যমুনার জল সামান্য কমলেও এখনো বিপদসীমার উপরে। দুই দিন ধরে পানীয় জলের তীব্র অভাব।
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহান্তে যমুনার জল খানিকটা নামলেও এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। সোমবার সকালে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আপাতত জলস্তর ২০৫ দশমিক পাঁচ আট মিটারে আছে। বিকেলের পর তার আরো খানিকটা বাড়তে পারে। গত শুক্রবার জলস্তর ২০৮ মিটারের উপর উঠে গেছিল। সপ্তাহান্তে তা কিছুটা কমলেও ফের তা সোমবার থেকে বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে শুক্রবার থেকেই দিল্লিতে তীব্র জলের কষ্ট শুরু হয়েছে। ওয়াজিরাবাদের জল পরিশোধনের প্লান্ট বন্যার জন্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছিল। সোমবার সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, প্লান্টটি অনেকটাই ঠিক হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে তা আবার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে। এই প্লান্টে দিনে ১৩৪ মিলিয়ন গ্যালন জল পরিশোধন হয়। প্লান্টটি ঠিক হলে দিল্লির জলের কষ্ট অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, গত তিনদিন কোনো কোনো এলাকায় মিউনিসিপ্যালিটির জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে গিয়ে পানীয় জল দিতে হয়েছে। দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত সাপ্লাইয়ের জল আসেনি। সাধারণত যা সকালে এবং সন্ধ্যায় আসে।
শুক্রবার সকালে যমুনার জল বইছে ২০৮ দশমিক ৪৬ মিটার দিয়ে। বৃহস্পতিবার রাতে তা ২০৮ দশমিক ৬৬ মিটারে পৌঁছে গেছিল। যা যমুনার রেকর্ড জলপ্রবাহ। এত উপরে যমুনার জল কখনো পৌঁছায়নি।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
দিকে দিকে বন্যা
বিপদসীমার অনেকটাই উপরে উঠে যাওয়ায় যমুনা পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। জায়গায় জায়গায় কোমর জল। দিল্লিতে যে দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কেন বন্যা
পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় সব নদীর জলই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে বন্যা। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের একাংশ ভাসছে। এই অবস্থায় যমুনার ফ্লাডগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তাতেই জল বিপদসীমার উপরে পৌঁছে গেছে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
রাস্তায় দুর্যোগ বিপর্যয় দল
রাজধানীর বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে জায়গায় জায়গায় দুর্যোগ বিপর্যয় দল মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষকে তারা ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
জল নামবে
দুর্যোগ বিপর্যয় দলের তরফে জানানো হয়েছে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে জল অনেকটাই নামবে। জায়গায় জায়গায় জল পাম্প করে বার করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
ছবি: Arun Sankar/AFP
পাঞ্জাব-হরিয়ানা পরিস্থিতি
হরিয়ানায় বৃষ্টিপাত এবং বন্যার জন্য এখনো পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। পাঞ্জাবে মৃত্যু হয়েছে ১১জনের।
ছবি: Parveen Kumar/Hindustan Times/IMAGO
প্রধানমন্ত্রীর ফোন
সরকারি সফরে ফ্রান্সে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে তিনি বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। শাহ জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
স্কুল-কলেজ বন্ধ
দিল্লিতে রোববার পর্যন্ত সমস্ত স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যমুনা লাগোয়া শ্মশান বন্ধ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো মালবাহী গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: Kabir Jhangiani/ZUMAPRESS/picture alliance
8 ছবি1 | 8
দিল্লিতে বাঙালিদের এলাকা বলে পরিচিত চিত্তরঞ্জন পার্কে দুইদিন জল বন্ধ থাকার পর রোববার একবেলা কিছুক্ষণের জন্য জল এসেছে। সোমবার সকালে অবশ্য জল এসেছে।
বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে যমুনা লাগোয়া অঞ্চলগুলির স্কুল-কলেজ আরো কিছুদিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে যে অঞ্চলে জল নেই, সেখানে সোমবার স্কুল খুলেছে। কিন্তু বন্যার কারণে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য তীব্র যানজট শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দিল্লি থেকে নয়ডা যাওয়ার রাস্তায় প্রবল যানজট বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচলে এখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেখানেও বন্যা হচ্ছে। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবেও বন্যা পরিস্থিতি। এই অবস্থায় যমুনার জল আবার বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীর বন্যা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা এখনই বলতে পারছে না প্রশাসন।