জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা তদন্তের ভার বনানী থানা থেকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে দেওয়া হয়েছে৷ এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও নতুন করে নিয়োজিত হবেন৷ আপন জুয়েলার্সের মালিকের এক ছেলেসহ প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবারের সন্তানদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির ছায়া তদন্তে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ এখনও কোনো আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ৷ আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন নির্যাতিতারা৷ কথা হওয়ার পর তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বনানী মামলার ভিকটিমের সাথে কথা হলো মাত্র৷ কী লিখব? মেয়েটার হু হু কান্নার শব্দ সব কিছুকে ছাপিয়ে বারবার কানে আছড়ে পড়ছে৷ তারা বলছে, ‘ভাইয়া একটু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন উনি যেন বিচার করেন'৷ গ্লানিতে, বিষাদে বুকটা আর্তনাদে ফেটে যায়৷ আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?''
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘গুণে গুণে তিন দিন থানার ওসি ফরমান আলী আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন তাদের ঘুরিয়েছে৷ বলেছে, এসব করে কী হবে, বাসায় যাও, জানাজানি হলে বিয়ে হবে না, এরা প্রভাবশালী, এই বয়সে বিপদে পড়লে কিন্তু আর উঠতে পারবে না- নারীদের এসব বলেছিলেন ওসি ফরমান৷''
মো. শাওন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘দিন দিন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ধর্ষণ নামক ঘৃণার নামটি৷ তীব্র থেকে তীব্রতায়, শিখর থেকে শেকড়ে চলে যাচ্ছে এই ধর্ষণ৷ এই ভাবে চলতে থাকলে, আমার, আপনার মা, বোন কেউ তো রক্ষা পাবে না৷ তাই এই দেশের বিচার বিভাগের প্রতি বিনীত অনুরোধ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে ধর্ষণকারী পায়৷''
মোঃ মর্তুজা খালেদ লিখেছেন, ‘‘বনানী ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে মিডিয়াগুলো বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে৷ আর সেটা খুব জরুরিও ছিল৷ কিন্তু দু'চার দিন পর তাদেরকে থেমে গেলে চলবে না৷ ধর্ষণকারী যত বড় ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করতে হবে৷''
বিচার প্রসঙ্গে কানিজ আকলিমা সুলতানা লিখেছেন, ‘‘ধর্ষণ মহামারী এখন৷ দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তি নিশ্চিত হলে ধর্ষণ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ কিন্তু সাধারণ বিচারব্যবস্থায় মামলার দীর্ঘ লাইন থাকে৷ এক ধর্ষণের বিচার হতে হতে আরও বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যায়৷ তাই শুধু ধর্ষণের বিচারের জন্যই একটা আলাদা আদালত হোক৷ ঘটনার ১৫দিনের মধ্যে বিচারকার্য শুরু হলে এবং দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত হলে বাপ-ব্যাটাদের শরীরের উত্তেজনা কমে আসবে৷''
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আপন জুয়েলার্সকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আহমেদ ফেরদৌস তিন আসামির ছবিসহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আপন জুয়েলার্সকে চলুন আপনভাবে বর্জন করি৷ এই হোক আমাদের একমাত্র প্রতিবাদের ভাষা৷ আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি৷ মনে রাখতে হবে সবাইকে, অপরাধীরা টাকার জোরে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে, যার নমুনা কিছু আমরা দেখেছি ইতিমধ্যেই৷ তাই জাগ্রত হোক জাতির বিবেক৷''
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন নাদিয়া ইসলাম৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারী এবং গয়নার ক্রেতা হিসাবে আজ থেকে আপন জুয়েলার্সকে বয়কট করলাম৷ ধর্ষকের পক্ষে সাফাই গায়, এমন দোকান থেকে গয়না কিনে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হলে নিজের বিবেকই আমাকে ধিক্কার দেবে৷ যেই মানুষ নারীকে সম্মান দিতে জানেন না, যে অপরাধকে অপরাধ হিসাবে দেখে না, যার নৈতিকতা নেই, তার আমাকে সাজানোর অধিকারও নেই৷''
এদিকে, সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর আপন জুয়েলার্সের মালিককে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ ধর্ষণের সময় একজন ছেলে বলেছে, ‘আমার বাবা সোনার ব্যবসা করে৷ এয়ারপোর্টের সব স্বর্ণ চোরাচালানি সে চালায়৷'' এই কথাতেই তো রাষ্ট্রের উচিত ওই বাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ একজন চোরাচালানির বিরুদ্ধে এখনই মামলা করা উচিত৷ তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্বহীনতার কথা তুলে বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের উচিত এখন এগুলো খুঁজে বের করা, আসামিতো সবার সামনেই৷ তা না করে তারা মেয়েদের বাসার সামনে কেন? এটা কোন সাংবাদিকতা? আর যেসব হাউস থেকে ওদের সেখানে পাঠানো হয়েছে, ওদেরকেও এখন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত৷''
অন্যদিকে, এই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক৷ পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, এ পুলিশ বাহিনীর কোনো প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা৷ তিনি বলেছেন, ‘‘দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪ মে বনানী থানায় মামলা করতে গেলে তাদের দুই দিন ঘোরায় পুলিশ৷ এমনকি মেয়ে দু'টির চরিত্র হনন করা হয়েছে৷ একটি মামলা নিতে দুই দিন লাগে? পুলিশের গাফলতি ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে ধর্ষণ মামলার আসামি যুবকরা ধরা পড়েনি৷ জনগণের টাকায় প্রতিপালিত পুলিশের এ আচরণ কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না৷'' এই ঘটনায় তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷
ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তিন দিন গড়ালেও পাঁচ আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সাফাতকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় কয়েক দফা অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে, ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজনের পরিবার চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছে৷ ধর্ষণের অভিযোগকারী এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘‘চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীরা বাসার সামনে ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন৷ লোকজন জানতে চায়, কেন সাংবাদিকরা বাসার সামনে দিনের পর দিন বসে আছে৷'' মেয়ের উপর নির্যাতনের বিচারে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার প্রত্যাশা করলেও বাড়ির সামনে অবস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
সংবাদকর্মীদের ধর্ষিতের বাড়ির সামনে অবস্থানে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ও প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমানও৷ তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘খুবই অন্যায় কাজ, এ ধরনের সাংবাদিকতা মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা হতে পারে না৷''
প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী৷ ঘটনা ঘটার প্রায় দেড় মাস পর পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ শুরুতে মামলাটি নিতে চায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে৷