বন্যার কথা মাথায় রেখে অবকাঠামো করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
২১ জুন ২০২২
‘‘বন্যা আসাটা আমার মনে হয় ঘাবড়ানোর কিছু নাই৷ বাংলাদেশের মানুষকে সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হবে৷ অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে৷’’ বন্যা পরিস্থিতি দেখার পরে সিলেটে নানা দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারে করে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর সিলেট সার্কিট হাউজে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা মোকাবেলায় এরকম প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি৷
দেশের মানুষকে সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হয়েছে এবং হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামোগুলো তৈরি করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিলেট অঞ্চলে মাটি উঁচু করে আর কোনো রাস্তা করা হবে না, ‘এলিভেটেড' রাস্তা হবে৷ এলিভেটেড রাস্তা হলে সেটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মত দুর্যোগে যাতায়াতেরও সুবিধা হয়৷
পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করলে হবে না৷ তারপর নিয়মিত মেনটেইন্যান্সন্স ড্রেজিং করতে হবে৷’’
ছোট বেলায় সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "বিশাল বিশাল ড্রেন ছিল, সব বাড়ির সামনে পানি যাওয়ার ড্রেন ছিল, তারওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা৷ দুর্ভাগ্য, এখন কিন্তু নাই৷ বিল্ডিং বানিয়ে এমন অবস্থা… পানি যাওয়ার জায়গা নাই৷ পানি যাওয়ার জায়গা তো লাগবে৷’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে সময় যারা তৈরি করেছিলেন, প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই করেছেন৷ কিন্তু এখন আমাদের সময়ে যারা করছেন, তারা হয়ত চিন্তা ভাবনা করছেন না৷”
বন্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছে৷ অনেক জায়গায় কেউ যখন পৌঁছাতে পারেনি আমাদের নেতারা সেখানে পৌঁছেছে, আমার কাছে ছবি তুলে পাঠিয়েছে৷
‘‘আমি সাথে সাথে সেই ছবি সেনাপ্রধানকে পাঠিয়েছি, আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি৷ যেখানে সেনাবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে সেনাবাহহিনী বা যেখানে বিমানবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে তাদেরকে পাঠিয়েছে। যারা আমার কাছে ছবি পাঠিয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, তাদেরকে ধন্যবাদ৷ কারণ তা না হলে রিলিফের কাজটা অত সহজে করা যেত না৷’’
পানিবন্দি সিলেট শহর
গত কয়েকদিন ধরে সিলেট শহর এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলো পানির নীচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিনে বৃষ্টি কমলেও সিলেট শহরের একাধিক স্থান এখনো পানির নীচে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সেই অঞ্চলগুলোতে ছিল না কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিদ্যুৎ নেই
সিলেট শহরের কালীঘাট এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গত চার-পাঁচ দিন যাবত বন্যার কারণে তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ কবে নাগাদ আবার শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টদের কেউ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি
শহরের কালীঘাট, উপশহরসহ একাধিক স্থানে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে আবাসিক এলাকা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাঁটু সমান বা কোথাও তার চেয়েও বেশি পানি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গত রোববার পর্যন্ত বন্ধ ছিল, সোমবার থেকে পানি কিছুটা নেমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নদী আর সমতল মিশে একাকার
সিলেটের সুরমা নদীর পাশেই লালদিঘীরপাড় বাজার এলাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নদীর সাথে সমতলের কোনো পার্থক্য নেই। দুই জায়গারই পানির উচ্চতা এক। নদীর কাছাকাছি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লাল কাপড় দিয়ে নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গবাদি পশুও সংকটে
সিলেট নগরীর ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদার মো. তপু গনি জানান, তিনি শখের বশে বসতবাড়িতে ছাগল ও ভেড়া পালেন ১০-১২টি। এবারের বন্যায় দুই ঘন্টার মধ্যে পানি কোমর পর্যন্ত হয়ে যাওয়ায় কিছু টের পাওয়ার আগেই তার চারটা ভেড়া মারা যায়। এতে তার প্রায় দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তার। বাকি ছাগলগুলো বাসার দোতলায় নির্মানাধীন একটি ঘরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রতিবেশীদের আশ্রয় দিলেন বাড়ির মালিক
সিলেট শহরের কালীঘাট সংলগ্ন কামালগড়ের তিনতলা বাড়ির মালিক নজরুল ইসলাম। প্রতিবেীদের ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তিনি তার বাড়িটি প্রতিবেশীদের জন্য ছেড়ে দিয়ে সপরিবারে ঢাকায় মেয়ের বাসায় চলে গেছেন। তার তিনতলা বাড়িতে এখন ছয়টি পরিবার বাস করছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঘরছাড়া এক মাস
স্থানীয় বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ করেন মাছিতপুর এলাকার বাসিন্দা জয়ফুন্নেসা বেগম। তিনি জানান, গত মাসে যখন বন্যা হলো, তখন থেকেই তার ঘরের ছাদ সমান পানি উঠেছে। প্রায় এক মাস যাবত তার ঘরে পানি। আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী এক চারতলা বাসায়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মৃতদেহ বহনে সমস্যা
