কলম্বিয়ার চিরহরিৎ অরণ্য নষ্ট হচ্ছে খামারচাষিরা গরু চরানোর জমির খোঁজে ক্রমেই অ্যামাজন রেন ফরেস্টের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে বলে৷ জার্মান জিআইজেড সংস্থা দেখানোর চেষ্টা করছে, বন কেটে চারণভূমি করা অপ্রয়োজনীয়৷
বিজ্ঞাপন
রেনফরেস্ট বা চিরহরিৎ অরণ্য৷ সেই অরণ্যের বহুমূল্য কাঠ তোলা হচ্ছে স্টিমারে৷ মোট ৫০ টন ট্রপিকাল উড৷ কাঠের বেআইনি চোরাচালান অনেকের পকেট ভরছে৷
দক্ষিণ কলম্বিয়ার একটি নদীর তীরে এই ছোট্ট ঘাটটি কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না, কারণ এটা চিরিবিকেতে ন্যাশনাল পার্কের বাইরে৷ পার্ক কর্তৃপক্ষ কাঠের চোরাচালান সম্পর্কে জানেন কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন না৷ কিন্তু দুষ্কৃতীরা একদিন পার্কের দিকে ঠিকই হাত বাড়াবে৷ পার্ক রেঞ্জার কার্লোস পায়েস বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে এই কাঠ কাটা ছিল পার্ক থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে৷ আজ সেটা দশ কিলোমিটারের মধ্যে এসে পড়েছে৷ এবং সেটা যে নাটকীয়ভাবে বেড়ে চলেছে, তা তো দেখতেই পারছেন৷ কাঠ কাটা, বেআইনি কোকো চাষ আর ব্যাপক কৃষিকাজ পার্কের পক্ষে একটা বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷''
অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় কাকেতা অঞ্চলে কৃষিকাজ ক্রমেই পরিশিষ্ট বনভূমির দিকে এগিয়ে আসছে৷ তার একটা কারণ, চাষিরা চাষের জমিকে মূল্যবান বলে মনে না করে, তার যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অপচয় করেন৷ এককালে যেখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য ও ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য ছিল, আজ সেখানে শুধু তৃণভূমি৷ বিশেষ করে পশুপালকরা এইভাবে বন কেটে চারণভূমি করে চলেছেন৷
জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড ন'টি নতুন ধরনের ‘ফিঙ্কা' বা খামারকে সাহায্য করছে, ন্যাশনাল পার্ককে বাঁচানোর প্রচেষ্টায়৷ জিআইজেড-এর টাংমার মার্মন বলেন, ‘‘এখানে বন কাটা সম্পর্কে কারো মাথাব্যথা নেই৷ মানুষজন পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামায় না, তাদের কাছে জঙ্গলের কোনো দাম নেই৷ জঙ্গল মানে শুধু গাছ, যেখানে জীবজন্তু চরতে পারে না৷ আমরা যখন ওদের দেখাই যে, সামান্য কিছু বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ফিঙ্কাগুলো থেকে অনেক বেশি রোজগার করা যায়, নিত্যনতুন জঙ্গল কেটে গোটা ফিঙ্কাটাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বসাতে হয় না, তখন সেটা খামারচাষিদের কাছে এতোটাই আকর্ষণীয় হবে, যে তারা তা করতে রাজি থাকবে, এটাই হল আমাদের পরিকল্পনা৷
মরুভূমি বেড়েই চলেছে
ফসল ফলানোর জমি কমে আসছে, বাড়ছে মাটির ক্ষয়৷ মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘ এই অশুভ বিকাশধারায় বাঁধ দেবার চেষ্টা করেছে৷
ছবি: DW/Stefan Dege
বন্ধ্যা পৃথিবী
পাথর, বালি আর লবণসর্বস্ব মরুপ্রান্তর৷ ভূপৃষ্ঠের এক-তৃতীয়াংশই হলো রুক্ষ, নিষ্ফলা জমি, যার অনুপাত বেড়েই চলেছে৷ এ ধরনের রুক্ষ জমির অধিকাংশই সৃষ্টি হয়েছে গত হাজার বছরে৷ যেমন আলজেরিয়ার হগার মরু অঞ্চলের এই পাহাড়গুলি৷ আজ কিন্তু মরুকরণ বাড়ছে মানুষের গতিবিধির ফলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুষ্ক থেকে শুষ্কতর
মরুকরণ বলতে বোঝায় শুকনো, ক্ষয় হয়ে যাওয়া জমি৷ আফ্রিকা, অ্যামেরিকা কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে এই নতুন ধরনের মরুকরণ৷ টেক্সাসের এই গমের ক্ষেতটি ২০১১ সালের গ্রীষ্মের খরাকে সামাল দিতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images
মানুষেরই কাজ
প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি মরুতে পরিণত হয় – আয়ারল্যান্ডের যা আয়তন৷ জলবায়ু পরিবর্তনই শুধু নয়, মানুষও এর জন্য দায়ী৷ এখানে যেমন ব্রাজিলের এই চাষিটি কোদাল চালাচ্ছেন৷ ভবিষ্যতে ভালো ফসল পাবার জন্য কি করা দরকার, সেটা কি তার জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa
গোচারণ থেকে খরা
গৃহপালিত পশু বাড়ার অর্থ আরো বেশি গোচারণ, যার ফলে জমি শুকিয়ে আসছে৷ জীবজন্তুরা ঘাস, ছোট গাছপালা ইত্যাদি খেয়ে ফেলে, যার ফলে বৃষ্টি-বাদলা থেকে মাটিকে বাঁচানোর আর কোনো আস্তরণ থাকে না৷ খরা হলে, তা সহজেই মরুকরণের দিকে নিয়ে যায়৷ মাটি আরো আলগা, আরো দুর্বল হয়ে পড়ে, সহজেই ক্ষয়ে যায়৷
