1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বনানী ধর্ষণকাণ্ড: পুলিশ ও সাংবাদিকের সমালোচনা

১০ মে ২০১৭

বনানীতে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে৷ একদিকে পুলিশের সমালোচনা, অন্যদিকে উঠছে কতিপয় সাংবাদিকের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন৷ আপন জুয়েলার্সকে বয়কটের আহ্বানও জানানো হচ্ছে৷

Symbolbild Gewalt gegen Frauen Vergewaltigung
ছবি: Fotolia/detailblick

জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা তদন্তের ভার বনানী থানা থেকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে দেওয়া হয়েছে৷ এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও নতুন করে নিয়োজিত হবেন৷ আপন জুয়েলার্সের মালিকের এক ছেলেসহ প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবারের সন্তানদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির ছায়া তদন্তে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ এখনও কোনো আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ৷ আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে৷

ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন নির্যাতিতারা৷ কথা হওয়ার পর তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বনানী মামলার ভিকটিমের সাথে কথা হলো মাত্র৷ কী লিখব? মেয়েটার হু হু কান্নার শব্দ সব কিছুকে ছাপিয়ে বারবার কানে আছড়ে পড়ছে৷ তারা বলছে, ‘ভাইয়া একটু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন উনি যেন বিচার করেন'৷ গ্লানিতে, বিষাদে বুকটা আর্তনাদে ফেটে যায়৷ আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?''

তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘গুণে গুণে তিন দিন থানার ওসি ফরমান আলী আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন তাদের ঘুরিয়েছে৷ বলেছে, এসব করে কী হবে, বাসায় যাও, জানাজানি হলে বিয়ে হবে না, এরা প্রভাবশালী, এই বয়সে বিপদে পড়লে কিন্তু আর উঠতে পারবে না- নারীদের এসব বলেছিলেন ওসি ফরমান৷''

মো. শাওন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘দিন দিন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ধর্ষণ নামক ঘৃণার নামটি৷ তীব্র থেকে তীব্রতায়, শিখর থেকে শেকড়ে চলে যাচ্ছে এই ধর্ষণ৷ এই ভাবে চলতে থাকলে, আমার, আপনার মা, বোন কেউ তো রক্ষা পাবে না৷ তাই এই দেশের বিচার বিভাগের প্রতি বিনীত অনুরোধ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে ধর্ষণকারী পায়৷''

মোঃ মর্তুজা খালেদ লিখেছেন, ‘‘বনানী ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে মিডিয়াগুলো বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে৷ আর সেটা খুব জরুরিও ছিল৷ কিন্তু দু'চার দিন পর তাদেরকে থেমে গেলে চলবে না৷ ধর্ষণকারী যত বড় ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করতে হবে৷''

বিচার প্রসঙ্গে কানিজ আকলিমা সুলতানা লিখেছেন, ‘‘ধর্ষণ মহামারী এখন৷ দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তি নিশ্চিত হলে ধর্ষণ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ কিন্তু সাধারণ বিচারব্যবস্থায় মামলার দীর্ঘ লাইন থাকে৷ এক ধর্ষণের বিচার হতে হতে আরও বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যায়৷ তাই শুধু ধর্ষণের বিচারের জন্যই একটা আলাদা আদালত হোক৷ ঘটনার ১৫দিনের মধ্যে বিচারকার্য শুরু হলে এবং দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত হলে বাপ-ব্যাটাদের শরীরের উত্তেজনা কমে আসবে৷''

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আপন জুয়েলার্সকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আহমেদ ফেরদৌস তিন আসামির ছবিসহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আপন জুয়েলার্সকে চলুন আপনভাবে বর্জন করি৷ এই হোক আমাদের একমাত্র প্রতিবাদের ভাষা৷ আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি৷ মনে রাখতে হবে সবাইকে, অপরাধীরা টাকার জোরে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে, যার নমুনা কিছু আমরা দেখেছি ইতিমধ্যেই৷ তাই জাগ্রত হোক জাতির বিবেক৷''

একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন নাদিয়া ইসলাম৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারী এবং গয়নার ক্রেতা হিসাবে আজ থেকে আপন জুয়েলার্সকে বয়কট করলাম৷ ধর্ষকের পক্ষে সাফাই গায়, এমন দোকান থেকে গয়না কিনে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হলে নিজের বিবেকই আমাকে ধিক্কার দেবে৷ যেই মানুষ নারীকে সম্মান দিতে জানেন না, যে অপরাধকে অপরাধ হিসাবে দেখে না, যার নৈতিকতা নেই, তার আমাকে সাজানোর অধিকারও নেই৷''

এদিকে, সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর আপন জুয়েলার্সের মালিককে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ ধর্ষণের সময় একজন ছেলে বলেছে, ‘আমার বাবা সোনার ব্যবসা করে৷ এয়ারপোর্টের সব স্বর্ণ চোরাচালানি সে চালায়৷'' এই কথাতেই তো রাষ্ট্রের উচিত ওই বাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ একজন চোরাচালানির বিরুদ্ধে এখনই মামলা করা উচিত৷ তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্বহীনতার কথা তুলে বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের উচিত এখন এগুলো খুঁজে বের করা, আসামিতো সবার সামনেই৷ তা না করে তারা মেয়েদের বাসার সামনে কেন? এটা কোন সাংবাদিকতা? আর যেসব হাউস থেকে ওদের সেখানে পাঠানো হয়েছে, ওদেরকেও এখন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত৷''

অন্যদিকে, এই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক৷ পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, এ পুলিশ বাহিনীর কোনো প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা৷ তিনি বলেছেন, ‘‘দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪ মে বনানী থানায় মামলা করতে গেলে তাদের দুই দিন ঘোরায় পুলিশ৷ এমনকি মেয়ে দু'টির চরিত্র হনন করা হয়েছে৷ একটি মামলা নিতে দুই দিন লাগে? পুলিশের গাফলতি ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে ধর্ষণ মামলার আসামি যুবকরা ধরা পড়েনি৷ জনগণের টাকায় প্রতিপালিত পুলিশের এ আচরণ কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না৷'' এই ঘটনায় তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷

ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তিন দিন গড়ালেও পাঁচ আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সাফাতকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় কয়েক দফা অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷

এদিকে,  ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজনের পরিবার চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছে৷ ধর্ষণের অভিযোগকারী এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘‘চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীরা বাসার সামনে ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন৷ লোকজন জানতে চায়, কেন সাংবাদিকরা বাসার সামনে দিনের পর দিন বসে আছে৷'' মেয়ের উপর নির্যাতনের বিচারে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার প্রত্যাশা করলেও বাড়ির সামনে অবস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷

সংবাদকর্মীদের ধর্ষিতের বাড়ির সামনে অবস্থানে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ও প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমানও৷ তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘খুবই অন্যায় কাজ, এ ধরনের সাংবাদিকতা মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা হতে পারে না৷''

প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী৷ ঘটনা ঘটার প্রায় দেড় মাস পর পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ শুরুতে মামলাটি নিতে চায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে৷

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