সিলেট শহরের কামালগড়ের বাসিন্দা ৮০ বছরের হায়াত আলী বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন সোমবার। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে । শহরে বুক সমান পানি থাকায় মৃতের বাসা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স যেতে না পারেনি৷ তাই প্রধান সড়ক পর্যন্ত কাঁধে করে লাশ নিয়ে আসতে হয়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে চলছে
সিলেট শহরের তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) অফিসে হাঁটু সমান পানি। দুদিন আগে সেখানে কোমর সমান পানি থাকলেও গতকাল থেকে পানি নামছে। এদিকে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় কখনো জেনারেটর আবার কখনো প্রায় অন্ধকারেই সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খাবার পানির সংকট
সিলেটের তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মন্নুজান বেগম নামের একজন কলস নিয়ে পানি আনতে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকারি পানির পাম্পে। তিনি জানান, যে বস্তিতে থাকেন, সেখানকার টিউবওয়েল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তাই প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এসে তাকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পানিতে বিকল যানবাহন
সিলেটের তালতলা, কালীঘাটসহ পানিতে ডুবে থাকা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যানবাহনে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। অনেকে পানির গভীরতা অনুমান করতে না পেরে বেশি পানিতে গিয়ে বিকল বাহন নিয়ে বিপদে পড়ছেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শহর পানিতে থৈ থৈ
উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। দুইদিন পানির উচ্চতা কোমর সমান ছিল বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এইসব রাস্তায় এত পানি গত ২২ বছরে কখনো দেখেননি বলে জানান আড়ত ব্যবসায়ী আলী আহাম্মদ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পোষা প্রাণী নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে
আব্দুল জব্বার পেশায় নিরাপত্তাকর্মী, থাকেন উপশহর এলাকায়। এবারের বন্যায় তার বসতবাড়িতে কোমর সমান পানি হওয়ায় তিনি একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দুইতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। নীচে যেহেতু সব জায়গায় পানি, তাই সাথে নিয়ে এসেছেন তার পোষা কুকুরটিকেও।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভেলা বানিয়ে চলাচল
সিলেটের তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খাল এবং রাস্তার পানির উচ্চতা এক। স্থানীয় শিশু -কিশোরেরা কলাগাছের ভেলা এবং ককশিট দিয়ে তৈরি নৌকা দিয়ে খেলার ছলে রাস্তা পার হচ্ছে। তবে এতে দুই-তিনজনের বেশি চড়া যাচ্ছে না বলে জানায় আশরাফ ও মেহেদি নামের এই দুই শিশু।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সড়কে মাছের আশায় জাল ফেলা
শহরের তালতলা এলাকায় খালের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে প্রায় পাঁচ-ছয় ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রাস্তায়ও পানি হাঁটু সমান। সেখানে জাল ফেলে মাছ ধরতে এসেছেন আবু জাফর নামের এক জেলে। তিনি জানান, বড় মাছ না পাওয়া গেলেও যদি সামান্য কিছু ছোট মাছ পাওয়া যায় সে আশায় গতকাল এবং আজ জাল ফেলেছন তিনি। তবে এখনো কোনো মাছ পাননি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পানি কমছে
গত দুই দিন ধরে সিলেট শহরে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে৷ হুট করে যেভাবে পানি বেড়ে গিয়েছিল, সেভাবে কমছে না। কারণ জানতে চাইলে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পানি নামার মতো জলাশয় নেই, যা টুকটাক ছিল, মানুষ ভরাট করে ফেলেছে। এই বন্যার পানি নামতে কমপক্ষে আরো পাঁচ-ছয় দিন লাগবে বলেও ধারণা করছেন তারা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
15 ছবি1 | 15
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক, যে কোনো দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়।৷আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়৷ এবারের বন্যায় যুবলীগের এককর্মী সবাইকে সতর্ক করে একটা ঘরে যাওয়ার পর সেখানে পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে৷’’
বন্যার মত প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে পুরোনো দিনের সরঞ্জামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্যার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সেজন্য সব সময় একটা বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রাখতে হয়৷ আমরা হারিকেনেরে কথা, নৌকার কথা ভুলে গেছি, তোলা চুলার কথা ভুলে গেছি৷ বোধ হয় এগুলো এখন আবার নতুন করে ভাবতে হবে৷’’
সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পানি যাবে দেশের মধ্যাঞ্চলে, তারপর বন্যা পৌঁছাবে দক্ষিণাঞ্চলে, বাংলাদেশে এরকমই হয়৷
এবারের বন্যা নিয়ে আগে থেকেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি একমাস দেড়মাস আগে থেকেই সবাইকে বলতাম, এবার বড় বন্যা আসবে, সবাই প্রস্তুত থাকেন৷
‘‘প্রকৃতির অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়৷ সে কারণে আমি বলেছি বড় বন্যা আসবে৷ বাংলাদেশে ১০/১২ বছরের মধ্যে একেকটা বড় বন্যা আসে৷ আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার৷’’
চলতি মৌসুমে সিলেটে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত বন্যায় প্লাবিত হল৷ এরপরও যে আরও বন্যা হতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘খাদ্যমন্ত্রীকে অনেক আগে থেকেই বলছিলাম এবার বন্যা আসবে, প্রস্তুত থাকেন৷ চারদিকে দেয়াল দিয়ে খাদ্য গুদাম ও সারের গুদাম রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম৷
