1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন বাঁচাতে বাংলাদেশে ‘শাড়ি বাহিনী’

২৯ এপ্রিল ২০১১

বৃহত্তর চট্টগ্রামের চুনতি অভয়ারণ্য৷ চিরসবুজ গাছপালা ও পশুপাখির অবাধ বিচরণ সেখানে৷ কিন্তু অনেক বনের মতো সেখানেও রয়েছে সমস্যা৷ তাই সেই বনের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন নারীরা৷ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বন রক্ষার অভিযানে৷

এমন ঘন বন বাঁচাতেই অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশের নারীরাছবি: APImages

একেবারে ছোট নয় এই বন৷ আবার খুব যে বড় বলা যাবে তাও নয়৷ সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এলাকার ১৯ হাজার ১৭৭ একর জায়গা নিয়ে এই চুনতি সংরক্ষিত এলাকা৷ ১৯৯৫ সালের পর এ অভয়ারণ্যে প্রকল্পের কাজ একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু ঐভাবে তো আর বসে থাকা যায় না৷ তাই বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে চুনতি অভয়ারণ্যে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হয় ২০০২ সালে৷ এর এক বছর পর, অর্থাৎ ২০০৩ সালে চুনতি অভয়ারণ্যে বন বিভাগের আওতাধীন দুটি রেঞ্জ কার্যালয় স্থাপন করা হয়৷ এর মধ্যে একটির নাম চুনতি রেঞ্জ৷ এ রেঞ্জের অধীনে রয়েছে তিনটি বিট কার্যালয়৷ অপরটি হলো বাঁশখালীর জলদি রেঞ্জ৷ এ রেঞ্জের আওতাধীন চারটি বিট কার্যালয় রয়েছে৷

চুনতি সবুজের আবাসভূমি৷ এ অভয়ারণ্যে রয়েছে ১২ লাখের বেশি গাছ৷ রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণকেন্দ্র৷ বন বিভাগ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তৈরি করে এটি৷ এই কেন্দ্রে রয়েছে বনপুকুর, পায়ে চলার পথ, ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা, প্রকৃতি ব্যাখ্যাকেন্দ্র৷ শত বছরের পুরোনো গর্জন গাছসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ চারদিকে৷ রয়েছে হাতি, বানর, মেছোবাঘ, অজগরসহ নানা প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী৷ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন আইপেকের (ইন্টিগ্রেটেড প্রোটেকটেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট) সহযোগিতায় ২৮ সদস্যের কমিটি চুনতি অভয়ারণ্যের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখাশোনা করছে৷

তবে দুঃখের বিষয় এই যে চুনতি অভয়ারণ্যের বড় একটি অংশ বেদখল হয়ে গেছে৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চল ও এশিয়ার হাতি প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলের বনজ সম্পদ উজাড় হওয়ার পাশাপাশি হাতি, বানর, হনুমান, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, নানা জাতের দুর্লভ পাখি, শজারু, খেঁকশিয়াল, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বলেও রয়েছে অভিযোগ৷ কমিটি সেই অবস্থা থেকে বনকে উদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে৷

বন বিভাগের একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বনাঞ্চলের কাছে কোনো ইঁটভাটা, করাতকল অথবা শিকারের উদ্দেশ্যে ফাঁদ পাতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ অথচ এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠ কেটে পাচার হচ্ছে ইঁটভাটা, করাতকল ও আসবাবের দোকানে৷ ১০টিরও বেশি ইঁটভাটা বনটির চারদিকে৷ স্থানীয় লোকজন বলেন, বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া চুনতি অভয়ারণ্যের বনজ সম্পদ লুট ও দখল কিছুতেই সম্ভব নয়৷ তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে কর্মকর্তারা বলেছেন, কাঠ পাচারকারীরা সশস্ত্র ও সংঘবদ্ধ৷ কিন্তু বিট কার্যালয়ে জনবল ও প্রয়োজনীয় অস্ত্র না থাকায় পাচারকারীদের ব্যাপারে অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না৷

কিন্তু এই অবস্থার কী কোন অবসান হবে না? হতেই হবে৷ এমনটাই বলছেন স্থানীয় নারীরা৷ তারাই এবার এই বন বাঁচাতে জঙ্গলের পথে নেমেছেন৷ তারা গঠন করেছেন শাড়ি বাহিনী৷ এই শাড়ি বাহিনীর সদস্যরা এক একটি টিমে ভাগ হয়ে পালাক্রমে দিনের বেশিরভাগ সময় সেই জঙ্গল পাহারা দিচ্ছেন৷ স্থানীয় বন কর্মীরা তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে৷ জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিটিজেড এবং মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডি যৌথভাবে এই সব কাজে অর্থায়ন করছে৷ মূলত দুটো সংস্থাই চাইছে এই অভয়রাণ্যটিকে প্রাণী বিশেষ করে হাতিদের জন্য বিশেষ আবাসভূমি হিসাবে ঠিক রাখতে৷ স্থানীয় মানুষরা বলছেন, এই বনে এখন অনেক এশিয়ান হাতি দেখা যাচ্ছে৷ কয়েক বছর আগেও এখানে এতো হাতি দেখা যেত না৷ একে সফলতার শুরু বলেই তারা উল্লেখ করছেন৷ আর এ জন্য বিশেষ ভাবে সাধুবাদ দেয়া হচ্ছে সেই শাড়ি বাহিনীকে৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