ফেসবুকে থাকা বেচাবিক্রি সংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে প্রতিমাসে ঢু মারেন প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মানুষ৷ এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন পুরো একটি ট্যাবই চালু করেছে ফেসবুকে, যেখানে ফেসবুক বন্ধুরা একেঅপরের মধ্যে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
‘‘ফেসবুক মার্কেটপ্লেস'' নামের নতুন এই সেবার আওতায় একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার কাছাকাছি এলাকায় থাকা অন্য একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর পণ্য কিনতে পারবেন৷ এ জন্য অবশ্য বিক্রি করতে আগ্রহী ব্যবহারকারীকে তাঁর পণ্যের ছবি এবং সংক্ষিপ্ত তথ্য সম্ভাব্য মূলসহ প্রকাশ করতে হবে৷ এরপর পছন্দ হলে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ‘অ্যাডহক' ভিত্তিতে সেটা কেনা যাবে৷
এভাবে বেচাকেনার ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে ক্রেতা এবং বিক্রেতা একে অপর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আর্থিক লেনদেন করতে পারছেন, কেননা উভয়েরই ফেসবুকে প্রোফাইল থাকতে হবে৷ আর কাছেকাছি এলাকায় বসবাসরতদের মধ্যে বেচাবিক্রি হলে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচও কম হবে বা হবে না বললেই চলে৷ মোটের উপর ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই একটি বিক্রির উপর রেটিং-এর সুযোগ থাকবে৷ ফলে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে৷
শপিং করাকে সহজ ও আনন্দময় করতে কিছু টিপস
কোনো উপলক্ষ্য মানেই শপিং, যদিও অনেকেই তা করতে ভালোবাসেন৷ তবুও মাঝে মাঝে উপহার কেনা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়৷ এই ছবিঘরে পাবেন কিছু টিপস, যা শপিং করাকে আনন্দময় করে তুলবে৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
লিস্ট তৈরির পর কেনা শুরু
কোনো উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের জন্য উপহার কেনা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ সত্যি কথা বলতে কি, তাড়া থাকলে প্রয়োজনের সময় সঠিক উপহারটি খুঁজে পাওয়া যায় না, অথবা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়৷ তাই অবসর সময়ে কার জন্য কী কেনা হবে, প্রথমেই তার একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলুন৷ তা না হলে, দোকানে হাজারো জিনিস দেখে চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাতে পারে৷ এছাড়া জানা থাকলে যে দোকান থেকে যা কিনবেন, তার নামও লিস্টে লিখে রাখুন৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
কার জন্য কী কিনবেন?
কার জন্য কী কিনবেন – তার লিস্ট যদি তৈরি থাকে, অর্থাৎ বড়দের, ছোটদের, ছেলেদের, মেয়েদের – এ সব যদি ঠিক করা থাকে, তবে সেভাবেই দোকানে যাওয়া যায়৷ তখন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে সেভাবে দৌড়াতে হয় না৷ এতে সময়ও কম লাগে৷ পছন্দের বা সঠিক সাইজের পোশাক বা জিনসটি সে মুহূর্তে দোকানে না থাকলে, অর্ডার দিয়ে দিন৷ পরে সময়মতো নিয়ে আসলেই হলো!
ছবি: Gustavo Caballero/Getty Images for Build-a-Bear
নোট করে নিন
বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে থাকে আকর্ষণীয় উপহারের বিজ্ঞাপন বাড়িতে বসে ভালো করে দেখে ‘নোট’ করে রাখুন৷ আপনার পছন্দের জিনিস নয়, প্রথমে দূরের দোকানে যান এবং সেগুলোতে আগে কিনে ফেলুন৷ অনেক সময় কার জন্য কী কেনা হবে – সে বিষয়ে ঠিক ‘আইডিয়া’ মাথায় আসে না৷ এক্ষেত্রে ঐ বিজ্ঞাপনগুলো বেশ উপকারী৷ তাই শপিং-এ বের হওয়ার সময় বিজ্ঞাপনের কাগজগুলো অবশ্যই সঙ্গে রাখুন৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
অনলাইন
বর্তমানে এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করেন৷ এতে বাইরে বের হওয়া বা রাস্তায় সময় নষ্ট হওয়ার ঝামেলা থাকে না৷ তবে আগেভাগেই পছন্দের জিনিসটি অর্ডার দিয়ে দিন, কারণ পছন্দ না হলে আবার ফেরত পাঠিয়ে নতুন জিনিস বাড়িতে আসতে খানিকটা সময় চলে যায়৷ আর একেবারেই পছন্দ না হলে, অনলাইনে কেনা জিনিসটি যে ফেরত পাঠিয়ে আবারো শপিং করতে যেতে হবে!
