জার্মানির প্রাক্তন রাজধানী বনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ২৩৷ বিশ্বের ১৯৭টি দেশের ২৩,০০০ প্রতিনিধি ১২ দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন৷ আলোচিত এই সম্মেলন সম্পর্কে পাঁচটি প্রশ্ন ও তার উত্তর পাবেন এখানে৷
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন: বনে কারা হাজির হচ্ছেন?
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নানা ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদরা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্টরা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা বনে কপ২৩ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন এবং নেবেন৷ অন্যান্যদের মধ্যে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু সম্মেলনে থাকছেন৷ হলিউড তারকা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আল গোরকেও দেখা যাবে সম্মেলনে৷
কপ২৩ এর প্রেসিডিং এর দায়িত্ব ফিজি'র হওয়া সত্ত্বেও বনে কেন সম্মেলন হচ্ছে?
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন সাধারণত প্রেসিডিং কান্ট্রিতে অনুষ্ঠিত হয়৷ এ বছর সেই দেশটি ফিজি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে সম্মেলন আয়োজন করা গেলে তা বাড়তি গুরুত্ব পেতো৷ কিন্তু এতবড় সম্মেলন আয়োজন ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্রটির পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হওয়ায় জার্মানি সহায়তার হাত বাড়ায়, কারিগরি আয়োজকের দায়িত্ব গ্রহণ করে জার্মানি৷
মোটের উপর জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসি'র সদরদপ্তর বনে অবস্থিত৷ আর এই শহরেই কপ১ অনুষ্ঠিত হয়েছিল যখন বর্তমান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন৷ ফলে বনে এই সম্মেলন আয়োজনের ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে৷
বনে কয়লা বিরোধী সমাবেশ
জার্মানির বন শহরে জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কয়লা বিরোধী এক বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ৷ বিক্ষোভকারীরা জার্মানিকে যতদ্রুত সম্ভব কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধের আহ্বান জানান৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সিটি সেন্টার থেকে শুরু
জার্মানির প্রাক্তন রাজধানী বন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে কয়লা বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ এই তিন নারীর মতো অনেকেই মুখে রং মেখে কয়লা বিরোধী প্লাকার্ড ও পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভেন্যুর দিকে যাত্রা
বন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৩-এর ভেন্যুর দিকে অগ্রসর হন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিক্ষোভকারী কতজন?
জার্মানির জাতিসংঘ শহর হিসেবে পরিচিত বনে শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এগারো হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ তবে আয়োজকরা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ২৫,০০০৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ব়্যালিতে ট্রাম্প!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোশ পরে বনের কয়লা বিরোধী সমাবেশে অংশ নেন এক বিক্ষোভকারী৷ সম্প্রতি প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ডে নানা দাবি
কয়লা বিরোধী সমাবেশে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল নানা দাবি সংবলিত ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
একশো’র মতো সংগঠন
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধসহ নানা দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জার্মানির সবুজ দল এবং বাম দলের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল৷ একশো’র মতো পরিবেশবাদী সংগঠনও অংশ নেন কপ২৩-কে ঘিরে আয়োজিত এই বিক্ষোভে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তরুণদের মিলনমেলা
কয়লা বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বড় অংশই ছিল বয়সে নবীন৷ বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ যোগাতে নাচগানের আয়োজনও ছিল সমাবেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জৈব উপায়ে চাষাবাদের দাবি
কয়লা বিরোধী সমাবেশে জৈব উপায়ে চাষাবাদ ও ‘ফ্যাক্টরি ফার্মিং’ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোশ পরা এক ব্যক্তি সমাবেশ স্থলে স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকা দেখাচ্ছেন, যেখানে মশাল থেকে বের হচ্ছিল ধোঁয়া আর স্ট্যাচুর গায়ে লেখা ছিল ‘ফ্রিডম টু পলিউট’৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
9 ছবি1 | 9
প্যারিস সমঝোতা দুই বছর আগে গ্রহণ করা হয়৷ এখনও তাহলে কী করা বাকি আছে?
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সম্পাদিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এক বড় সাফল্য৷ বিশ্বের ১৬৯টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে৷ তবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন এখনো এক ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে৷ আর চুক্তির কিছু বিষয় এখনো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ সম্ভব হয়নি৷ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় এটির গুরুত্বও খানিকটা কমে গেছে৷
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য কী?
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কিংবা সম্ভব হলে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে রাখা৷ বলাবাহুল্য, এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হলেও তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে৷ তবে সেই ক্ষতি লাগামহীন উষ্ণতা বৃদ্ধির তুলনায় কম৷ আর এই লক্ষ্য পূরণে দেশগুলোকে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে৷
বনে তাহলে কী হচ্ছে?
