জার্মানিতে বন্যায় ১৮০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ এই প্রাণহানি কোনোভাবে এড়ানো যেতো কিনা, সতর্কতা জারি বা মানুষকে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, তা তদন্ত করার কথা ভাবছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান তদন্তকারীরা সোমবার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় গাফিলতির তদন্ত করার সুযোগ আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে৷ জুলাই মাসে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে বন্যায় অন্তত ১৮০ জনের মৃত্যু হয়৷ এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কর্তৃপক্ষ বন্যার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা৷
জার্মান পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সতর্কতা জারিতে দেরি করা বা ব্যর্থ হওয়ার কারণে অবহেলাজনিত হত্যা বা ক্ষতি হয়েছে কিনা' তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে৷
জার্মানির যে বন্যা বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়
জার্মানিতে হঠাৎ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮০ জন মানুষ, এখনো নিখোঁজ দেড় শতাধিক৷ ১৪ জুলাইয়ের সেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির কিছু ছবি তুলে এনেছেন ডয়চে ভেলের আরাফাতুল ইসলাম৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র
জার্মানির বাডনয়নার-আরভাইলার অঞ্চলে গেলেই ছোট্ট একটি খাল চোখে পড়বে৷ ‘আর’ নামের সেই নদী বাংলাদেশের বিবেচনায় অবশ্য খাল বলাই শ্রেয়৷ সাধারণত ষাট বা সত্তর সেন্টিমিটারের বেশি পানি থাকে না৷ কিন্তু টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে হঠাৎ করে সেই নদীর পানি বেড়ে কয়েক মিটার৷ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে আসে সেই পানিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আশেপাশের এলাকা৷ ছবিতে ‘আর’ নদীর উপরে একটি ভাঙা সেতু দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ভেঙ্গে গেছে ঘরবাড়ি, বিশেষ করে নীচের তলা
বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের অনেক বাড়ি কয়েকশত বছরের পুরনো৷ সাধারণ সময়ে পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় এই অঞ্চলের সেসব বাড়িঘর পানির তোড় সামলাতে পারেনি৷ সেখানকার অনেক পুরনো বাড়ি পানির ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে, কিংবা নীচের তলার সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে৷ ছবিতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ভেতরের চিত্র দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
উপড়ে গেছে ট্রেন লাইন, ভেঙ্গে গেছে রাস্তা
বাড নয়নার-আরভাইলারের মূল ট্রেনলাইনটি পানির চাপে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে৷ কোথাও কোথাও রেল লাইনের চিহ্নও নেই৷ এমনকি রাস্তাও আর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে৷ ছোট্ট নদীটিকে এখন বেশ বড় মনে হয়, যদিও পানি নেমে গেছে আগের মতোই অনেক নীচে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
রাস্তায় পড়ে আছে দামি গাড়ি
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাঘাটে এখনো পড়ে আছে অনেক গাড়ি৷ হঠাৎ বন্যায় সেসব গাড়ি দুমড়েমুচড়ে গেছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
নেই বিদ্যুৎ কিংবা পানির সংযোগ
১৪ জুলাই বন্যার পর এখনো সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যায়নি৷ বরং যেভাবে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুনরায় কবে চালু করা যাবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ তবে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সেখানে সব বাড়ির সামনে সাময়িক পানি কন্টেইনার বসানো হয়েছে৷ গাড়িতে করে পানিভর্তি সেসব কন্টেইনার নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বিকল্প ব্যবস্থা জেনারেটর
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু না থাকলেও অনেক বাড়িতেই জেনারেটর চালু করা হয়েছে৷ এসব জেনারেটর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ঘরবাড়ির ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বড় চ্যালেঞ্চ আবর্জনা পরিষ্কার
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হাজার হাজার টন ময়লা আবর্জনা সৃষ্টি হয়েছে যা না সরালে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন৷ আপাতত তাই বড় বড় ট্রাকে করে ময়লা আবর্জনা সরাতেই ব্যস্ত অনেকে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
সহায়তায় সেনাবাহিনী
