৷ প্রো. মোসার বলেন, ‘‘ককলিয়া আসলে অনেকটা ঘোরানো সিঁড়ির মতো৷ তাতে অনেকগুলি ধাপ রয়েছে৷ কল্পনা করুন, প্রত্যেকটি ধাপ যেন একটি করে সুরের নোটের দায়িত্ব পালন করছে৷ ইলেকট্রিক ইমপ্লান্ট অনেকগুলি এমন ধাপ চালাচ্ছে৷ এভাবে বিস্তীর্ণ ও অস্পষ্ট এক পিচ মস্তিষ্কে পৌঁছচ্ছে৷''
কান ব্যথা? সমস্যা নেই, ওষুধ রয়েছে রান্নাঘরেই
প্রায়শই ছোট-বড় অনেকের কান ব্যথা করার কথা শোনা যায়? সমস্যা নেই আপনার রান্নাঘরেই রয়েছে এর সমাধান৷ অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই এই ব্যথা সারতে পারে পেঁয়াজের গরম ভাঁপ দিয়ে৷ চলুন জানা যাক কীভাবে৷
ছবি: BilderBox
কী কী কারণে কান ব্যথা হয়?
বাইরের কোনো সংক্রমণ থেকে কানের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জন্মালে কানে ব্যথা হতে পারে৷ যেমন সাতাঁর কাটা, ঠান্ডা লাগা, কানের পর্দায় আঘাত লাগা বা কোনো ধরনের অ্যালার্জি, কানে ময়লা বা খৈল জমা, এমনকি দাঁত বা চোয়ালের সমস্যা থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে৷ তবে কার কী কারণে কান ব্যথা হচ্ছে, তা ডাক্তারের কাছ থেকেই জেনে নেওয়া উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Sax
কানব্যথা এড়িয়ে চলতে কী করবেন?
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, গাড়ি, বাস বা ট্রেনে যাতায়াতের সময় অবশ্যই মাথা এবং কান ঢেকে রাখবেন, বন্ধ করে দেবেন জানালা৷ কারণ ‘‘দুই দিকের জানালা খোলা থাকলে ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলোবালি কানে লাগে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা থেকেই কান ব্যথা বা কানে সংক্রমণ হয়৷’’ এই সাবধানবাণী জার্মানির নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মিশায়েল বনডর্ফের৷
ছবি: DW
সাবধান হতে বাথক্যাপ পরে নিন
ডাক্তারের আরো পরামর্শ, সাঁতার কাটার সময় অবশ্যই বাথক্যাপ পরে নেবেন৷ কারণ স্নান করা বা সাঁতার কাটার সময় কানে পানি ঢুকে গেলেও কানে সংক্রমণ হতে পারে৷ তাই সাঁতার বা গোসলের পর ভালো করে কান মুছে ‘হেয়ায়ড্রায়ার’ দিয়ে চুল শুকিয়ে নেওয়াও ভালো৷ ডা. বনডর্ফ জানান, সাধারণত কানে পানি ঢুকে ‘ইনফেশন’ হয় গ্রীষ্মকালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যথা সারতে পেঁয়াজের পুটলি
পেঁয়াজে রয়েছে সংক্রমণ দমনকারী এক পদার্থ, যা কানের ব্যথা বা সংক্রমণে বেশ উপকারী৷ কীভাবে করবেন? প্রথমে একটি বা দু’টি পেঁয়াজ ছোটছোট করে কেটে নিন, তারপর গরম করুন এবং গরম পেঁয়াজের টুকরোগুলো একটি পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে পুটলি করে নিন৷ লক্ষ্য রাখবেন পেঁয়াজ যেন অতিরিক্ত গরম না হয়৷ পুটলিটাকে যেখানে ব্যথা বা ফোলা সেখানে আধঘণ্টা ধরে রাখুন৷
ছবি: Christian Jung - Fotolia.com
কানের ব্যথায় অলিভ ওয়েল
আরো একটি উপায় হচ্ছে, কানে ব্যাথা হলে গরম অলিভ ওয়েলে একটি ছোট নরম কাপড় ভিজিয়ে সেটা কানের ঠিক পেছনে কয়েক মিনিট চাপ দিয়ে রাখুন৷ দেখবেন এতে অনেক আরাম বোধ করছেন এবং ব্যথাও কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Felix
সাথে জ্বর হলে পেপারমিন্ট বা মেন্থল
কানব্যথা সারাতে পেপারমিন্ট বা মেন্থল যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে৷ তবে কানব্যথার সাথে যদি জ্বরও থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ তাছাড়া ‘‘ভেষজ ওষুধে যাঁরা বিশ্বাসী নন, তাঁদের ডাক্তারের পরমর্শ না নিয়ে তা ব্যবহার করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়’’ – এ কথা বলেন জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ শহরের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. বনডর্ফ৷
ছবি: Colourbox
নিজে কান পরিষ্কার না করাই ভালো
‘‘অনেকে নিজে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে হিতে বিপরিত হয়ে থাকে’’ – নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন ডা. বনডর্ফ৷ এছাড়াও তাঁর বিশেষ পরামর্শ, ‘‘দিনে দুই থেকে তিন লিটার জল পান করুন৷ কারণ এতে কানের ত্বক বা পর্দার ভেতরে লুকিয়ে থাকা জীবাণুগুলো বেরিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়৷’’