বন সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির আওতায় একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা হবে যাতে দেশগুলো তাদের জন্য নির্ধারিত জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে কিনা তার দিকে নজর রাখা সম্ভব হয়৷ পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মধ্যে তুলনা করাও সম্ভব হবে এই কাঠামোর আওতায়৷ চলতি সম্মেলনে এই কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত করা গেলে তাও হবে এক বড় সাফল্য৷
এআই/ডিজি (ডিপিএ)
জলবায়ু সম্মেলনের জন্য বন শহর প্রস্তুত
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছে জার্মানির বন শহর৷ অনুষ্ঠানের জন্য শহর জুড়ে নতুন নতুন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে৷ ডয়েচে ভেলের নজরে পড়েছে প্রস্তুতির এমনই কিছু চিত্র:
ছবি: DW/S.Diehn
প্রস্তুত হচ্ছে বন
আগামী ৬ নভেম্বর থেকে বন শহরে শুরু হবে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ২৩’৷ চলবে ১৭ মে পর্যন্ত৷ এ আয়োজন উপলক্ষে গত কয়েক মাসে নতুন একটি ট্রেন স্টেশন থেকে শুরু করে বেশ কিছু স্থাপনা তৈরি করে জার্মানির সাবেক রাজধানীকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নতুন সাজে৷ সবচেয়ে বড় অস্থায়ী কমপ্লেক্সটি তৈরি হয়ছে ডয়চে ভেলের পেছনে৷ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল আগস্টের প্রথম দিকে৷
ছবি: DW/S. Diehn
বুলা থেকে কপ২৩
ওয়েলকাম! ভিলকমেন! বুলা! কেন এই তিনটি শব্দ? ইংরেজি, কারণ বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা৷ এটি থাকতেই হবে৷ সম্মেলনটি জার্মানিতে হচ্ছে, কাজেই ‘উইলকমেন’৷ কিন্তু ‘বুলা’ কেন? বন শহরে আয়োজিত হলেও ‘কপ২৩’ এর অফিসিয়াল আয়োজক কিন্তু ফিজি৷ ফিজি দ্বীপের স্থানীয় ভাষায় ‘বুলা’ মানে ‘স্বাগত’ বা ‘বন্ধুত্ব’৷
ছবি: DW/I. B. Ruiz
একই ছাতার নীচে গোটা বিশ্ব
বনের বিখ্যাত রাইন নদীর পাশেই বিশাল এক হলে যোগ দেবেন সারা বিশ্বের মানুষ৷ প্রায় ৪০টি ভিন্ন ধরনের প্যাভিলিয়নে, অংশগ্রহণকারী ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু সুরক্ষায় তাদের দেশের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করবেন৷ অর্থাৎ সারা বিশ্ব একই ছাদের নীচে৷
ছবি: DW/H. Weise
জার্মানির টেকসই প্যাভিলিয়ন
অন্যান্য আরও অনেক কিছুর মধ্যে জার্মান প্যাভিলিয়নটি ৩ মিটার (১০ ফুট) এর এলইডি দিয়ে আলোকিত ও সাজানো হবে৷ এছাড়া জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় (বিএমজেড) এবং জার্মানির পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (বিএমইউবি) এর একটি ভার্চুয়াল প্রদর্শনী ও অ্যাম্ফিথিয়েটার থাকছে৷
ছবি: DW/H. Weise
স্পটলাইটে ভারত
বড় জায়গা জুড়ে আরেকটি দেশ প্যাভিলিয়ন করছে, দেশটি হলো ভারত৷ ৬ নভেম্বরের আগে একে প্রস্তুত করতে ডজন ডজন শ্রমিক দিন রাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে৷ এই সময়ের মধ্যে কাঠামো থেকে আলোকসজ্জা– সব কিছুই তৈরি করে ফেলতে হবে তাদের৷
ছবি: DW/H. Weise
চলুন কাজ পেতে এবার একটি বিরতি নিই
এই সম্মেলনে যোগদান করা মানে শুধু নেটওয়ার্কিং বা জায়গাটির আকর্ষণ খুঁজে বের বেড়ানো নয়৷ অনেক মানুষকেই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে৷ ৬ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাংবাদিকদের ব্যস্ততাও খুব বেড়ে যাবে৷
ছবি: DW/H. Weise
চিন্তা করবেন না, কফি কিন্তু আছে!
ভালো কথা: কোস্টা রিকায় উৎপন্ন প্রচুর কফিও পাওয়া যাবে সম্মেলনের সময়৷ একটু ঝিমুনি বা তেষ্টা পেলেই অসংখ্য পয়েন্ট থেকে কফি পানের সুযোগ থাকছে৷ .
ছবি: DW/H. Weise
মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা
সবচেয়ে বড় টেন্টের দুই তলাতেই ক্যান্টিন থাকছে, যেখানে একইসাথে প্রায় ১৫শ’ মানুষ খেতে পারবেন৷ বেশিরভাগ খাবারই হবে অর্গানিক, এর পাশাপাশি স্থানীয় এবং ঋতুকালীন নানা পদও থাকবে৷ তবে নিরামিষ জাতীয় খাবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷ স্বাদ নিতে চান? প্রতিটি মেন্যুতে খরচ পড়বে ১০-১২ ইউরো ( ১১.৫০- ১৪ ডলার)৷
ছবি: DW/H. Weise
মূল অংশগ্রহণকারী এনজিও
এই সম্মেলনে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের পাশাপাশি বহু বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷ তারা নাগরিক সমাজের হয়ে কথা বলবে এবং জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করবে৷ এনজিও’র জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ থাকবে৷ প্রায় ৫শ’ এনজিও সেখানে তাদের নানা কাজের প্রদর্শনী করতে পারবে৷
ছবি: DW/H. Weise
বন প্রস্তুত!
সম্মেলন শুরুর এক সপ্তাহ আগে এই ছবিটি তোলা৷ ছবিঘরের প্রথম ছবিটির সঙ্গে এর পার্থক্য কি স্পট? অবকাঠামো তৈরি শেষ হয়েছে, অতিথিদের স্বাগত জানাতে বন শহর একদম প্রস্তুত৷ বন তো প্রস্তুত, আপনার কী অবস্থা?