বনের পর এবার সবার চোখ প্যারিসে
১৭ নভেম্বর ২০১৭ফ্রান্সের প্যারিসে ২০১৫ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল৷ প্রায় ২০০টি দেশ তাতে সই করেছিল৷ বিশ্বের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে ধনী, গরিব সব দেশ একত্রে কাজ করতে সম্মত হয়েছিল৷ ২০২০ সাল থেকে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা৷
সেই চুক্তির দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আগামী মাসের ১২ তারিখে প্যারিসে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ১০০-র বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্যারিস চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল বিশ্ব৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর, এই চুক্তির সাফল্য নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে বিশ্বকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্যারিসে এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
এদিকে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ট্রাম্পের ঘোষণার পরও ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তির মধ্যে থাকতে হচ্ছে৷ ফলে বন সম্মেলনে দেশটির একটি ছোট প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিল৷ তাদের উপস্থিতি আলোচনায় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন আফ্রিকার একটি দেশের আলোচক সেইনি নাফো৷ এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অন্যান্য উন্নত দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ ফলে ঐ সব দেশের অবস্থানের উপরও একটা প্রভাব দেখা যায়৷’’
যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির কারণে বন সম্মেলনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্যও বেশি দূর এগোতে পারেনি, বলে মনে করছেন অনেক আলোচক৷ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘রুলবুক’ তৈরির কাজ ছিল কপ২৩-র সেই অন্যতম উদ্দেশ্য৷ আগামী বছরের মধ্যে এই ‘রুলবুক’ তৈরির কাজ শেষ করতে হবে৷ কার্বন নির্গমন কমাতে বিভিন্ন দেশ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার বাস্তবায়ন কতদূর এগোলো, সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির নিয়ম থাকবে রুলবুকে৷
জলবায়ু আলোচনায় দরিদ্র দেশগুলোর স্বার্থ দেখা সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর মোহামেদ আডৌ রুলবুক তৈরির কাজ যথেষ্ট এগিয়েছে বলে মনে করেন না৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন চলে যাওয়ার পর সৃষ্ট হওয়া ‘কূটনৈতিক নেতৃত্বের’ অভাব এর কারণ বলে মনে করেন তিনি৷
‘ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্টস’-এর বিশ্লেষক আলডেন মায়ার বলেছেন, বন সম্মেলনের অন্যতম আলোচিত বিষয় অর্থ৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থ সহায়তা বিষয়ে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে আরও নিশ্চয়তা চেয়েছে৷
ওদিকে কপ২৩ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে বলতে গিয়ে ইকুইটিবিডি-র কোঅর্ডিনেটর সৈয়দ আমিনুল হকের কণ্ঠে হতাশাই শোনা গেল৷ শুক্রবার দুপুরে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমাদের মতো দেশগুলোর কোনো লাভ হয় নাই৷ বাংলাদেশের স্বার্থ হচ্ছে অভিযোজন ও মিটিগেশন বিষয়ে আরও অর্থ সহায়তা পাওয়া, যেন তা দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কিছুই পাই নাই৷’’
বাংলাদেশের আরেকটি স্বার্থের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়৷ তাই সম্মেলনে আমাদের আরেকটি প্রত্যাশার বিষয় ছিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’৷ কিন্তু এই বিষয়েও কিছু হয় নাই৷ এই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বলে এটিকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আমাদের ধারণা ছিল, লস অ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়ে একটি মেকানিজম দাঁড়াবে৷ কিন্তু তারা বিমার কথা বলছে৷ কিন্তু ইন্সুরেন্সতো সহায়তা না, ইন্সুরেন্স হচ্ছে একটা ব্যবসা৷ আমি আপনাকে ১০০ টাকা নগদ দিলাম, আর ১০০ টাকার বিমা করলাম৷ আপনি কোনটা নেবেন৷ ১০০ টাকার নগদটাই আপনার জরুরি৷ কারণ বিমা একটা ‘রিস্ক’৷ হইলেও হইতেও পারে, নাও পারে৷’’
অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুল কাদির স্থানীয় সময় দুপুর দু'টোর ডয়চে ভেলেকে জানান, অভিযোজন বিষয়ে অর্থায়ন নিয়ে এখনও একটি বৈঠক বাকি আছে৷
জেডএইচ/ডিজি