ছবি: BilderBox
7 ছবি1 | 7
গ্যোটিঙেন-এর বিজ্ঞানীরা তাই এবার শ্রবণের স্নায়ুকোষকে আলো দিয়ে স্টিমুলেট বা উদ্দীপিত করতে চান৷ কারণ এভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় ফোকাস করা সম্ভব৷ এর জন্য তাঁরা ক্ষুদ্র আলোর সিরিজ তৈরি করছেন, যা কানের ভিতরের অংশে প্রয়োগ করা যাবে৷ কয়েক'শ মাইক্রো-লাইট-এর সমন্বয়ে তা কাজ করবে৷
কিন্তু শ্রবণের যে স্নায়ুকোষ সাধারণত শব্দের কারণে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাকে কীভাবে আলোর সিগনাল দিয়ে জাগিয়ে তোলা সম্ভব? এর উত্তর সহজ৷ শ্রবণের স্নায়ুকোষকেই আলোর স্পন্দনে সাড়া দিতে শেখাতে হবে৷ তার মধ্যেই আলোর সুইচ তৈরি করতে হবে৷ প্রো. টোবিয়াস মোসার বলেন, ‘‘সবুজ অ্যালজি থেকে জিন-গত তথ্য আমরা লাইট সুইচের জন্য ব্যবহার করছি৷ তারপর ক্ষতিকারক নয়, এমন ভাইরাস দিয়ে জিন ট্রানস্ফারের মাধ্যমে সেই জেনেটিক তথ্য স্নায়ুকোষে নিয়ে যাচ্ছি৷ এভাবে স্নায়ুকোষ আলোর পড়লেও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে৷''
শ্রবণের স্নায়ুকোষকে আলোর মাধ্যমে উদ্দীপিত করলে এক স্পন্দন মস্তিষ্কের শ্রবণের অংশে চলে যায়৷ ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যে মস্তিষ্কে শ্রবণের অংশটি আলোর স্পন্দনে সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ একটি বড় মডেলের সাহায্যে সেটা দেখানো সম্ভব৷ প্রো. মোসার বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে এমন এলইডি ইমপ্লান্ট কানের মধ্যে ককলিয়ার খালি অংশে ঢোকানো সম্ভব হবে৷ তারপর ঘোরানো সিঁড়ির এক একটি ধাপে আলো পড়লে এক নীল আলোর ছটা স্নায়ুকোষের উপর এসে সেটিকে উদ্দীপিত করে তুলবে৷''
ককলিয়ার নীচের স্তরে লাইট-এমিটিং ডায়োড জ্বলে উঠলে শ্রবণের স্নায়ুকোষ উচ্চগ্রামের শব্দ অনুভব করবে৷ উপরের স্তরে এলএডি জ্বলে উঠলে নীচু গ্রামের শব্দ শোনা যাবে৷ বিজ্ঞানীদের আশা, আগামী ৫ বছরের মধ্যে রোগীদের উপর অপটিকাল ইমপ্লান্ট পরীক্ষা করা সম্ভব হবে৷ ফলে তাঁরা আবার শ্রবণশক্তি অনেকটাই ফিরে পাবেন৷
আলো আর বরফ মিলিয়ে এক আশ্চর্য উৎসব
প্রতিবছর শীতে হাজার হাজার পর্যটক আসেন উত্তর চীনের হার্বিনে, বরফ কেটে গড়া শিল্পকলা দেখতে৷ এ বছর ছিল ৩২তম ‘আইস ফেস্টিভাল’৷
ছবি: picture alliance/Kyodo
বরফে তৈরি ক্রেমলিনের ওপর আতসবাজি
আইস ফেস্টিভালে প্রতিবছরই নানা বিশ্বখ্যাত ভবন, স্থাপত্য বা ভাস্কর্যের ‘তুষার সংস্করণ’ দেখতে পাওয়া যায়৷ এ বছরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাউই উড়েছে এক বরফের ক্রেমলিনের চূড়ার ওপর৷
ছবি: Reuters/A. Song
সবে মিলে করি কাজ
সুবিশাল ‘তুষার স্থাপত্য’-গুলির জন্য একা নয়, অনেক শিল্পীকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়৷ কে কোন খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে৷ যা-তে সব কিছু ঠিকঠাক চলে, সেজন্য ‘তুষার ভাস্কর’-দের অনেকে এক বছর ধরে অনুশীলন করেছেন৷
ছবি: Reuters/China Daily
লম্বা লাইন
হার্বিনের আইস ফেস্টিভাল শুধু চীনেই নয়, বিশ্ববিখ্যাত৷ কাজেই অতিথি-দর্শকদের লাইন পড়ে দিগন্ত অবধি৷ তাপমাত্রা যে শূন্যের কতটা নীচে, তা কেউ তোয়াক্কা করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
ওলাফ
ওয়াল্ট ডিজনি-র কার্টুনচিত্র ‘ফ্রোজেন’-এর চরিত্র ওলাফ শুধু চীন নয়, হার্বিনেও পৌঁছে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/W. Hong
শিল্পকলা তো শুধু নয়, খেলাধুলোও আছে
আইস ফেস্টিভালের গোটা নাম হলো ‘আইস অ্যান্ড স্নো ফেস্টিভাল’ – অকারণে নয়৷ তুষার ভাস্কর্যের সাথে সাথে ছোটদের বা বড়দের সময় কাটানোর জন্য নানারকম ব্যবস্থা আছে: যেমন স্লেজে চড়া৷ বরফ আছে কি করতে!
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
আর খিদে পেলে?
আছে নানা ধরনের খাবারদাবার৷ খেয়াল করবেন, ঠেলাগাড়িটা চলেছে কিন্তু স্লেজের ওপর, ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ট্র্যাক্টর৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
রাতের বেলা
হার্বিনের চেহারা মায়াময়, কেননা বরফের প্রাসাদ আর ভাস্কর্যগুলো সাজানো হয় মোমবাতি আর রঙিন বাতি দিয়ে৷