ছোট বন্দর, এদিকে চাপ বাড়ছে৷ সম্প্রসারণেরও উপায় নেই৷ তাই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে জার্মানির হামবুর্গ শহরের বন্দর কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু এর ঝুঁকিও কম নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
বিজ্ঞাপন
জাহাজ দেরি করছে৷ কিন্তু সবাই তা জানে৷ কন্টেনার তার নিজের পথ চেনে৷ পথঘাট খালি৷ সেতুর উপরেও কোনো বাধা নেই৷ একেই বলে ‘ইনটেলিজেন্ট' ও ‘নেটওয়ার্কড' বন্দর৷ সব কিছুর মধ্যে সমন্বয় রয়েছে৷ অন্তত কাগজে কলমে এমনটাই হওয়া উচিত৷ ট্রাকচালক ভিক্টর গেবেল বলেন, ‘‘আসলে শুক্রবার ভিড় হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা৷ দূর থেকে অনেক ট্রাক আসে, ডেনমার্ক থেকেও আসে৷ সবাই একইসঙ্গে এসে পড়ে৷''
কন্টেনার টার্মিনালে যানজট – ভিক্টর এ নিয়ে আর মাথা ঘামান না৷ তাঁর কাছে এটা গা-সওয়া হয়ে গেছে৷ গত ১১ বছর ধরে তিনি হামবুর্গ বন্দর ও গ্রাহকদের মধ্যে কন্টেনার পরিবহণ করে চলেছেন৷ কখন কোথায় যেতে হবে, আগে রেডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি সেটা জানতে পারতেন৷ আজ তিনি একটি ট্যাবলেট ব্যবহার করেন৷
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷
ছবি: KUS-Projekt
10 ছবি1 | 10
সদর দপ্তর থেকে তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়৷ সেখানে ক্রিস্টিয়ান ব়্যুল কোম্পানির সব চালকের গতিবিধির উপর নজর রাখেন৷ নতুন এই ব্যবস্থার নাম ‘স্মার্ট পোর্ট লজিস্টিক্স'৷ স্টাপেলফেল্ট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ক্রিস্টিয়ান ব়্যুল বলেন, ‘‘এই সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা আরও দক্ষ হয়ে উঠেছি৷ ট্রাকের অবস্থান দেখতে পাচ্ছি৷ ট্রাক কোন টার্মিনালের দিকে এগোচ্ছে জেনে চালকের কাছে আগেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়ে দিতে পারছি৷ এ জন্য ট্রাক দাঁড় করিয়ে টেলিফোনে কথা বলার প্রয়োজন নেই৷''
গত ৩ বছর ধরে পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প চলছে৷ ভিক্টর গেবেল এখন বন্দর ও গ্রাহকদের মধ্যে দিনে ৬.৫ বারের বদলে ৮ বার যাতায়াত করতে পারছেন৷ এটা শুধু উন্নত যোগাযোগের উপর নির্ভর করছে না৷ রাস্তায় মেরামতির কাজ হলে বা কোনো সেতু বন্ধ থাকলে সফটওয়্যার সেটাও দেখিয়ে দেয়৷ সফটওয়্যার কোম্পানির প্রকল্পের প্রধান জানেন, সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করলে তবেই এমন নেটওয়ার্ক চলতে পারে৷ স্মার্টপোর্ট প্রকল্পের প্রধান বারবারা ফ্ল্যুগে বলেন, ‘‘বিল বা গ্রাহক সংক্রান্ত তথ্য কিংবা অন্য কোনো গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য আমাদের নাগালের বাইরে থাকে৷ তবে এটা ঠিক, যে সব নিয়মকানুন, বিধিনিয়ম মেনে, একটা সীমা স্থির করে সবকিছু উন্মুক্ত করার মৌলিক প্রস্তুতি কিন্তু থাকা চাই৷''