আরভাইলার অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সেনাবাহিনীও নিয়োগ করা হয়েছে৷ সেনা সদস্যরা এলাকাটি পরিষ্কারে সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন গাড়িতে তেলও ভরে দিচ্ছে বিনামূল্যে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
সময় লাগবে অনেক
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এরকম বন্যার সঙ্গে পরিচিত হলেও জার্মানিতে গত অর্ধশতকে এরকম বন্যা দেখা যায়নি৷ শীতপ্রধান এই দেশটিতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ জার্মানিতে এখন ঘনঘন দীর্ঘ সময় ধরে অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে যা অতীতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বড় ক্ষতির মুখে ওয়াইন উৎপাদকরা
জার্মানির বাড নয়নার-আরভাইলার এলাকা ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত৷ সেখানকার পাহাড়ে আঙ্গুর চাষ করা হয়৷ বন্যার কারণে ওয়াইন উৎপাদকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷ যেসব ওয়াইনের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছেন অনেকে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মানুষ মানুষের জন্য
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন৷ কেউ কাজ করছেন সংগঠনের ব্যানারে, কেউবা একান্তই ব্যক্তি উদ্যোগে৷ তারা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি খাবার এবং পানীয়ও পৌঁছে দিচ্ছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
গরম খাবারের আয়োজন
বাড নয়নারে গরম খাবারের আয়োজন করেছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী৷ সেখানে কাজ করা প্রীতি জানান, প্রতিদিন ছয়হাজারের মতো মানুষকে গরম খাবার সরবরাহ করছেন তারা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
যার যা প্রয়োজন নিয়ে যাচ্ছেন
রাস্তার পাশে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে৷ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজনমত জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
চালক, আরোহীদের জন্য পানীয়
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে পানীয় সরবরাহ করছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মানুষ মানুষের জন্য
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দ্রুত দাঁড়িয়েছেন অন্যান্য এলাকার মানুষেরা৷ এই কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের এই সহযোগিতায় কৃতজ্ঞ বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ বিভিন্ন বাড়ির সামনে তাই তারা ধন্যবাদ সূচক বিভিন্ন ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
পর্যটকরা ফিরবেন কবে?
বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চল অনেকটাই পর্যটন নির্ভর৷ প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ সেখানে হাইকিং করতে কিংবা ওয়াইন পরখ করতে যান৷ তবে, পাহাড় ঘেরা এই অঞ্চলে পর্যটকরা আবার কবে যেতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়৷ কেননা, বন্যার ক্ষতি মেরামতে আপাতত সেখানে স্বেচ্ছাসেবী, সাংবাদিক ও জরুরি সেবা প্রদানকারী ছাড়া অন্য কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
আরো দেখুন
জার্মানিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চল থেকে শুক্রবার ফেসবুকে একাধিক লাইভ করেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম৷ সেসব লাইভে সেখানকার পরিস্থিতি আরো বিস্তারিত দেখতে চাইলে ‘‘আরো+’’ লিংকে ক্লিক করুন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
17 ছবি1 | 17
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জিনসিশ শহরে একটি সেবাকেন্দ্রে ১২ জনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদন এবং দুর্যোগের বিভিন্ন সংবাদ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে৷
দায় কার?
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়নি, ফেডারেল ও রাজ্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনেক আগেই উঠেছে৷
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন ‘এমন বিপর্যয় কোনো একক স্থান থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা করা একেবেরেই অকল্পনীয়'৷ এটা যে রাজ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সেটিও তিনি উল্লেখ করেন৷
জার্মান আবহাওয়া দপ্তর ডিডব্লিউডিও নিজেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার পক্ষেই সাফাই গেয়ে বলেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাদের দেয়া সতর্কতা জনগণকে জানায়নি৷ কোনো কোনো রাজ্য কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরো ভালো হতে পারতো৷ কিন্তু যা করা সম্ভব তার সবটাই করা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছেন৷