অ্যামেরিকায় পর পর দুটি ঘটনায় পুলিশের গুলিতে দুই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর পর বিক্ষোভ চলাকালীন ৫ পুলিশ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ পুলিশ বাহিনীতে বর্ণবাদী বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা৷
বিজ্ঞাপন
Dallas police officers shot dead
00:47
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরের কেন্দ্রস্থলে জনবহুল এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা৷ চলতি সপ্তাহে দুই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হত্যার বিরুদ্ধে সেখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছিল৷ সে সময়ে দূর থেকে পুলিশ কর্মীদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়৷ ফলে পুলিশ বাহিনীর ৫ জন কর্মী নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে৷ শহরের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, সম্ভবত পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দু'জন আততায়ী উঁচু জায়গা থেকে সুপরিকল্পিতভাবে ১১ জন পুলিশকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল৷ ঘটনার জের ধরে তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে৷
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে মিনেসোটা রাজ্যে ফাইল্যান্ডো ক্যাস্টাইল এবং লুইজিয়ানা রাজ্যে অ্যাল্টন স্টার্লিং নামের দুই কৃষ্ণাঙ্গকে বিনা প্ররোচনায় পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ শ্বেতাঙ্গ হলে তাদের এভাবে মারা হতো না বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন৷ এই দুই ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে৷ নিউ ইয়র্ক শহরে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান ছিল ‘হ্যান্ডস আপ, ডোন্ট শুট'৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গোটা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, এসব মোটেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে বর্ণবৈষম্যের সমস্যারও উল্লেখ করেন তিনি৷ তিনি পুলিশ বাহিনীর কাঠামোয় দ্রুত সংস্কারের ডাক দিয়েছেন এবং দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে এই বিভাজন দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
গত দুই বছর ধরে ফার্গুসন, মিসৌরি, বাল্টিমোর, নিউ ইয়র্কের পর চলতি সপ্তাহে মিনেসোটা ও লুইজিয়ানা রাজ্যে পুলিশের হাতে সন্দেহভাজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হত্যার কয়েকটি ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান সংকট এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সামগ্রিক বৈষম্যের অভিযোগ জোরালো হচ্ছে৷
তবে ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালে পুলিশের গুলিতে মোট ৫০৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২৩ জন কৃষ্ণাঙ্গ৷ ক্ষোভের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে এবার ৪ জন পুলিশ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হলো৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