বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লাখ মানুষকে খাদ্য এবং বাসস্থান দিতে কাজ করছে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা৷ পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য নিরাপদে মজুদ করতে প্লাস্টিকের বিশেষ বাক্স দেয়া হবে৷
ছবি: Imago/Zuma Press
বিজ্ঞাপন
আগামী ২০১৯ সালের জুন নাগাদ বাংলাদেশ সরকার বন্যাপ্রবণ এলাকায় পঞ্চাশ হাজার ‘সিলো' বা প্লাস্টিকের বিশেষ পাত্র দেবে, যেগুলোর মধ্যে খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখা যাবে৷ ঘরের মধ্যে গর্ত করে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে এসব বাক্স রাখা যাবে, যাতে বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে গেলেও ভেতরে থাকা খাবার নষ্ট না হয়৷
সরকার, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন উন্নয়নসংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তৈরি মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক টিমের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে জুলাইয়ের মাঝামাঝির দিকে শুরু হওয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
বন্যায় আড়াই লাখ বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে নদী ভাঙ্গনের কারণে পুরোপুরি ভেসে যাওয়া ১৭ হাজার বাড়ি এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ হাজার বাড়ি রয়েছে৷ বন্যায় প্রাণহানি হয়েছে এখন পর্যন্ত ১১০ জনের, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু৷
ভয়াবহ বন্যার কবলে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে৷ গত ১০ দিনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের কিছু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
নিহত ২১ না ৪২?
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিয়েছে৷ মধ্য জুলাই থেকে বন্যায় দেশের ১৬ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যাতে এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪২ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
নদীগর্ভে বিলীন আট হাজার বাড়ি
সরকারি হিসাবে, এ পর্যন্ত বন্যায় ১৬ জেলার ৭২ উপজেলার ৩৭৮ ইউনিয়নের ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আর নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে ৮ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি
ভয়েস অব অ্যামেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে, যাদের পুনর্বাসনে তৎপরতা বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ বানভাসি মানুষের অভিযোগ, সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
কুড়িগ্রাম প্লাবিত
কুড়িগ্রাম জেলায় শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ে নয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে৷ সেখানকার একজন বাসিন্দা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চুরানব্বই সালের পর এমন বন্যা আর দেখেনননি তিনি৷ স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কুড়িগ্রামের ছয় লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
স্কুল বন্ধ
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় দুইশ স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যেটা ১৯৮৮ সালের বন্যায় ছিল ১২৫ সে.মি.৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটায়, সেখানকার বন্যার পানি নামতে শুরু করলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany
6 ছবি1 | 6
যদিও পানি এখন কমে আসছে, তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, নেপাল এবং ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মাসে বন্যা আবারো বাড়তে পারে৷ গত দুই বা তিন দশকের মধ্যে এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বন্যা৷
বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষদের সহায়তায় অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি তাদের খাদ্যশস্যের মজুদ সুরক্ষায় উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, কেননা, দেখা যায়, বাড়িতে খাদ্যের মজুদ থাকলেও বন্যায় তা নষ্ট হয় এবং বন্যা পরবর্তী সময় বাড়ির বাসিন্দাদের খাবার থাকে না৷ ফলে পানি গেলেও কষ্ট কমে না, বরং বাড়ে৷
বন্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় তাই বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যশস্য মজুদের জন্য প্লাস্টিকের বিশেষ পাত্র দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ আর এতে সাড়ে আট মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক৷ পাত্রগুলো তৈরি করছে মদিনা পলিমার ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷
আগামী ২০১৯ সাল নাগাদ বন্যা উপদ্রুত এলাকার অনেক বাড়িতে এই পাত্র দেয়া হবে৷ পাশাপাশি সরকার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় আটটি বড় পাত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যেগুলোতে সাড়ে পাঁচ লাখ টন শস্য মজুদ রাখা যাবে, যা বন্যা পরবর্তী সময়ে ব্যবহার সম্ভব হবে৷