জার্মানির সাবেক রাজধানী বন-এ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনা৷ প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিচ্ছেন৷ তবে আলোচকদের মাথায় ঘুরছে একটি নাম - ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
বিজ্ঞাপন
কারণ অতীতে তিনি কয়েকবার প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উদ্যোগে বেশ কয়েকবছর ধরে আলোচনা হওয়ার পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা৷
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার করেছে দেশগুলো৷ এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে চেয়েছে তারা৷ চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ (২০০৫ সালের তুলনায়) নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বায়ু দূষণকারী দেশ৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ছয়টি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটবে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অবিশ্বাস্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে৷ বিমান চলাচল দুরুহ হবে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে, বাড়বে বজ্রপাত৷ চলুন জেনে নিই ছয়টি ঘটনা যা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ঘটবে৷
বিমানযাত্রা কঠিন হবে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিমানে ঝাঁকুনি বেড়ে যাবে, ফলে বিমানযাত্রায় শারীরিক ও মানসিক চাপ আরো বাড়বে৷ বিশেষ করে যাত্রীবাহী বিমানগুলো যে পথে চলাচল করে, সেই পথ আগের চেয়ে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Colourbox/M. Gann
জাহাজের পথে আইসবার্গ
সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করবে ভাসমান আইসবার্গ৷ গত এপ্রিলে চারশ’ আইসবার্গ নর্থ আটলান্টিকে জাহাজ চলাচলের জলসীমায় প্রবেশ করে৷ ফলে অনেক জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় নিয়েছে, ঘুরে যাওয়ার কারণে তেল খরচও গেছে বেড়ে৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে৷ যদিও এতে দাবানলের ঝুঁকি বাড়বে৷ তবে বজ্রপাতের ফলে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয় যা বিশ্বের বায়ুমণ্ডলির জন্য উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে
ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো ভবিষ্যতে সক্রিয় হতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা ঘটার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Getty Images/S. Crespo
আপনার রাগ বাড়বে
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মুডও পরিবর্তন করে দেবে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে অস্থিরতাও বাড়বে৷ এমনকি সহিংস আচরণ করার প্রবণতাও দেখা দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
প্রাণীর আকার ছোট হবে
এই পরিবর্তনটি অবশ্য চোখে পড়তে সময় লাগবে৷ তবে কয়েক কোটি বছর আগে দৈত্যাকারের প্রাণিগুলো ছোট হয়ে গিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও৷ ভবিষ্যতেও তেমনটা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/khmel
6 ছবি1 | 6
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার হুমকি দিয়েছেন৷ আগামী কয়েক দিন কিংবা সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এবং ইউএন ক্লাইমেট সায়েন্স প্যানেল ও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড বাতিলের প্রস্তাব করেছেন৷
এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে বনে আসা আলোচকদের৷ মালদ্বীপের পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রী তরিক ইব্রাহিম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘অবশ্যই, ওয়াশিংটন থেকে যে ধরণের বার্তা আমরা পাচ্ছি তা এই মুহূর্তে আমাদের মনের একটি বড় অংশ দখল করে আছে৷’’
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট এর প্রধান পাউলো কাবালেরো বলেন, এই অবস্থায় বনের আলোচনার পরিবেশকে কঠিন করে তুলেছে৷
যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে সরে গেলে চুক্তির কার্যকারিতা অনেকখানি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন৷
১১-দিনব্যাপী বন সম্মেলনে আলোচকরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের নিয়মনীতি ঠিক করার কাজ শুরু করবেন৷ আগামী বছর পর্যন্ত এই কাজ চলতে পারে৷
এদিকে, চলতি বছরের শেষে বন শহরেই জাতিসংঘের আয়োজনে শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৩ আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে৷
এনএম/জেডএইচ (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের হিসাব রাখছে নাসা
প্রথমে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের হিসাব রেখেছে নাসা৷ পরে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে এখন আকাশ থেকে সেই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে তারা৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
অপারেশন আইসব্রিজ
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ক্রিয়োস্ফিয়ার কর্মসূচির অন্তর্গত ‘অপারেশন আইসব্রিজ’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে আকাশ থেকে মেরু অঞ্চলের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ ১৯৬৬ সালের লকহিড পি-৩ বিমান থেকে রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যেমে ঐ অঞ্চলের বরফের পুরুত্ব ও স্থান পরিবর্তনের হিসাব রাখছে নাসা৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
প্রস্তুতি চলছে
অপারেশন আইসব্রিজের মেয়াদ ছয় বছর৷ এর আওতায় মার্চ থেকে মে-তে গ্রিনল্যান্ডে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরে অ্যান্টার্কটিকায় আট ঘণ্টা করে কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে বরফের পাত ও খণ্ডের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
বিমানে আছে উচ্চ প্রযুক্তি
উপর থেকে কুয়াশার ভেতর দিয়ে ক্যানাডার এলেসমেয়ার দ্বীপের গ্লেসিয়ার দেখতে পাচ্ছেন৷ অপারেশন আইসব্রিজে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ ‘আইস-পেনিট্রেটিং রাডার’ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ বিমান নীচু দিয়ে উড়ে গেলে রাডারটি ভালো কাজ করে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
প্রভাব এখনই দেখা যাচ্ছে
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনই দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ উপরের ছবিতেও সেটি বোঝা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
বিকল্প ব্যবস্থা
অপারেশন আইসব্রিজ আসলে নাসার একটি বিকল্প ব্যবস্থা৷ কারণ ২০০৩ সালে একই কাজের জন্য ‘আইসস্যাট’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ চালু করেছিল তারা৷ কিন্তু ২০০৯ সালে সেটি হঠাৎ করে তথ্য সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দেয়৷ ফলে ‘আইসস্যাট-দুই’ নামে আরেকটি উপগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করেছে নাসা, যেটি আগামী বছর চালু হওয়ার কথা৷ ২০০৯ থেকে ২০১৮ – এই নয় বছরের তথ্যও যেন সংগ্রহে থাকে সেজন্য অপারেশন আইসব্রিজ শুরু করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
সীমাবদ্ধতা
আইসস্যাট-এর মাধ্যমে সারা বছর ধরে অনেক বিস্তৃত এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল৷ কিন্তু অপারেশন আইসব্রিজের সাহায্যে শুধু মেরু অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে এবং সেটিও মাত্র কয়েক মাসের জন্য৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
‘আইসস্যাট-দুই’ নিয়ে অনিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাসার আর্থ সায়েন্স প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ায় আগামী বছর এই কৃত্রিম উপগ্রহের কাজ শুরুর বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