‘‘এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সব সময় করতে হবে৷ আগামীতে পূর্ণিমার সময় কী অবস্থা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় করে যাচ্ছি৷ যখন পানি নেমে যাবে, সেই সাথে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে৷ সাথে সাথে ময়লাগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে৷ আমাদের নেতাকর্মীদেরও এই কাজে যুক্ত হতে হবে৷ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন তৈরি করে রাখতে হবে৷’’
উদ্ধারকাজ ও ত্রাণকাজে যুক্তদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিজেরা আপনারা কাজ করছেন, আপনাদেরকেও সাবধানে থাকতে হবে৷ এখন হয়ত কাজের ভেতরে আছেন, পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না৷ বার বার বৃষ্টির পানিতে ভিজেছেন৷ পরে সতর্ক থাকতে হবে।’’
বন্যা কেটে গেলে প্রয়োজনে ধানের বীজ ও মাছের পোনা দেওয়ার প্রস্তুতি সরকারের আছে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী৷ পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশুদ্ধ পানির জন্য বৃষ্টির পানি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
পানিবন্দি লাখো মানুষ, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপর্যস্ত জনজীবন
ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেট, সুনামগঞ্চের কয়েক লাখ মানুষ৷ পানি উঠেছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে৷
একদিকে বৃষ্টি আর অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল৷ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত সিলেট৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার কোম্পানিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে৷ জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি৷ পানি বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়৷
ছবি: bdnews24.com
বিপদসীমার উপরে
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ সারি নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে৷ পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও৷ কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে৷
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিলেট জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে৷
জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে দুর্গত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে ছুটছেন গ্রামের মানুষ৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রনিখাইল এলাকার ইসমাইল আলী বলেন, “বারবার বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছি৷ সব হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি৷ পরিবার নিয়ে কোথায় যাব৷”
চার দিনের টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে কোম্পানিগঞ্জ৷ নিজেদের বাঁচাতেই যখন হিমশিম অবস্থা, তখন গবাদি পশু নিয়ে আরো বিপাকে পড়েছেন মানুষ৷ একটি পরিবারকে গরু নিয়ে উঁচু স্থানে যেতে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বন্যাক্রান্ত উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ হয় পানি সাঁতরে, নয়তো নৌকায় চেপে আশ্রয়স্থলে ছুটছেন মানুষ৷ অনেকে কলা গাছের ভেলায় চেপেও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷
ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে৷ অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে৷ শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম পলাশ জানান, বুধবার দুপুরেই উপশহরের বেশির ভাগ সড়ক তলিয়ে যায়৷ রাতের দিকে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে৷ বিদ্যুৎ নেই, সঙ্গে পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের নয়টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ সিলেট জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বন্যার কারণে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে চলতি বছরের মাধ্যমিক, দাখিল ও এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ২৫ জুন পর্যন্ত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ৷ পিছিয়ে গেছে পরীক্ষাও৷
ছবি: bdnews24.com
বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জও
বৃহস্পতিবার বিকালে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহর৷ দুর্ঘটনা এড়াতে তখন থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শহরের বাসিন্দাদের বৃহস্পতিবার রাত কেটেছে অন্ধকারে৷ সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা, শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলা এখন পানিতে ভাসছে৷ বন্ধ সারাদেশের সঙ্গে যানবাহন চলাচল৷ কাজ করছে না মোবাইল নেটওয়ার্কও৷
বিডিনিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই, বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ, সুরমা উপচানো বন্যা চরম দুর্বিপাকে ফেলেছে সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের৷ সেলিম মিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার ৫০ বছরের জীবনে সুনামগঞ্জ শহরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিনি৷ শহরের সব এলাকা প্লাবিত৷ মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না৷ এখন ত্রাণের চেয়ে আশ্রয় জরুরি৷’’
ছবি: bdnews24.com
উদ্ধারে সেনাবাহিনী
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রানকাজে সেনা সদস্য নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজকে জানিয়েছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন৷ সুনামগঞ্জেও দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকেও কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷’’