বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমশই৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেটের প্রায় ২০ হাজার মানুষ৷ এদিকে দু'দিন আগে বাসাবো মাদারটেকের একটি সংযোগ সড়ক ভেঙে পাশের বালু নদের পানি ঢুকেছে রাজধানী ঢাকায়৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বভাস কেন্দ্রের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বাংলাদেশে৷ এবং সামনের দিনগুলিতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে৷
ঢাকার মাদারটেকের শেখের জায়গা এলাকায় সাড়ে তিন হাজারের মতো পরিবার আছে৷ সেখানকার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানা জানান, সেখানকার সংযোগ সড়কটি আগে থেকেই খারাপ ছিল৷ অনেক দিন এর সংস্কার করা হয়নি৷ ফলে পানির তোড়ে সহজেই ভেঙে গেছে এটি৷ পানিতে মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে৷
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সিরাজগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি ও আশেপাশের এলাকায় যমুনা নদীর পানি কয়েক দিন ধরে কমছে৷ কিন্তু এখন সেই পানি ভাটিতে চলে আসছে এবং তার ফলে ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে৷
ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর মধ্যে শীতলক্ষ্যার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে৷ কামরাঙ্গীরচরের ২৯ বড়বাড়ি থেকে কোম্পানি ঘাট এলাকা পর্যন্ত এক কিলোমিটারব্যাপী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে৷ তার ওপর বুড়িগঙ্গা নদীতে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে৷ কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি৷ অনেকের বাড়িতে এবং দোকানে পানি প্রবেশ করেছে৷
বালির বস্তা থেকে ব্যাগ তৈরি
গত জুন মাসে বন্যার কারণে ড্রেসডেন শহরটি ছিল হুমকির মুখে৷ বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ড্রেসডেনবাসীরা নদীর কিনারে হাজার হাজার বালির বস্তা জড়ো করেছিল৷ ছাত্র-ছাত্রীরা সেই পুরনো চটের বস্তা থেকেই নতুন ব্যাগ তৈরি করছে৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
বস্তা আর কাপড়ের টুকরোগুলো পড়েই ছিল
জুন মাসের প্রথমদিকে জার্মানির প্রায় সব এলাকাই বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল৷ ঐতিহাসিক পুরনো শহর ড্রেসডেনকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে হাজার হাজার বালির বস্তা জড়ো করা হয়৷ আর এই কাজে যাঁরা স্বেচ্ছায় সাহায্য করেছেন, তাঁদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরাও ছিল৷ বস্তা টানাটানির সময়ই ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় পুরনো বস্তা কেটে নতুন ব্যাগ তৈরির ভাবনাটা এসেছে৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
স্বেচ্ছাকর্মীদের উদ্যোগ
ইয়োহানা মাত্র কয়েকদিন যাবত ‘চটের ব্যাগ’ তৈরির উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছে৷ ড্রেসডেন শহরের ‘নয়স্টাট’ এলাকায় ওদের দোকান৷ সাতজন উদ্যোগীর পছন্দে যার নাম হয়েছে ‘চটের ব্যাগ’৷ বালির বস্তার ভেতের কাপড় ঢুকিয়ে আর বেল্ট লাগিয়ে মোটামুটি আধা ঘণ্টার মধ্যেই ইয়োহানার একটি ব্যাগ সেলাই করে ফেলতে পারে৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
উদ্যোগী মিশা এবং বেন
চটের ব্যাগ তৈরির মূল উদ্যোক্তা মিশা এবং বেন৷ ‘এলবে’ নদী যখন বন্যায় প্লাবিত তখনই বেন-এর মাথায় এই চিন্তাটা এসেছে৷ বেন বলেন, ‘‘বন্যার কাজে সাহায্য করে দিনের শেষে যখন আমরা বিয়ার হাতে নিয়ে বসেছিলাম আর ভাবছিলাম, কি করে আমরা আরো সাহায্য করতে পারি, তখনই আইডিয়াটা এসেছে এবং তার দুই সপ্তাহ পরেই কাজ শুরু করি৷’’
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
সীমিত উপাদান