ছবি: DANIEL GARCIA/AFP/Getty Images
ব্যাপক চাষ, অসংখ্য খামার
খরা ছড়িয়ে পড়ার ফলে চাষিরা ইতিমধ্যেই বিপদে পড়েছেন – মেক্সিকোর এই ভু্ট্টার খেত যার প্রমাণ৷ বছরে একাধিক ফসল তোলার ফলে মাটি পুনরায় সঞ্জীবিত হবার সময় পাচ্ছে না৷ ফলে জমি তার পুষ্টি হারাচ্ছে, ফসলের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে ভূমির ক্ষয়৷
ছবি: Ofelia Harms
ফিরে দাও সে অরণ্য
গাছের সংখ্যা কমছে৷ রান্নার কাঠ অথবা জ্বালানি হিসেবে গাছ কাটা হচ্ছে, চাষের জমি তৈরির জন্য, শিল্পাঞ্চল বা আবাসিক এলাকা গড়ার জন্য৷ অথচ গাছেরাই জলে-বাতাসে টপসয়েল বা ওপরের হালকা মাটির ক্ষয় রোধ করে৷ গাছ কেটে ফেললে জমি নিরাবরণ, নিরাভরণ হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জলের নাম জীবন
বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পানির ব্যবহার৷ গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বে পানির ব্যবহার হয়েছে দ্বিগুণ৷ এর কারণ বিশেষ করে নতুন ধরনের চাষ-আবাদ, যেমন সবজির ক্ষেতে অনেক বেশি সেচ দিতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
পরিবেশের কার্যকারণ
মরুকরণ একবার শুরু হলে চেইন রিয়্যাকশনের মতো চলে৷ উদ্ভিদ প্রকৃতির অন্তর্ধানের ফলে পানি উপে গিয়ে মাটি শুকিয়ে যায়; জমিতে লবণের পরিমাণ বাড়ে, মাটি ফুটিফাটা হয়ে যায়, যেমন ভারতের কোনো কোনো প্রদেশে৷ তখন মাটির ক্ষয় রোধ করা শক্ত হয়ে ওঠে৷
ছবি: AP
সুদূরপ্রসারী ফলশ্রুতি
মরুকরণের ফলে শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি হয় না৷ মরুকরণের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বিলুপ্ত হতে পারে, দেখা দিতে পারে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, জলাভাব৷ বুরকিনা ফাসোর মতো দেশের মানুষজন যার শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বন্ধ্যা পৃথিবীকে আবার সুজলা সুফলা..
মরুকরণ রোখা, এমনকি কমানোও সম্ভব, কিন্তু সেজন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন৷ কাজেই পুনর্বনানীকরণ একটি পন্থা হিসেবে৷ ডমিনিকান রিপাবলিকের এই বৃক্ষবিহীন ঢালগুলিতে নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে৷ তবে সাফল্য এখনও সীমিত৷
ছবি: DW / Sascha Quaiser
‘‘আমাদের যুগের বৃহত্তম পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ’’
জাতিসংঘের মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তি কার্যকরি হয় ১৯৯৬ সালে৷ লক্ষ্য ছিল, শুষ্ক, নিষ্ফলা জমি হ্রাস করে মরুকরণ রুখে দেওয়া৷ জাতিসংঘের মরুকরণ রোধ দিবস ১৭ই জুন৷
ছবি: DW/Stefan Dege
11 ছবি1 | 11
ছোট ছোট পরিবর্তনের ফলশ্রুতি বিরাট৷ যেমন, গরুদের মাঠে যাবার পথ৷ পরীক্ষামূলক খামারগুলোতে গরুদের মাঠে যাবার জন্য ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া পথ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ফসল মাড়িয়ে নষ্ট না করে৷ এই পাইলট খামারগুলো দেখাবে যে, চরার জায়গা বদলে আর প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে রোজগার বাড়ানো যায়৷ এ ভাবে তারা গোটা অঞ্চলের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে৷ খামারচাষি আন্তোনিও রিকার্দো বলেন, ‘‘অনেকেই আমাদের কাছে এসেছেন, আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ পন্থা হল, অন্যান্য চাষিদেরও পরিবেশ সংরক্ষণে আগ্রহী করে তোলা; তাদের দেখানো যে, উন্নততর ভাবে জমি ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়; জঙ্গল না কেটেই আরো বেশি গরু রাখা যায়, দুধ পাওয়া যায়৷''
অর্তেগুয়াসা নদী৷ আরেকটি পাইলট ফিঙ্কাতে শুধুমাত্র নৌকায় করে পৌঁছানো যায়৷ ফিঙ্কার মালিক ফেলিপে এস্লাভা, বয়স: ৩২ বছর৷ নতুন প্রজন্মের খামার মালিক; বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়া শেষ করে বেশ কিছুদিন বিদেশে কাজ করেছেন৷ ফেলিপে-র স্বপ্ন হল, পারিবারিক খামারটিকে একটি অরগ্যানিক খামারে পরিণত করা৷ কিছুদিন আগে তিনি খামারের ৩০০ হেক্টার জমি সরকারিভাবে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন৷ এগুলো হল চারণভূমি, এখন থেকে এখানে আবার বনভূমি গজিয়ে উঠবে৷ অরণ্য ফিরলে, অরণ্যের প্রাণীরাও ফিরে আসবে, এই হল আশা৷