কেন পৃথিবীতে বৈষম্য বাড়ছে? বৈষম্যের কারণেই কি দেশান্তরী হয় মানুষ? এখানে গণমাধ্যম কী ভূমিকা পালন করতে পারে? এরকম অসংখ্য প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতে জার্মানির বনে শুরু হয়েছে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম (জিএমএফ)-এর ১১ তম আসর৷
বিজ্ঞাপন
১২০টি দেশের প্রায় ২ হাজার সাংবাদিক, গণমাধ্যম উদ্যোক্তা, কর্মী, এনজিওকর্মী, ব্লগার এবং সংবাদসংশ্লিষ্টরা মিলিত হয়েছেন এবারের গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের সম্মেলনে৷
সোমবার সকাল ১০টায় বন শহরের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের প্রেসিডেন্ট আরমিন লাশেট৷
তিনি সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘এখানে আগে বনের পার্লামেন্ট ছিল৷ কাছের ওই চেয়ারটিতে আগে বনের চ্যান্সেলর বসতেন৷ সেখানে এখন দু'জন ব্লগার বসে আছেন৷ এভাবেই পরিবর্তন আসছে৷''
‘‘ডিজিটাইজেশন শিল্প কারখানার ধরন পরিবর্তন করছে৷ জার্মানির মতো প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলোতেও এটি প্রভাব ফেলছে৷ ফলে আমাদের কেবল বৈশ্বিক অসাম্যতা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না, নিজ দেশের ভেতরের অসাম্যতা নিয়েও আলাপ করতে হবে৷''
‘‘বৈশ্বিক অসাম্যতা কি বৈশ্বিক অভিবাসনে ভূমিকা রাখছে? এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বা পারছে...'', এবারের সম্মেলনে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
‘ইউরোপীয় কমিশনের ডিজিটাল ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি'র কমিশনার মারিয়া গাব্রিয়েল এতে মূল প্রবন্ধ পড়েন৷ তার প্রবন্ধের বিষয় ছিল, ‘ডিজিটালাইজেশন ইন ইউরোপ: হাউ ডাজ ইউরোপ মিট দ্য চ্যালেঞ্জেস৷'
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডয়েচে ভেলের কেনিয়ার সোহায়েলি ভাষা বিভাগের কর্মী এডিট কিমানি৷ শুরুতেই প্রত্যেককে নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে বলেন তিনি৷
এরপর এবারের জিএমএফে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মঞ্চে আসেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পিটার লিমবুর্গ৷ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেল৷
সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকেও গণমাধ্যমের শীর্ষ কর্মকতার্, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, ব্লগারসহ মিডিয়ার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা যোগ দিচ্ছেন৷
বাংলাদেশ থেকে এসেছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (নির্বাহী) ফরিদুর রেজা সাগর, ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, ইন্ডিডেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মহিউদ্দীন, আরটিভির প্রধান নির্বাহী আশিক রহমান, রেডিও ভূমির প্রধান কর্মকর্তা শামস সুমন এবং ডয়চে ভেল বাংলা বিভাগের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক ও বার্তাকক্ষ প্রধান জাহিদুল কবির৷
প্রথমদিন সকালের অধিবেশন শেষ হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে৷
সেরা ১১ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পুলিৎজার পুরস্কারকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে ধারণা করা হয়৷ গত ১১ বছরে কারা পেয়েছেন এ পুরস্কার জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Heidi Levine
২০০৬ সাল
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’-র সাংবাদিক সুজান স্মিড, জেমস ভি গ্রিমাল্ডি এবং আর. জেফরি স্মিথ সে বছর পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ সংস্কারের নামে মার্কিন কংগ্রেসে ওয়াশিংটন লবিস্ট জ্যাক আব্রামোফের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০০৭ সাল
‘দ্য বার্মিংহ্যাম নিউজ’-এর ব্রেট ব্ল্যাকলেজ পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেন তিনি৷ যার ফলে ঐ চ্যান্সেলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০০৮ সাল
এ বছর দু’টি পত্রিকা এ পুরস্কার পায়৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ওয়াল্ট বোগদানিচ এবং জেক হুকার পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ চীন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷ এছাড়া ‘শিকাগো ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিনিধি জিতেছিলেন এই পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৯ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর ডেভিড বার্সতো পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পেন্টাগনের সমর্থনে ইরাক যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে কত কোম্পানি সুবিধাভোগ করছে তাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
২০১০ সাল
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলি নিউজ’-এর বারবারা ল্যাকার ও ওয়েনডি রুডারম্যান এবং ‘নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্র-পাবলিকার শেরি ফিঙ্ক যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেছিলেন৷ একটি অসৎ পুলিশ দলের মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি উদঘাটন করেন ল্যাকার ও রুডারম্যান৷ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছিল৷ ফিঙ্ক ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
২০১১ সাল
‘সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর পেইজি সেন্ট জন সে বছর পুলিৎজার পেয়েছিলেন৷ ফ্লোরিডার বাড়ি মালিকদের সম্পদের ইনস্যুরেন্সে দুর্বলতা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁকে এ পুরস্কার এনে দিয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১২ সাল
‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ম্যাট অ্যাপুৎসো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এইলিন সুলিভান এবং ক্রিস হাওলি সে বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ‘ক্ল্যানডেস্টাইন গুপ্তচর কর্মসূচি’র আওতায় শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায় এপি-র ঐ প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করা হয়৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৩ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর ডেভিড বার্সতো এবং আলেহান্দ্রা ইয়ানিক ফন বেরত্রাব এই বছর পুরস্কারটি পান৷ মেক্সিকোতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কীভাবে ওয়াল-মার্ট ঘুষ দেয়, সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০১৪ সাল
ওয়াশিংটর ডিসির ‘দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ইনটিগ্রিটি’-র ক্রিস হামবি জেতেন এই পুরস্কার৷ কয়লা খনির শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ নিয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও চিকিৎসকের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেছিলেন তার প্রতিবেদনে৷ যার ফলে ঐ আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৫ সাল
এ বছর দুইজন জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এরিক লিপটন কংগ্রেস নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের লবিস্টরা তাদের কতটা প্রভাবিত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক প্রতিনিধির স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের জন্য৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
২০১৬ সাল
চলতি বছরে ‘ট্যাম্পা বে টাইমস’-এর লিওনোরা লাপিটার ও অ্যান্থনি কর্মিয়ার এবং ‘দ্য সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর মাইকেল ব্রাগা জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ফ্লোরিডা মানসিক হাসপাতালের অবহেলার অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তাদের প্রতিবেদনে৷