মিশা গত কয়েকদিন থেকে সেলাই মেশিনে কাজ করতে করতে একেবারে ঘেমে উঠেছেন৷ অথচ ইনি গত এক সপ্তাহ আগেও সেলাই সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না৷ কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাচ্ছে৷ ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য খুব বেশি হলে ৮৭৬টি ব্যাগ তৈরি করার৷ আর এরই মধ্যে ১০০টা ব্যাগ বিক্রিও হয়ে গেছে৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
পড়াশোনায় চেয়ে ব্যাগ তৈরিতেই বেশি মনোযোগ
ব্যাগ বিক্রি করা, বিক্রেতাকে পরামর্শ দেয়া, সেই সাথে দোকানের সবদিকে লক্ষ্য রাখা – একেবারে সহজ কাজ নয়৷ এরপরও বেন কিন্তু তাইই করছেন৷ বিক্রেতাদের ভিড়ে দোকানের দরজা প্রায় সবসময়ই খোলা৷ তাছাড়া ফেসবুকেও নানা প্রশ্ন এসে জমা হচ্ছে৷ গত কয়েকদিন এ সবের কারণে তেমন ঘুমোতেও পারেননি বেন৷ ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করলেও বর্তমানে বেনের সমস্ত চিন্তা-ভাবনায় শুধুই ‘‘চটের ব্যাগ’’৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
প্রতীকী মূল্য
বারবারার মতো অনেক ব্যাগ ক্রেতা আছেন যাঁরা বন্যার সময় নিজেরা সাহায্য করেছেন এবং সেরকম অনেক মানুষকেই চেনেন৷ একটি ব্যাগের আসল মূল্য ৮,৭৬ ইউরো, তবে অনেকেই তার চেয়ে বেশি দাম দিয়েছেন ব্যাগের জন্য৷ এমনও মানুষ আছেন যাঁরা ২৫০ কিলোমিটার পথ গাড়িতে এসেছেন সীমিত সংখ্যক ব্যাগ থেকে একটি কেনার জন্য৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
ছেড়া বস্তা
যে বালির বস্তাগুলো ড্রেসডেনবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে, সেগুলো ময়লা, তৈলাক্ত পানিতে থাকার ফলে ছিড়ে বা নষ্ট হয়ে গেছে৷ তবে যে বস্তাগুলো সরাসরি পানিতে ছিল না, সেগুলোই ভালো করে ধুয়ে, বালি ছাড়িয়ে তারপর ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বস্তা, কাপড় এবং বেল্ট – সবই দান
ব্যাগ তৈরির জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন সবকিছুই দান হিসেবে পাওয়া গেছে৷ ‘‘দোকানে এসে কেউ টুকরো কাপড় দিয়েছেন আবার কেউ বা সেলাইয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন৷ প্রথম কয়েকটি ব্যাগ কিনেছেন একটি পানশালার মালিক, যিনি বন্যার সময়ও আমাদের সাহায্য করেছেন, বললেন মিশা এবং বেন ৷’’
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
সেলাই মেশিন এখন বন্ধ
এই মুহূর্তে বেল্ট না থাকায় সেলাই বন্ধ৷ কোনো একসময় যখন ৮৭৬টি ব্যাগ বিক্রি হবে তখন সংস্কৃতিক ও সামাজিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অর্থ তোলা হবে তারপর ‘‘চটের ব্যাগ’’ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে৷
ছবি: Stefan Nöbel-Heise
9 ছবি1 | 9
অন্যদিকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিভিন্নস্থানে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে৷ ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি এ মুহূর্তে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষায় নির্মিত স্পারে বানিয়াজান এলাকায় আবারও ৫০ মিটার মাউথ বেল্টের ঢালাই অংশে ফাটল ধরেছে৷ যে কোনো মুহূর্তে ঐ ৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির জিও ব্যাগ ফেলে ফাটল অংশটুকুকে রক্ষার চেষ্টা করছে৷ যমুনার পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি সামান্য কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে৷ পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ এই এলাকার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে৷ সাতটি উপজেলার ৮২টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৬০টি ইউনিয়ন কম-বেশি বন্যাকবলিত৷
উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সরকারি হিসেবে উত্তরাঞ্চলে ৪০,০০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বন্যার কারণে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০টি স্কুলও৷