ভিক্টর গেবেল একটু দেরি করে ফেলেছেন৷ যদিও তাঁর বস সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও ভিক্টর সেটিকে নজরদারি হিসেবে দেখেন না৷ গোটা বন্দরই তাঁর তথ্য দেখতে পাচ্ছে, তবে কোথাও তাঁর নাম দেখা যাচ্ছে না৷ বন্দরের কাজকর্মে অবশ্য এখনো তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না৷ গেবেল বলেন, ‘‘আমার চোখে বন্দরে কোনো অবকাঠামো নেই৷ খুবই ছোট বন্দর, রাস্তাও কম৷ কিন্তু ওরা কিছুই করেনি৷''
ময়ূরপঙ্খিরা আজও পাল তোলে
উত্তর জার্মানির উপকূলে অবস্থিত রস্টক শহরে প্রতিবছর পালতোলা জাহাজদের মেলা বসে – জার্মানে যে রেগাটার নাম হানজে সেইল রস্টক৷
‘গর্শ ফক’ জাহাজটি হলো জার্মান নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ জাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
নেদারল্যান্ডস-এর তিন মাস্তুলের ক্লিপার জাহাজ ‘স্টাড আমস্টারডাম’ বন্দর ছেড়ে বেরনোর মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
দর্শকের কোনোদিনই অভাব নেই...
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
অনেক জাহাজের মিউজিয়ামে যাওয়ার দিন এসে গেছে...
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
জার্মানির গর্শ ফক-এর মতো রুশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ জাহাজ হলো ‘ক্রুজেনস্ট্যার্ন’৷ জাহাজটি ১৯২৬ সালে জার্মানির ব্রেমারহাফেন-এ তৈরি হয়৷ তখন তার নাম ছিল ‘পাদুয়া’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
‘গ্রাইফ’ নামধারী পালতোলা জাহাজটি এসেছে মেকলেনবুর্গ-ফোরপমার্ন রাজ্য থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
‘ব্রিগ’ হলো একটি দুই মাস্তুলের ‘স্কোয়ার-রিগড’ পালতোলা জাহাজ৷ এককালে এগুলো তাদের দ্রুতগতির জন্য খ্যাত ছিল৷ ‘‘আই অফ দ্য উইন্ড’’ ব্রিটিশ ব্রিগটি চলেছে রস্টকের ভার্নোভ নদী বেয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
পালতোলা জাহাজে বালটিক সাগরে চক্কর দিতে কা-র না ভালো লাগে!
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
9 ছবি1 | 9
নতুন রাস্তা তৈরি করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন৷ তাই বন্দরের প্রধান বার বার ডিজিটালাইজেশনের উপরই বেশি জোর দিচ্ছেন৷ একটা সমস্যা হলো, হামবুর্গ শহরের মাঝখানে বন্দরটি অবস্থিত৷ তাই সম্প্রসারণের তেমন জায়গা নেই৷
তাই তিনি ক্যামেরা ও নতুন সফটওয়্যারে বিনিয়োগ করছেন৷ অন্যদিকে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কিং-এর বিপদও রয়েছে৷ যেমন অ্যান্টওয়ার্প শহরের বন্দরের উপর হ্যাকারদের হামলা ঘটেছে৷ হামবুর্গ বন্দরের প্রধান ইয়েন্স মায়ার বলেন, ‘‘বিপদ হলো, কেউ তথ্যের অপব্যবহার করছে অথবা সিস্টেম অকেজো করে দিচ্ছে৷ আগে ফ্যাক্স যন্ত্র বিকল করে দিতে অসংখ্য ফ্যাক্স পাঠানো হতো৷ আজকের আইটি সিস্টেমের উপরও এমন হামলা ঘটে৷ তবে আমাদের কাঠামোয় এত অংশ থাকায় হামলা চালানো কঠিন৷''
ভিক্টর গেবেল এর মধ্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছেন৷ অর্থাৎ আজ যানজট ছাড়া তিনি ২০ শতাংশ বেশি দক্ষতা দেখিয়েছেন৷