উইন্ডো শপিং
অনেকেই উইন্ডো শপিং করতে বেশ পছন্দ করেন৷ দোকানে যখন ভিড় থাকে না, তখন পরিবারের লোকজন বা একাই দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা জিনিসগুলো ধীরে-সুস্থে দেখা যায়৷ সেখানে জিনিস পছন্দ হলে নোটবুকে টুকে নেবেন বা মোবাইলে ছবি তুলে নেবেন৷ জার্মানিতে এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় দোকানে জামা, জুতোর পরে ছবি তোলে৷ নতুন পোশাকে কেমন লাগছে – পরে তা ভালোভাবে ভেবে কিনতে আসে৷
ছবি: Martin Roemers/laif
পরিচিতদের থেকে জেনে নিন
অনেক সময় দেখা যায় অনেকদিন থেকে আপনি একটি সুন্দর শাড়ি বা ড্রেস খুঁজেও পাননি৷ হঠাৎ একদিন আপনারই পরিচিত একজনের গায়ে আপনার পছন্দের পোশাকটি দেখলেন৷ কোনো দ্বিধা না করে তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিন দোকানের নাম-ঠিকানা৷ এতে আপনি পছন্দের জিনসটি পাবেন এবং যাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, সেও কিন্তু অখুশি হবেন না!
ছবি: BilderBox
প্যাকিং
বাড়িতে ফিরে জিনিসগুলো দেখে নিন এবং যেগুলো কেনা হয়েছে সেগুলোর নাম লিস্ট থেকে কেটে দিন৷ একটু অবসর পেলে উপহারগুলো সুন্দর কাগজে মুড়ে নাম লিখে রেখে দিন৷ এই কাজটি করার পর নিজেকে অনেক হালকা মনে হবে এবং উপহার দেওয়ার কাজটাও অনেকটা এগিয়ে যাবে৷ আসলে শপিং-এর প্ল্যান যত আগে হবে, কাজটি ততই সহজ হবে৷
ছবি: Fotolia/julien tromeur
খাওয়া-দাওয়া
যে কোনো উপলক্ষ্যেকে সফল করতে চাই মজাদার খাবার আর এ নিয়ম সারা বিশ্বেই এক রকম৷ এর জন্য যে সব খাবার ঘরে বা ফ্রিজে কিনে রাখা যায়, তা আগে থেকেই বাড়িতে এনে রাখুন৷ অবশ্য তাজা জিনিস, যেমন শাক-সবজি, ফলমূল – এ সব কিন্তু কিনবেন একেবারে শেষে৷ তবে খাবারের লিস্টটাও যদি আগে থেকে তৈরি করে রাখা যায়, তাতে আপনারই চিন্তা দূর হবে৷ আর অতিথি আসার পর আপ্যায়ন করতে অনেক সুবিধা হবে৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
8 ছবি1 | 8
তবে আপাতত শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, এবং নিউজিল্যান্ডে মোবাইলে এই সেবা দিচ্ছে ফেসবুক৷ তবে গোটা বিশ্বে এবং ইন্টারনেট ওয়েবসাইটেও ফিচারটি ভবিষ্যতে পাওয়া যেতে পারে৷ এই সেবার বিস্তৃতি নির্ভর করবে চারটি দেশে চালানো ফেসবুকের পরীক্ষামূলক সংস্করণের ফলাফলের উপর৷ আশানুরূপ সাড়া মিললে ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের পরিধি বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এভাবে ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেনাবেচার সুযোগ দিয়ে ফেসবুকের ঠিক কী লাভ হবে? আপাতত বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা না গেলেও ফেসবুকে যেভাবে এটাকে গুরুত্ব সহকারে অ্যাপের মধ্যে যোগ করেছে তাতে পরিষ্কার যে বড় কোনো পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির৷ সেটা এমন হতে পারে যে, একজন ব্যবহারকারী তার পণ্যের ভালো ক্রেতা পেতে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পারে কিংবা কোনো পণ্য প্রমোটও করতে পারে৷ আর এভাবে ফেসবুকের পক্ষেও লাভ করা সম্ভব৷
উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার মার্কেটপ্লেস করে স্থানীয়দের মধ্যে পণ্য কেনাবেচায় উৎসাহ যোগানোর চেষ্টা করেছে ফেসবুক৷ তবে সেসব চেষ্টা তেমন একটা সফল হয়নি৷ তাই নতুন এই উদ্যোগ কতটা সাফল্য পাবে সেটাও দেখার বিষয়৷
সুযোগ পেলে আপনি কি ফেসবুকে পণ্য কেনাবেচা করবেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