যে গীর্জায় বিয়ে হওয়ার কথা, সেটা বন্যায় তলিয়ে গেছে৷ কিন্তু এমন পরিস্খিতিতেও বিয়ে পেছাতে রাজী নন বর-কনে৷ কি আর করা! বন্যার পানিতে পা ভিজিয়েই সবাই হাজির হলেন গীর্জায়৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনাস্থল ফিলিপাইন্সের রাজধানী ম্যানিলার পাশেই বুলাকান প্রদেশের সেন্ট রোজারিও চার্চ৷ ২৪ বঝর বয়সি জোবেল দেলোস আঙ্গেলেসের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ হয়েছিল অনেক আগেই৷ কিন্তু এর মধ্যেই এলো প্রবল বৃষ্টি৷ ডুবে গেল রাস্তা, এমনকি গীর্জাও৷
কিন্তু বর-কনের আর তর সইছিল না৷ দুজন মিলেই সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রতিকূল আবহাওয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্ধারিত সময়েই বিয়ে করবেন তাঁরা৷
ফলে বিয়ের দিন স্যুটের সাথে পায়ে স্যান্ডেল পরে গীর্জায় হাজির বর৷ কনেও শখের সাদা গাউন পরেই এলেন৷ পানির মধ্য দিয়ে আসতে গিয়ে ভিজলো তাঁর গাউন৷ কিন্তু পরস্পরকে পাওয়ার আনন্দে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না কারোরই৷
সমস্ত রাস্তা ডুবে গেছে, ফলে গাড়ির বদলে অতিথিরা এলেন নৌকায় চড়ে৷ বিয়ের উপযুক্ত পোশাকে এলেও কারো পায়েই ছিল না জুতা৷
বার্তাসংস্থা এএফপিকে কনে জানিয়েছেন, ভালোবাসার মানুষকেই তিনি বিয়ে করছেন, ফলে এই বন্যার পানিও তাঁর কাছে ‘রেড কার্পেটের' সমতুল্য৷
ফেসবুকে আপলোড করা বিয়ের ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে৷ পিলিপিন স্টার নামের অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা ভিডিও এরই মধ্যে দেখেছেন ১৩ লাখ মানুষ, শেয়ার হয়েছে ১৪ হাজার বার৷
বিভিন্ন ধর্মের ও অঞ্চলের বিয়ের রীতি
অনেকে বলবেন, প্রেম পূর্ণতা পায় বিয়ের মাধ্যমে৷ আবার কেউ বলবেন না, বিয়ে মানে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা৷ বিবাহের গূঢ় অর্থ যাই হোক না কেন, একেক ধর্মে এর রীতিনীতি আলাদা৷ অঞ্চলভেদেও বিরাট ফারাক এর নিয়মকানুনে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
মুসলিম বিয়ে
সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়৷ দেনমোহর ধার্য করা হয় ছেলের আর্থিক সামর্থ্য ও অবস্থান অনুযায়ী৷ বিয়ের সময় একজন উকিল থাকেন৷ তিনি প্রথমে কনেকে জিজ্ঞাসা করেন, সে বিয়েতে রাজি আছে কিনা৷ কনে রাজি থাকলে বরকেও একই প্রশ্ন করা হয়৷ এরপর দোয়া কালাম করে সম্পন্ন করা হয় বিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
হিন্দু বিয়ে
বিয়ে হয় বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে৷ প্রচলিত নিয়মে প্রথমে বাগদান পর্ব এবং সেখানেই পাটিপত্রে বর-কনের স্বাক্ষর৷ তারপর একে একে আশীর্বাদ, গায়ে হলুদ, তারপর বিয়ের আসর৷ সেখানে দু’টি পর্ব – সাজ বিয়ে ও বাসি বিয়ে৷ সাজ বিয়েতে সাতবার প্রদক্ষিণ শেষে কনে আর বরকে বরণ করে নেয়া হয়৷ হয় মালাবদল৷ আর বাসি বিয়েতে দেবদেবীর অর্চনা শেষে কনের কপালে সিঁদুর দেয় বর৷ তারপর উভয় মিলে সাতবার অগ্নি দেবতাকে প্রদক্ষিণ করেন৷
ছবি: DW/U. Fatima
খ্রিষ্টান বিয়ে
