৭ই ফেব্রুয়ারি, রবিবার৷ ভারতে সরকারি ছুটির দিন৷ তাই ছুটি ছিল বেঙ্গালুরুর ‘ভিবজিওর' হাইস্কুলেও৷ আর সে জন্যই তো রক্ষা পেয়ে গেল ছাত্র-ছাত্রীরা৷ কারণ এদিন, পড়ুয়াদের বদলে স্কুলে ঢুকেছিল একটা চিতা!
বিজ্ঞাপন
ছুটির দিন লোকজন কম ছিল, তাই প্রথমে কেউ লক্ষ্য করেনি৷ আর স্কুলের ভিতর হানা দিয়ে চিতাটাও প্রথমে কোনো রা করেনি৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর দারোয়ানের সামনা-সামনি হতেই যুদ্ধং দেহি!
চারিদিকে ‘মারো, মারো' রব৷ স্থানীয়রাই লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়েন৷ কিন্তু চিতাবাঘ বলে কথা, তার সঙ্গে দৌড়ে বা গায়ের জোরে কি পারা যায়?
সিসিটিভি-র ফুটেজে স্কুলের নিরাপত্তাকর্মীরা চিতাকে দেখে অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই খবর দিয়ে দিয়েছিলেন বন্যপ্রাণী দপ্তরে৷ তবে তার মধ্যে চার-চারজনকে ঘায়েল করেছে চিতা বাঘ৷
তারপর কী হলো? জানতে হলে যে ভিডিওটি দেখতে হবে...৷ তবে এটুকু বলতে পারি, বেশ অনেকক্ষণ ধরে বাঘটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছিল বনবিভাগের কর্মকর্তারা৷ কিন্তু....
বাঘ ভয়ংকর, বাঘ হিংস্র, বাঘের থাবার কবলে পড়লে কারো রক্ষা নেই – সবই ঠিক৷ তারপরও সারা পৃথিবীর বাঘই পড়েছে ভীষণ বিপদে৷ ‘আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস’-এ পাওয়া তথ্য বলছে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে বাঘ৷
বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে
সারা বিশ্বেই বাঘের সংখ্যা খুব দ্রুত কমছে৷ এক শতক আগে যেখানে এক লাখের মতো বাঘ ছিল, সেখানে এখন আছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার বাঘ! আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে তিনটি একেবারে উধাও৷ তাছাড়া শুধুমাত্র সুমাত্রা, সাইবেরিয়া, রয়েল বেঙ্গল, মালয়, ইন্দোচীন এবং দক্ষিণ চীনের বাঘই টিকে আছে৷ ছবির এই বাঘটাও এখন আর জঙ্গলে নেই, শুধু চিড়িয়াখানাতেই আছে এরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Joe
বাঘ থাকবে কোথায়?
বাঘের বিচরণ ছিল এমন জঙ্গলের প্রায় ৯৩ শতাংশই এখন মানুষের দখলে৷ কোথাও শুরু হয়েছে চাষবাস৷ কোথাও গড়ে উঠেছে জনবসতি৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে বসবাসের জায়গার অভাবেই হয়ত বাঘ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে৷ ছবির এই সাদা রঙের বিরল বেঙ্গল টাইগারের হয়ত আর চিহ্নই থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/W. Layer
রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও মহাবিপদ
জলবায়ু পরিবর্তন বাঘের জন্যও বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের তো বিপদ দিন দিন বাড়ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়ছে, ততই ছোট হয়ে আসছে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ঘর’ সুন্দরবন৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে যেমন আর মাত্র ১০০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশিষ্ট আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Kundu
শিকারের সময়...
শিকারের সময় বাঘ একা থাকতে পছন্দ করে৷ সাধারণত রাতেই খাদ্যের খোঁজে শিকারে বের হয় বাঘ৷ অন্ধকারে শিকার তাকে দেখবে না, চুপি চুপি সামনে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড়টা কামড়ে ধরা যাবে – এ সব আবার বাঘমামা খুব ভালো বোঝে!
ছবি: Getty Images/N. Asfouri
সাঁতারু বাঘ
বাঘের হাত থেকে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দেয়া রীতিমতো আহাম্মকি৷ বাঘের পানি খুব পছন্দ৷ সাঁতারেও খুব পটু সে৷ সুতরাং পানিতে ঝাঁপ দেয়া শিকারকে ধরা বাঘের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়৷
ছবি: Imago
বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় মানুষ নেই...
বাঘ কিন্তু মানুষের মাংস খেতে পছন্দ করে না৷ বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় হরিণ, মহিষ, ভালুক, কুকুর, চিতা, কুমির, এমনকি অজগর সাপও আছে, কিন্তু মানুষ নেই৷ তারপরও কেন বাঘ মানুষ শিকার করে? ভয়ে৷ যখন মনে হয়, মানুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে তখন নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে উল্টো নিজেই আক্রমণ করে বসে বাঘ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Scheidemann
বংশবৃদ্ধির সময়
যেসব অঞ্চলে আবহাওয়া একটু গরম, সেখানে নভেম্বর থেকে এপ্রিল – এই সময়টাই বাঘের প্রজননের জন্য আদর্শ সময়৷ শীতপ্রধান দেশে শীতেই বাচ্চা নেয় বাঘ৷ বাচ্চা সাধারণত ১০৩ দিন মায়ের পেটে থাকে৷ বাঘিনী একসঙ্গে তিন থেকে চারটি বাচ্চা দেয়৷ বয়স আট সপ্তাহের মতো হলেই বাঘের ছানারা মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে৷ দেড় বছরের মাথায় ছানা বাঘ একা একা শিকার শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রু
বাঘের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ কিন্তু মানুষ৷ মানুষই তাদের চক্ষুশূল৷ হবে না কেন! জঙ্গল দখল করে করে বাঘের বসবাসের জায়গা ছোট করছে মানুষ৷ নানা ছুতোয় বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকারও করে মানুষ৷ বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রুও তাই মানুষ৷