অ্যামেরিকায় বন্দুক আইন বদলের কথা জানালেন জো বাইডেন। কংগ্রেসে বিল আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার বন্দুক আইন বদলের আর্জি জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার ছিল ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার তিন বছর পূর্তি। সেই দিনটিকে স্মরণ করেই রোববার বাইডেন বলেন, কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ, বন্দুক আইন সংশোধনের বিল নিয়ে আসা হোক পার্লামেন্টে।
যে সব দেশে সাধারণ মানুষের হাতে বেশি অস্ত্র
স্কুলে ঢুকে গুলি চালিয়ে মানুষ মারার ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়৷ আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতাকেই এর জন্য দায়ী করা হয়৷ ‘ছোট অস্ত্র সমীক্ষা ২০১৮’- তে দেখা গেছে দুনিয়ায় বিভিন্ন দেশের প্রতি ১০০ নাগরিকের কাছে গড়ে কয়টি করে হাতিয়ার থাকে৷
ছবি: Imageo
অ্যামেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জনের কাছে ১২১ টি বন্দুক থাকে৷ সাধারণ মানুষের কাছে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র আছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষে এই দেশ৷ অ্যামেরিকায় বন্দুকধারীর হামলার মতো পৈশাচিক ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে৷ এ কারণে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং এর প্রদর্শনকে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছে অ্যামেরিকার বিভিন্ন সংগঠন৷ অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষের তাতে সায়ও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gombert
ইয়েমেন
অ্যামেরিকায় পরেই ইয়েমেন৷ ১০০ জনের কাছে গড়ে ৫৩ টি বন্দুক থাকে সেখানে৷ এমনিতে সব দেশেই গোপনে অস্ত্র বহনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ অর্থাৎ, কাউকে অস্ত্র বহন করতে হলে তা দৃশ্যমান থাকতে হবে, লুকিয়ে রাখা যাবে না৷ এমনকি এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে যেতে চাইলে সেই অঙ্গরাজ্যের অনুমতি লাগবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রো
১০০ জনের কাছে গড়ে ৩৯ টি বন্দুক পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
ক্যানাডা
১০০ জনের কাছে ৩৫ টি বন্দুক থাকে সেখানে৷ অ্যামেরিকার তুলনায় ক্যানাডার অস্ত্র আইন অনেকটাই কঠোর৷ এক বিবৃতিতে ক্যানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ক্যানাডার আইন ভিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/M. Renwick
ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ডে প্রতি ১০০ জনের কাছে গড়ে ৩২ টি বন্দুক আছে৷ সম্প্রতি একটি কারিগরি স্কুলে এক ছাত্রের বেপরোয়া গুলি চালানোর ঘটনার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রীও অস্ত্র আইন কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
লেবানন
লেবাননে প্রতি ১০০ জনের কাছে ৩২ টি বন্দুক পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/Anchal Vohra
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়াতে প্রতি ১০০ জনের কাছে ৩০ টি বন্দুক পাওয়া যায়৷
ছবি: Imageo
নরওয়ে
সেখানে প্রতি ১০০ জনের কাছে ২৯ টি বন্দুক থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Medichini
সুইজারল্যান্ড
প্রতি ১০০ জনের কাছে ২৮টি বন্দুক থাকে সুইজারল্যান্ডে৷
ছবি: DW/M. von Hein
জার্মানি, ফ্রান্স, ইরাক
সাধারণ মানুষের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার সমীক্ষায় দশম স্থানে একইসঙ্গে রয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইরাকের নাম৷ এ সব দেশে প্রতি ১০০ জনের কাছে ২০ টি বন্দুক থাকে৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/C. Rehder
10 ছবি1 | 10
বাইডেন এদিন দাবি করেছেন, তাঁর সরকার পরবর্তী মাস শুটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করবে না। যত দ্রুত সম্ভব বন্দুক আইন বদলের চেষ্টা করবে। অ্যামেরিকার নিয়ম অনুযায়ী, আইন বদল করতে হলে প্রথমে তা কংগ্রেসে আনতে হবে। সেখানে বিল পাশ হলে তা যাবে সেনেটে। সেনেট সেই বিলকে ছাড়পত্র দিলে তবেই প্রেসিডেন্ট সই করে বিলকে আইন বানাতে পারেন। পার্কল্যান্ডের স্কুলে বন্দুকধারী হামলা চালানোর পর ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত মার্কিন কংগ্রেস বন্দুক আইন সংশোধনের একটি বিল এনেছিল। কিন্তু রিপাবলিকান অধ্যুষিত সেনেট সেই বিল পাশ হতে দেয়নি। ফলে তখন বন্দুক আইন পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। এদিন বাইডেনের বক্তব্যের পরে মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যানসি পালোসি বলেছেন, ফের কংগ্রেসে বন্দুক আইন বদলের বিল আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ৬ তথ্য
ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার পর ফের মার্কিন মুলুকে বন্দুক ব্যবহারের প্রচলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কীভাবে বন্দুক কেনা যায় সে দেশে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
বন্দুকের শিকার
অ্যামেরিকায় সাধারণ নাগরিকের বন্দুক ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে৷ রাজনীতিতেও এর ঢেউ লেগেছে বহু সময়৷ তথ্য বলছে, প্রতিবছর বন্দুকের লড়াইয়ে অ্যামেরিকায় মৃত্যু হয় ৩৩ হাজার মানুষের৷ এর সঙ্গে অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে লড়াই, আত্মহত্যা, হত্যার চেষ্টার ঘটনা ধরলে সংখ্যাটি হবে ৩ গুণেরও বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Sladky
১৮ বছর হলেই বন্দুক
মার্কিন আইন অনুযায়ী বয়স ১৮ বছর হলেই সে দেশের যে কোনো নাগরিক বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ শটগান বা রাইফেলও কিনতে পারেন৷ সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ কার্তুজ৷ তবে হ্যান্ড গান, লিভলভার কিনতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ২১ বছর বয়স পর্যন্ত৷
সকলকে অবশ্য বন্দুক কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না৷ অতীতে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দাগী অপরাধী কিংবা রাষ্ট্র যাদেরকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করে, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না৷ যদিও অভিযোগ, অস্ত্রের খোলা বাজার থাকায় অনেকেই বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Krzaczynski
চাইলেই কি বিক্রি করা যায় বন্দুক
অস্ত্রের দোকান বা বন্দুকের দোকান খোলার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হয়৷ ২১ বছর না হলে এ ধরনের দোকান খোলার অনুমতি মেলে না৷ সকলকে বন্দুকের দোকান তৈরির ছাড়পত্রও দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রেও দেখা হয় আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড৷
ছবি: DW/I. Pohl
আবেদনকারীর অতীত পরীক্ষা
যাঁরা দোকান খুলতে চান, কিংবা যাঁরা বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন, সকলেরই অতীত সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করে কারা সেই তদন্ত করবে৷ সাধারণত এফবিআই এই কাজটি করে থাকে৷ তবে অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনও একটি তদন্ত চালায় আলাদা ভাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Barrera
খোলা রাস্তায় বন্দুক
বন্দুক কেনা গেলেও খোলা রাস্তায় বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে৷ কোনো কোনো রাজ্যে বন্দুক খাপে ভরে ঘোরা যায়৷ অধিকাংশ জায়গায় হ্যান্ড গান সঙ্গে রাখলে তার লাইসেন্সও সঙ্গে রাখতে হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যেই শট গান সঙ্গে নিয়ে যত্রতত্র ঘোরা যায়৷ তার জন্য কোনো বিধিনিষেধ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
6 ছবি1 | 6
বাইডেনের বক্তব্য, যে প্রক্রিয়ায় এখন অ্যামেরিকায় যেভাবে বন্দুক কেনা যায়, সেই প্রক্রিয়ায় বদল দরকার। যিনি বন্দুক কিনছেন, তাঁর বিষয়ে সমস্ত তথ্য থাকতে হবে পুলিশের কাছে। পুলিশ ছাড়পত্র দিলে তবেই বন্দুক কেনা যাবে। বন্দুকের ম্যাগাজিনের মাপ বড় হবে না। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বন্দুক খোলা বাজারে বিক্রি করা যাবে না। ওই ধরনের বন্দুক নিয়ে বন্দুকধারী যদি হামলা চালায়, তাহলে বিক্রেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাইডেন এদিন বলেছেন, নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক এবং কমিউনিটি বা গোষ্ঠী যাতে নিরাপদে থাকে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। সে কারণেই বন্দুক আইন বদল হওয়া দরকার।
তিন বছর আগে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ফ্লোরিডার স্কুলে হামলা চালিয়েছিল ১৯ বছরের নিকোলাস ক্রুজ। ১৪ জন ছাত্রছাত্রী এবং তিনজন শিক্ষাকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল ওই ঘটনায়। নিকোলাসের এখনো বিচার চলছে। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির মানসিক সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি কী ভাবে বন্দুক কিনেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।