বিয়ের তিন সপ্তাহ আগে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান৷ এরপর ‘বান প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়৷ বিয়ের আগ পর্যন্ত অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য দুজনকে ‘রোজারি মালা’ পরতে হয়৷ বিয়ের দিন ভোরে কনের বাড়ি গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয়৷ এসময় বরপক্ষ থেকে দেয়া পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে দেন কনে৷ এর অর্থ, বাড়ি ছেড়ে গেলেও, বাড়ির লক্ষী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না৷ এরপর গির্জায় বর-কনে দু’জনের মধ্যে আংটিবদল করা হয়৷
ছবি: Getty Images/J.Moore
বৌদ্ধ বিয়ে
পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের পর সামাজিকভাবে সবাইকে জানিয়ে তারিখ ঠিক করে বৌদ্ধবিহারে পাত্র-পাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধের পূজা করা হয়৷ ত্রি-স্বরণ পঞ্চশীল পূজার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুকের আশীর্বাদ গ্রহণের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ এরপর একজন গৃহী তাঁদের সামাজিক অনুশাসন প্রদান করে৷
ছবি: dapd
ঢাকাইয়া বিয়ে
‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানে ঘটকের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর ‘মোতাসা-রাই’ বা ‘পাকাকথা’ অনুষ্ঠানে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়৷ বিয়ে অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে দুই বাড়িতে আলাদাভাবে ‘হলদি’ বা ‘তেলাই’ অনুষ্ঠান হয়৷ এরপর অবিবাহিত অবস্থায় নিজের বাড়িতে বর বা কনের শেষ খাওয়া হিসেবে দুই বাড়িতে ‘আইবুড় ভাত’ নামের অনুষ্ঠান হয়৷ এরপর হয় মূল বিয়ের অনুষ্ঠান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N.Islam
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিয়ে
চট্টগ্রামের বিয়ে সাধারণত বেশ আড়ম্বরপূর্ণ হয়৷ বিয়ের প্রাথমিক কার্যকলাপ অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সম্পন্ন হয়৷ তবে বিয়ের আগে আয়োজন করা হয় ‘বউ জোড়নি’ অনুষ্ঠান৷ বর ও কনের মধ্যে আলাপ করিয়ে দেয়াই এর মূল লক্ষ্য৷ চট্টগ্রামের আরেকটি বিচিত্র আয়োজন হচ্ছে ‘ঘরজামাই বিয়া’৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
রাজশাহী অঞ্চলের বিয়ে
এই অঞ্চলের বিয়েতে থাকে পিঠার জয়জয়কার৷ বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হওয়ার পর আঞ্চলিক গীতের তালে তালে বর-কনেকে নিজ নিজ বাড়িতে মিষ্টিমুখ করানো হয়৷ এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘থুবড়া’৷ সাধারণত ক্ষীর ও আন্ধাষা (তেলে ভাজা রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পিঠাবিশেষ) তৈরি করা হয়৷ এই মিষ্টি সাধারণত পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তৈরি করে পাঠানো হয় বর-কনের বাড়িতে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
শেষ কথা
এতক্ষণ রীতির কথা বলা হলো৷ কিন্তু সব মানুষের পক্ষে সব নিয়ম পালন করা সম্ভব হয় না৷ কারণ তাঁদের সেই সামর্থ্য থাকে না৷ আবার এর উলটোটাও ঘটে৷ যাঁদের অনেক সামর্থ্য আছে, তাঁরা রীতির বাইরেও জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করে থাকেন৷