চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফা বন্যায় এ পর্যন্ত ২২ জেলার ৩৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়৷ জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ৯২ জনই মারা গেছেন পানিতে ডুবে৷
ছবি: bdnews24.com
বিজ্ঞাপন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের ২২টি জেলার ৫ লাখ ৩১ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও বগুড়া৷
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, পানি বাড়তে থাকলে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ৩০টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ আগামী ৭২ ঘণ্টায় পদ্মা, যমুনা, সুরমা এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র৷
বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি সরাসরি দেখতে আগামী রোববার দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সরকার প্রধানের এই সফরের কথা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম৷
দুর্গত জেলাগুলোতে কয়েক লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা৷ উত্তরাঞ্চলে প্রবল বন্যায় শস্য ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণেই বাংলাদেশ সরকার ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বুধবার জানিয়েছেন, প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে খাদ্য আমদানি করে মজুদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেননা এপ্রিল থেকে অসময়ের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ অবশ্য তিনি বলেছেন, এই আমদানির মানে এই নয় যে দেশে খাদ্য সংকট রয়েছে৷ ভিয়েতনামের সঙ্গে ২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে৷ এ বছর বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টন৷ কিন্তু এপ্রিলে বন্যার কারণে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ সেই ধাক্কা না কাটতেই জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও বন্যায় উত্তরাঞ্চলের ১৮টি জেলা প্লাবিত হয়ে ডুবে গেছে ফসলি জমি৷
বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে৷ গত ১০ দিনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের কিছু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
নিহত ২১ না ৪২?
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিয়েছে৷ মধ্য জুলাই থেকে বন্যায় দেশের ১৬ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যাতে এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪২ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
নদীগর্ভে বিলীন আট হাজার বাড়ি
সরকারি হিসাবে, এ পর্যন্ত বন্যায় ১৬ জেলার ৭২ উপজেলার ৩৭৮ ইউনিয়নের ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আর নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে ৮ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি
ভয়েস অব অ্যামেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে, যাদের পুনর্বাসনে তৎপরতা বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ বানভাসি মানুষের অভিযোগ, সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
কুড়িগ্রাম প্লাবিত
কুড়িগ্রাম জেলায় শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ে নয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে৷ সেখানকার একজন বাসিন্দা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চুরানব্বই সালের পর এমন বন্যা আর দেখেনননি তিনি৷ স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কুড়িগ্রামের ছয় লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
স্কুল বন্ধ
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় দুইশ স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যেটা ১৯৮৮ সালের বন্যায় ছিল ১২৫ সে.মি.৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটায়, সেখানকার বন্যার পানি নামতে শুরু করলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন৷